খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা—এই ছয়টি মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেটকেও একরকম মৌলিক অধিকার-ই বলা চলে। কারণ, ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হয়। আক্ষরিক অর্থেই বিচ্ছিন্ন মানুষের জন্য থেমে যায় দুনিয়া। যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বা সময় কাটায়, এ সময় তাদের কাজ ফুরিয়ে যায়। যারা ব্যবসা করে, থমকে যায় তাদের ব্যবসা। সংবাদ না পাওয়ার ফলে দুর্যোগ নেমে আসে গণজীবনে।
এমনিতে ইন্টারনেট চলে যাওয়া একটি সাময়িক ঘটনা। চলে গেলে সাধারণত কিছু সময় পর আবারও ফিরে আসে। তবে ইন্টারনেট যদি চিরতরে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে যায়, তাহলে কী হবে? কী হবে, যদি আর কখনো ফিরে না আসে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
এক দিন পর
গোটা বিশ্বে ইন্টারনেট চলে গেলে প্রথম দিনেই ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাবদ ৩০ কোটি পাউন্ডের বেশি লোকসান হবে। বাংলাদেশি টাকায় ৩০ কোটি পাউন্ডের মূল্যমান দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৩৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪০ টাকা। তা ছাড়া ব্যাংকিং, টেলিফোন ও মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সচল রাখার জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করা হয়। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে এগুলোসহ বেশির ভাগ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এক সপ্তাহ পর
আধুনিক পাওয়ার গ্রিড বা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সাবস্টেশনগুলো সমন্বয় করতেও ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়। ইন্টারনেট ছাড়া প্রতিটি দেশের জাতীয় গ্রিড সমন্বয়হীন হয়ে পড়বে। স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে এবং বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে দেখা যাবে ব্ল্যাকআউট। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বন্ধ হয়ে যাবে গ্যাসের পাইপলাইন।
এক মাস পর
পেট্রল স্টেশনগুলো জ্বালানি পাম্প করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ট্যাংকে জমা রাখা জ্বালানিস্তর পর্যবেক্ষণ করতে, তেল বেচাকেনার লেনদেন করতে ও নতুন সরবরাহের আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হয়। এই জ্বালানি ছাড়া বাজার ও দোকান পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ফলে খাবারের অভাব দেখা দেবে এবং বড় বড় গোডাউন, যেখানে খাবার জমা করা হয়, তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে দাঙ্গা। পুলিশ বা সেনাবাহিনীকে ডাকলেও তারা আসতে পারবে না। কারণ, তাদের চলতেও জ্বালানি ও সরবরাহ প্রয়োজন হয়।
এক বছর পর
উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ল্যান্ডলাইন (তারের মাধ্যমে) টেলিফোন নেটওয়ার্ক পুনরায় তৈরি করবে। সমাজ পুনর্নির্মাণ শুরু হবে। উন্নত বিশ্বে বাইরের সব জায়গা প্রাচীন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ফিরে যাবে। অনুমান করা হয়, খাবারের অভাব, ঠান্ডা ও অস্থিরতায় বিশ্বব্যাপী মারা যাবে প্রায় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মানুষ। মানে পৃথিবীর আট বিলিয়ন মানুষের আট ভাগের এক ভাগ মারা যাবে। বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৩০-এর দশকে যেমন ছিল, সে সময়ে ফিরে যাবে।