মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ১০০ রকম ব্যাকটেরিয়ার বাস, জানা গেল গবেষণায়

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরে আস্ত একটা ব্যাকটেরিয়ার বসতি তৈরি হতে পারে

চটজলদি খাবার গরম করার জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জুড়ি মেলা ভার। এখন অবশ্য খাবার গরমের পাশাপাশি কিছু খাবার তৈরির কাজও করা যায় এই যন্ত্রে। আমরা সাধারণত মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে একটি নিরাপদ যন্ত্র হিসেবে দেখি। মনে করি, এতে উচ্চ তাপমাত্রা ও রেডিয়েশনের কারণে জীবাণুর টিকে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরে বাস করে শতাধিক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া! কঠিন পরিবেশেও এরা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। 

এতদিন ধারণা ছিল, মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরে যে মাইক্রোওয়েভ রশ্মি চারদিকে প্রতিফলিত হয়, তা হয়তো ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়াগুলো ঠিকই সেখানে টিকে থাকে। তাঁদের গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেখা গেছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরে আস্ত একটা ব্যাকটেরিয়ার বসতি তৈরি হতে পারে।

এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী আলবা ইগলেসিয়াস ও তাঁর সহকর্মীরা সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ৩০টি মাইক্রোওভেনের ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন এ জন্য। এর মধ্যে ১০টি ছিল বাসাবাড়ির ওভেন, ১০টি গবেষণাগারে ব্যবহৃত এবং বাকি ১০টি ক্যাফেটেরিয়ার মতো জনবহুল জায়গার।

আরও পড়ুন
এসব ব্যাকটেরিয়া মাইক্রোওয়েভ ওভেনের তাপ ও রেডিয়েশনের মধ্যেও কীভাবে টিকে থাকে? সাধারণত আমরা মনে করি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবার গরম করার সময় ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

প্রতিটি ওভেনের ভেতরের দেয়াল ও ঘূর্ণমান প্লেট থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেগুলো গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিটি নমুনাতেই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এরপর বিজ্ঞানীরা এসব ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন। সেখানে কোন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তা জানতে চেয়েছিলেন গবেষকেরা। 

বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মানুষের ত্বক ও সেসব জায়গায় পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা নিয়মিত স্পর্শ করি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ফার্মিকিউটস এবং ব্যাকটেরয়েডস ব্যাকটেরিয়া। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, রান্নাঘরের মাইক্রোওভেনগুলোতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যেগুলো খাবারে বিষক্রিয়া (ফুড পয়জনিং) ঘটাতে পারে! এর মধ্যে ছিল ক্লেবসিয়েলো ও ব্রেভুন্ডিমোনাস। 

নিয়মিত ওভেন পরিষ্কার রাখলেই ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ব্যাকটেরিয়া মাইক্রোওয়েভ ওভেনের তাপ ও রেডিয়েশনের মধ্যেও কীভাবে টিকে থাকে? সাধারণত আমরা মনে করি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবার গরম করার সময় ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু গবেষকদের মতে, বিষয়টি এত সরল নয়। অনেক ব্যাকটেরিয়া উচ্চ তাপমাত্রায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া এমন স্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে, যেখানে তাপ ও রেডিয়েশন তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে কীভাবে এই ক্ষুদ্র জীবাণুগুলো মাইক্রোওয়েভের প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। 

গবেষক ম্যানুয়েল পোরকার এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘বাসাবাড়ির রান্নাঘরের মাইক্রোওয়েভ ওভেনগুলোতে যেসব ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, তা সাধারণত রান্নাঘরের অন্যান্য জায়গাও পাওয়া যায়। কিছু ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রান্নাঘরের অন্যান্য জিনিসের মতো ওভেনও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।’

আরও পড়ুন
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। গবেষকদের পরামর্শ মানলেই পাওয়া যাবে সমস্যার সমাধান। নিয়মিত ওভেন পরিষ্কার রাখলেই ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।

তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পোরকারের মতে, ওভেন নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে রান্নাঘরের অন্যান্য জিনিসের মতো এটিও নিরাপদ থাকবে। ওভেনে ব্যাকটেরিয়া পাওয়ায় ভয়ের কিছু নেই। শুধু নিয়ম করে যন্ত্রটাকে পরিস্কার রাখতে হবে। 

পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিটি নমুনাতেই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে

অর্থাৎ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। গবেষকদের পরামর্শ মানলেই পাওয়া যাবে সমস্যার সমাধান। নিয়মিত ওভেন পরিষ্কার রাখলেই ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে। খাবার গরম করার সময় মাঝেমধ্যে খাবারের টুকরো ভেতরে পড়ে যায়। অনেক সময় তরকারির ঝোল বা তরল কিছু ছিটকে পড়তে পারে। এগুলো পরিস্কার না করলে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরে তৈরি হতে পারে ব্যাকটেরিয়াদের আড্ডাখানা। সেটা নিশ্চয়ই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না!

সূত্র: সায়েন্স নিউজ এক্সপ্লোর 

আরও পড়ুন