হাজার কিউবিটের কোয়ান্টাম চিপ তৈরি করল আইবিএম

কম্পিউটার চিপ

প্রথমবারের মতো এক হাজারেরও বেশি কিউবিটের কোয়ান্টাম চিপ তৈরি করেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম। ৪ ডিসেম্বর নিজেদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তিতে নতুন মাইলফলক হিসাবে দেখছেন প্রযুক্তিবিদেরা।

দীর্ঘদিন ধরে আইবিএম কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে এ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। এ চিপের হাত ধরে সেই প্রচেষ্টায় আরও একটি সাফল্য যুক্ত হলো। এখন তারা চিপে অতিরিক্ত কিউবিট যোগ করার পরিবর্তে একে ত্রুটিমুক্ত করার দিকে নজর দেবে। কনডোর নামের এই কোয়ান্টাম চিপে ষড়ভূজ প্যাটার্নে সাজানো আছে সর্বমোট ১ হাজার ১২১টি কিউবিট।

প্রচলিত ডিজিটাল কম্পিউটারের ০ বা ১-কে বাইনারি বিট বলা হয়। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে কোনো সমস্যার একাধিক সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করা যায় না। সর্বোচ্চ দুটি সম্ভাবনা গণনা করতে পারে সাধারণ কম্পিউটার। এই সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত কিউবিট। এ দিয়ে একই সঙ্গে সম্ভাব্য সব সম্ভাবনা যাচাই করা যায়। পরমাণুর কোয়ান্টাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে কিউবিট তৈরি করা হয়। এ জন্য অতি পরিবাহী পদার্থকে রাখতে হয় পরম শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায়।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রাণভোমরা বলা যায় কোয়ান্টাম চিপকে। এর সাহায্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার জটিল সব হিসাব-নিকাশ করতে সক্ষম, যেগুলো বর্তমানের ডিজিটাল কম্পিউটারে কল্পনা পর্যন্ত করা যায় না। এমনকি সুপার কম্পিউটারের সাহায্যে যেসব সমস্যা সমাধান করতে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেগুলোও খুব সহজে করা যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সাহায্যে।

কনডোরের পাশাপাশি একই দিনে হেরন নামে আরও একটি কোয়ান্টাম চিপ উন্মুক্ত করেছে আইবিএম। এটা প্রতিষ্ঠানটির এখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে কম ত্রুটিযুক্ত কোয়ান্টাম প্রসেসর। পদার্থ, রসায়নসহ ভৌতবিজ্ঞানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হিসেবে আইবিএমের এসব কোয়ান্টাম সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে।

সাধারণ কম্পিউটার প্রসেসরের মতো এগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের উপযোগী নয়। অন্তত এখন পর্যন্ত।

আইবিএম হেরন হলো প্রতিষ্ঠানটির নতুন ধরনের প্রথম পারফরমেন্ট প্রসেসর। এটি গত বছরের আইবিএম ইগল প্রসেসরের তুলনায় ৫ গুণ বেশি উন্নত বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছরের মধ্যে এটি আইবিএমের কোয়ান্টাম সিস্টেমে যুক্ত করা হবে।

‘আইবিএম কোয়ান্টাম সিস্টেম টু’ নামের একটি কোয়ান্টাম-সুপারকম্পিউটিং আর্কিটেকচারও মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি মূলত ১৫ ফুট লম্বা একটি সুপার কম্পিউটার। আইবিএম নির্মিত চিপগুলো এখানেই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হবে। কম্পিউটারটি মহাশূন্যের চেয়েও শীতল তাপমাত্রায় বায়ুশূন্য পরিবেশে কাজ করবে।

সাধারণ কম্পিউটার প্রসেসরের মতো এগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের উপযোগী নয়। অন্তত এখন পর্যন্ত। আইবিএমের কোয়ান্টাম সিস্টেম টু কম্পিউটারটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়র্কটাউন হাইটে স্থাপন করা হয়েছে। মূলত কোয়ান্টাম প্রসেসর ও কম্পিউটার উন্নতকরণ কাজে ব্যবহৃত হবে এটি।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আইবিএম, নিউ সায়েন্টিস্ট