প্রযুক্তি
অপরিহার্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আজ নিখাদ বাস্তব। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর ইতিহাস, ব্যবহার ও আমাদের জীবনে ভূমিকা নিয়ে জানুন সংক্ষেপে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক বই ও সিনেমায় আমরা অনেকবার দেখেছি এটা। যান্ত্রিক রোবটরা মানুষের মতো চিন্তা করছে, মানুষের মতো আগ্রাসী হয়ে আক্রমণ করছে মানুষকেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো পৃথিবীই দখল করে ফেলার চেষ্টা করছে। কল্পকাহিনিতে অনেক কিছু অতিরঞ্জিতভাবে প্রকাশ করা হয়, সত্যি। তবে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এমন অনেক জিনিস উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলো একসময় শুধু কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানীরা এমন সব যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যাদের কল্পবিজ্ঞানের যন্ত্রমানবের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এগুলো এখন বিভিন্ন আকার ও আয়তনে পৃথিবীর মানুষের কাজ করে দিচ্ছে অবিরাম। ছোট আকারের একটা ক্যালকুলেটরের কয়েকটা বোতাম টিপে যেমন আমরা নিমেষেই করে ফেলতে পারি জটিল গাণিতিক হিসাব, তেমনি বিশালাকার বিমান চালনার দায়িত্বও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে ‘অটোপাইলট’ নামে যান্ত্রিক কম্পিউটার সিস্টেম। এই কম্পিউটার সিস্টেম শুধু যে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলছে, তা নয়; প্রয়োজনে অনেক সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত বাছাই করে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করছে। যন্ত্র যখন বুদ্ধিমান প্রাণীর মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, তখন সেই বুদ্ধিমত্তার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা বলা যায় না। সেই বুদ্ধিমত্তা তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দযুগল প্রথম প্রয়োগ করেন মার্কিন কম্পিউটারবিজ্ঞানী জন ম্যাককার্থি। ১৯৫৬ সালে তিনি অ্যালান টুরিং, মারভিন মিনস্কি, অ্যালেন নিউয়েল, হার্বার্ট সাইমন প্রমুখ কম্পিউটারবিজ্ঞানের পথিকৃৎকে একত্র করেছিলেন ডার্টমাউথ সামার রিসার্চ প্রজেক্ট নামের একটি কনফারেন্সে। সেই কনফারেন্সে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি স্বতন্ত্র নতুন বিশেষায়িত গবেষণাক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ থেকে ৬৫ বছর আগে জন ম্যাককার্থি আশা প্রকাশ করেছিলেন, ঘরে ঘরে যেভাবে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়, সে রকমভাবে একদিন ঘরে ঘরে কম্পিউটার সার্ভিসের সংযোগ দেওয়া হবে। সে সময় ইন্টারনেট কিংবা ওয়াইফাইয়ের ধারণাও ছিল না কারও। কিন্তু আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং যান্ত্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আমাদের আধুনিক যানবাহনের প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে অনেকগুলো মাইক্রোকম্পিউটার। স্বয়ংক্রিয় চালকহীন গাড়ি এখন চলছে পৃথিবীর অনেক জায়গায়। পৃথিবীর অনেক আধুনিক এয়ারপোর্টের এক টার্মিনাল থেকে অন্য টার্মিনালে সংযোগকারী ট্রেন চলছে চালকহীন, পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিয়েছে স্বয়ংক্রিয় রোবট, ইমিগ্রেশন সামলাচ্ছে আধুনিক মেশিন। আধুনিক অফিস, ব্যাংক, হাসপাতাল, ব্যবসা–বাণিজ্য, খেলাধুলা—সবখানেই এখন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও নানা রকম অ্যাপের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার চলছে। মহাকাশে ভাসমান স্যাটেলাইটগুলোর সব কটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। স্যাটেলাইট নেভিগেশন জিপিএস, গুগল আর্থ, গুগল ম্যাপ, গুগল সার্চ ইঞ্জিন—এসবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আশ্চর্য প্রয়োগ। আধুনিক স্মার্টফোনের বেশির ভাগ কার্যকলাপই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্ত।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য প্রধানত দুই প্রকার। একটি প্রযুক্তিগত, অন্যটি বৈজ্ঞানিক। প্রযুক্তিগত উদ্দেশ্য হলো কম্পিউটার ব্যবহার করে খুব কম সময়ে নির্ভুলভাবে কাজ করিয়ে নেওয়া। দৈনন্দিন জীবনের বেশির ভাগ কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এখন প্রযুক্তিগত ব্যবহার চলছে। ব্যাংকের একেকটা এটিএম মেশিন পুরো একটি ব্যাংকের শাখার কাজ নির্ভুলভাবে করতে সক্ষম। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা হচ্ছে মূলত গবেষণার ক্ষেত্রে। সেখানে মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিতে যেসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় কিংবা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ, সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অত্যন্ত উপযোগী।
কম্পিউটার কত দ্রুত ও কতটা নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে, তা নির্ভর করে তার যান্ত্রিক গঠন ও তার জন্য যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার ওপর। অর্থাৎ যে প্রোগ্রাম লেখা হয়েছে, তা কতটা দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে। তাতে কম্পিউটার দক্ষতা লাভ করে, কিন্তু বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে না। কিন্তু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল কম্পিউটারকে দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমান হিসেবেও তৈরি করা। তাঁদের সেই লক্ষ্য প্রথম পূরণ হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। এমআইটির প্রফেসর জোসেফ ওয়েইজেনবাম যখন কম্পিউটার প্রোগ্রাম এলিজা (ELIZA) উদ্ভাবন করলেন। এলিজা প্রোগ্রামে কোনো একটি বাক্য টাইপ করা হলে এলিজা নিজে নিজে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। যেমন যদি বলা হয়, ‘আমার ভালো লাগছে না।’ এলিজা জানতে চাইবে, ‘কেন ভালো লাগছে না?’ যন্ত্রের সঙ্গে মানুষের অর্থপূর্ণ কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার এই প্রোগ্রাম থেকে পরে অনেক প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো যান্ত্রিক মনোবিজ্ঞানী হিসেবে অনেক সাফল্য দেখিয়েছে।
প্রথম ইলেকট্রনিক পারসন শেইকি (Shakey) তৈরি করা হয় ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এই রোবটকে বলা চলে প্রথম বুদ্ধিমান কর্মী রোবট। একে কমান্ড দিলে ভারী ভারী জিনিস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারত। যাওয়ার পথে যদি কোনো বাধা পড়ত, তাহলেও শেইকি বিকল্প পথ খুঁজে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যেত। সে সময় কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক যুগে শেইকি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটের ক্ষেত্রে আশাজাগানিয়া উদ্ভাবন।
ইন্টারনেট প্রথম চালু হয় ১৯৬৯ সালে। মার্কিন মিলিটারির ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সির (DARPA) একটি প্রকল্পের আওতায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শহরের তিনটি কম্পিউটারের সঙ্গে ফোন লাইন সংযোগের মাধ্যমে। এ নেটওয়ার্কের নাম ছিল আরপানেট (ARPANET—Advanced Research Project Agency Network)। এরপর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের নেটওয়ার্ক আরও অনেক বিস্তৃত হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে চালু হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www)।
ইতিমধ্যে স্টিভ জবস ও বিল গেটস পারসোনাল কম্পিউটারের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন, বদলে যায় পৃথিবী। গুগল শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে তথ্য খোঁজার ব্যাপারটা এখন এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারছি না, আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর অর্থনীতি এখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বেশির ভাগই ই-কমার্সের নিয়ন্ত্রণে। অনলাইন শপিং এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সবচেয়ে বড় অনলাইন শপ অ্যামাজনের গুদাম নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট দিয়ে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ এখন বেশির ভাগই স্বয়ংক্রিয় রোবট নিয়ন্ত্রিত।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে প্রয়োগটা আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগছে এবং লাগবে, সেটা হলো রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায়। মেডিকেল টেকনোলজি বা চিকিৎসা প্রযুক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ–সংক্রান্ত অ্যালগরিদম এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি পেয়েছে।
পৃথিবীতে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে। ২০২২ সালে প্রায় দুই কোটি মানুষ মারা গেছে হৃদ্রোগে। হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন, হার্টবিট অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্লিনিকে গিয়ে ইসিজি করানো অনেক সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তাই অনেকের জন্য হৃৎপিণ্ডের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্মার্টফোনভিত্তিক ইসিজি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব জীবন বাঁচানো সম্ভব। স্মার্টওয়াচ শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, শর্করার পরিমাণসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণরাসায়নিক নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা, শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ ইত্যাদির রেকর্ড নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার। এই যান্ত্রিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে হার্ট ফেইলিওর কিংবা অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোমের পূর্বাভাস চিকিৎসকদের প্রচলিত পদ্ধতির চেয়েও যে নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে অনেকবার।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের হিসাব মতে, পৃথিবীর প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। নিয়মিত গ্লুকোজ মনিটরিং না করলে ডায়াবেটিস রোগীর প্রাণসংশয় দেখা দিতে পারে। আইবিএম কোম্পানি রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অ্যাপ তৈরি করেছে। কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জিএফআর (glomerular filtration rate) বিশ্লেষণ করে নেফ্রোপ্যাথির ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম।
মৃগীরোগীদের খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা সহজসাধ্য নয়। খিঁচুনির পূর্বাভাসও সহজে দেওয়া যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক সুফল পাওয়া যাচ্ছে। রোগীর হাতে ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক মনিটর পরানো হয়, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে রোগীর খিঁচুনি ওঠার পূর্বাভাস দেওয়া যায়। মনিটরের সঙ্গে সংকেত পাঠানোর ব্যবস্থা থাকে। রোগীর আত্মীয়স্বজন বা রক্ষণাবেক্ষণ যিনি করেন, তাঁর সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
ক্যানসার এ শতাব্দীতেও সবচেয়ে বড় আতঙ্ক রয়ে গেছে। শনাক্ত করতে দেরি হলে এর চিকিৎসায় অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। যত দ্রুত এ রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তত দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। শুধু এক্স-রে কিংবা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি কিংবা ম্যামোগ্রাফিতে ক্যানসারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। হিস্টোপ্যাথলজির মাধ্যমে কোষ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হতে হয়, ক্যানসার হয়েছে কি না। মানুষের চোখ অনেক সময় বিভ্রান্ত হয় আণুবীক্ষণিক কোষগুলোর মধ্য থেকে ক্যানসার কোষ শনাক্ত করতে গিয়ে। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই দক্ষতার সঙ্গে ক্যানসার কোষ শনাক্ত করতে পারে। শুধু ক্যানসার শনাক্ত করার ক্ষেত্রে নয়, মেডিকেল ইমেজিং-রেডিওগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি, সিটি, নিউক্লিয়ার মেডিসিন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোগনির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে।
ক্যানসার চিকিৎসায়, সার্জারিতে, ব্রাকিথেরাপিতে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বসাতে এখন রোবটিক হাত ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এসব রোবটিক হাত কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।
অদূর ভবিষ্যতে মানুষের শরীর রোগমুক্ত রাখার জন্য জিনোম বিশ্লেষণ করে ত্রুটিযুক্ত জিন সংশোধন করা হবে। সে ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব নেবে কৃত্রিম বুদ্ধির কোনো স্মার্ট রোবট।
২০৫০ সালের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্ট (এজিআই) চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা এবং মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যে পার্থক্য এখন আছে, তখন হয়তো সেই পার্থক্য আরও কমে যাবে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
সূত্র: ১. মাইকেল সি হ্যারিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মার্শাল ক্যাভেন্ডিশ বেঞ্চমার্ক, নিউইয়র্ক, ২০১১
২. মার্গারেট এ বোডেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: আ ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাকশন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, যুক্তরাজ্য, ২০১৮
৩. মারিউজ ফ্লাসিনস্কি, ইন্ট্রোডাকশন টু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্প্রিঙ্গার, সুইজারল্যান্ড, ২০১৬
৪. কেভিন ওয়ারউইক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্য বেসিকস, রুটলেজ, কানাডা, ২০১২
৫. প্রণব রাজপুরকার, এমা চ্যান, ঐশী ব্যানার্জি ও এরিক জে টোপল, এআই ইন হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন, নেচার মেডিসিন, ভল. ২৮, জানুয়ারি ২০২২, পৃষ্ঠা ৩১-৩৮