সম্প্রতি নিজেদের তৈরি টারা চিপের অগ্রগতির খবর প্রকাশ করেছে গুগল এক্স। অল্প খরচ আলোর মাধ্যমে উচ্চগতির তারহীন ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে এর মাধ্যমে। গুগল এক্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক ব্লগ পোস্টে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে তারা।
আঙুলের নখের আকারের এই চিপে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিজিটাল তথ্যকে আলোক রশ্মিতে রূপান্তর করা হয়। এরপর চিপের সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত আলোক উৎস থেকে ডেটার তথ্য সমৃদ্ধ আলোক রশ্মি ছুড়ে দেওয়া হয়। এভাবে ডাটা ট্রান্সফার করা হয়। গবেষণাগারে গবেষকেরা এরকম দুটি টারা চিপ ব্যবহার করে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরে ডাটা ট্রান্সফার করেছেন। গতি ছিল সেকেন্ডে ১০ গিগাবিট।
টারা চিপ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মহেশ কৃষ্ণস্বামীর দাবি, এই প্রথমবার সিলিকন ফোটোনিক্স চিপ ব্যবহার করে উচ্চ গতিতে এত দূর ডাটা পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে পৃথিবীর ইন্টারনেটের মূল অবকাঠামো তৈরি হয় ফাইবার অপটিক কেবলের সাহায্যে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এই কেবলের সাহায্যে এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
ফাইবার অপটিকসের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিচালনার বড় সমস্যা হলো, এর রক্ষণাবেক্ষণ বেশ খরচ ও পরিশ্রম সাধ্য কাজ। বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই তারহীন বিকল্প ইন্টারনেটের তৈরির চেষ্টা করে আসছেন। ইতিমধ্যে ইলনমাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংক প্রকল্পের তারহীন ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রতিযোগিতায় গুগলও কাজ করছে বহুদিন থেকে। টারা চিপ এ প্রচেষ্টার নতুনতম সংযোজন। গুগল এক্সের গবেষকেরা মনে করছেন, টারা চিপের মাধ্যমে এমন সব অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো যাবে, যেখানে ফাইবার অপটিকসের ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা কঠিন। টারা চিপের মাধ্যমে ব্যবহৃত ইন্টারনেটে গ্রাহকেরা ব্রডব্যান্ড অর্থাৎ ফাইবার অপটিকস কেবলের মতোই গতি পাবেন।
টারা চিপের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো, এটি প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্ক বা স্টারলিংকের মতো বেতার তরঙ্গ (যেমন ফাইভ জি, ফোর জি) ব্যবহার করে না। আলোক তরঙ্গ আকারে ডাটা ট্রান্সফার করে। ফলে এতে অন্যান্য তরঙ্গের সঙ্গে জ্যামিং হওয়ার ভয় নেই।
নিজেদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা জানাতে মহেশ কৃষ্ণস্বামী বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল মেশ নেটওয়ার্ক (মেশ টপোলজি) তৈরির মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ডাটা সেন্টারের উন্নয়ন, এবং স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করতে চাই।’
গবেষকেরা বলছেন, টারা চিপের মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব, যেখানে ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপনে কয়েক মাস বা বছর লেগে যেতে পারে।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটি ‘তারা লাইটব্রিজ’ নামে একটি ডিভাইস তৈরি করেছিল। ২০ জিবিপিএস গতিতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল ডিভাইসটি। নতুন টারা চিপ এরই উন্নত ও ক্ষুদ্রতম সংস্করণ। ২০২৬ সালে এ চিপ যুক্ত ডিভাইস বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে গুগল।
যদিও নতুন ডিভাইসটি কী ধরনের হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। তবে তারা গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে কাজ করতে।