চ্যাটজিপিটি সব জানে!

কয়েক মাস ধরে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই ঘুরেফিরে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সবচেয়ে বেশি আসছে চ্যাটজিপিটির নাম। আর্টিকেল লিখতে হবে কিংবা সারমর্ম তৈরি করে দিতে হবে? ই–মেইল কিংবা গোটা কোনো ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কোড—সব জানে চ্যাটজিপিটি। সেই সবজান্তা চ্যাটজিপিটির শেখার ধরন, নৈতিকতা বা মৌলিক রচনা…

স্মার্টফোনে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সিরির মতো ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট মানুষের হাতে আসে গত দশকে। এটা ছিল যুগান্তকারী এক মাইলফলক। কোনো তথ্য জানতে হলে সার্চ করে, ওয়েবপেজ ব্রাউজ করে খোঁজার প্রয়োজন মিটে গিয়েছিল অনেকাংশেই। মুখে বলে বা লিখে ফোনকে জিজ্ঞাসা করলেই ইন্টারনেট থেকে উত্তর খুঁজে নিয়ে হাজির হতো এই অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সহকারীরা।

বাইরের তাপমাত্রা আজ কত? বলে দেবে ফোন। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত? তা–ও জানিয়ে দেবে মুহূর্তেই। উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের সব নাটকের নাম জানতে চান? অ্যাসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞাসা করলে তারও একটা তালিকা বানিয়ে দেবে আপনাকে।

তবে ধীরে ধীরে আমাদের জীবনে ইন্টারনেটের প্রয়োজন বাড়ছে। আগের মতো আমরা এখন শুধু তথ্য-উপাত্ত খুঁজে বেড়াই না। দৈনন্দিন টুকটাক প্রয়োজনের পাশাপাশি অফিসের কাজ, এমনকি গবেষণার কাজেও ব্যবহৃত হয় ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটে করা প্রশ্নগুলোও অনেক জটিল হয়ে গেছে—

কোয়ান্টাম সুপারপজিশন ও এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট ব্যবহার করে কীভাবে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা হয়?

প্যারিসের কোন জায়গাগুলো শীতকালে ঘোরার জন্য ভালো এবং জায়গাগুলোতে কীভাবে যেতে হবে? বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন?

এ রকম জটিল প্রশ্নের উত্তরের জন্য একসময় মোটা মোটা বই নিয়ে বসতে হতো। আজ আমরা এগুলো ইন্টারনেটে খুঁজি। মিলেও যায় যথাযথ উত্তর। তবে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতার মতো সার্চ করার সঙ্গে সঙ্গে এসব তথ্য চট করে পাওয়া যায় না। কারণ, এসব প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল। আবার অনেক সময় সম্পূর্ণ তথ্য এক ওয়েবসাইটে পাওয়াও যায় না। ফলে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইন্টারনেটে সময় ব্যয় হয় অনেক। একটা প্রশ্নের কিছু অংশের উত্তর একটা ওয়েবসাইটে পাওয়া গেলেও বাকি অংশ খুঁজতে ঘুরতে হয় আরও ডজনখানেক ওয়েবসাইটে। কয়েকটা ওয়েবসাইট মিলে তথ্য পাওয়া গেলেও ওয়েবসাইটগুলোর রচনাশৈলীর ভিন্নতার কারণে অনেক সময়ই তথ্যগুলোকে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে একটা মৌলিক ধারণা দাঁড় করানো কঠিন হয়ে যায়।

ওপেনএআই (OpenAI) নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল সমস্যাটা। তাই বহু বছর ধরেই তারা এমন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল নিয়ে কাজ করছিল, যাকে স্মার্টফোনে অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো যেকোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যাবে। উত্তরে সে বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ ধারণা আউটপুট দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি।

গত কয়েক মাস স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ পড়ে থাকলে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, আমি ওপেনএআইয়ের চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেন্ড ট্রান্সফরমার বা চ্যাটজিপিটির (ChatGPT) কথা বলছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল—সব জায়গাতেই চ্যাটজিপিটির চর্চা চলছে। চলবে নাই-বা কেন? আইটি সেক্টরে এ দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। এ জন্যই সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্ল্যাটফর্মে আনার রেকর্ডটিও চ্যাটজিপিটির। যেখানে ফেসবুকের সাড়ে চার বছর, ইনস্টাগ্রামের আড়াই বছর, এমনকি টিকটকেরও ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী জোগাতে লেগেছিল প্রায় ৯ মাস, সেখানে নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চ্যাটজিপিটি এই দুষ্কর কাজটা করে দেখিয়েছে মাত্র দুই মাসে।

কথা হলো, সবার চ্যাটজিপিটি নিয়ে এত আগ্রহ কেন? কারণ, এককথায় বললে, চ্যাটজিপিটি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে।

ওপরের জটিল প্রশ্নগুলো যদি গুগলে সার্চ করা হয় বা অ্যাসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে একগাদা ওয়েবসাইটের লিংক এনে দেবে এই সার্চ মাধ্যমগুলো। সেগুলো ঘেঁটে ধারণা নিতে হবে, খুঁজতে হবে জবাব। তবে এই প্রশ্নগুলো যদি সরাসরি চ্যাটজিপিটিকে করা হয়, এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি এসব প্রশ্নের বিস্তর ও বিশ্লেষণী উত্তর এনে দেবে একবারেই।

সোজা কথায়, আপনি গুগলে সার্চ করে ডজনখানেক ওয়েবসাইট ঘেঁটে যে তথ্যগুলো জানতে পারতেন, তার প্রায় পুরোটাই চ্যাটজিপিটি আপনাকে মুহূর্তেই দিয়ে দেবে। অনেকটা একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার মতো।

রাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি খুব ভালোভাবে বোঝেন, এমন কাউকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে যেভাবে গুছিয়ে উত্তর দেবেন, চ্যাটজিপিটিও সেভাবে একটা সম্পূর্ণ উত্তর দেবে আপনাকে। উত্তরগুলো দেখে মনে হবে, আপনি বোধ হয় ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারও কাছ থেকে উত্তরগুলো জানছেন।

শুধু এসব তথ্যনির্ভর উত্তরই নয়। আপনার হয়ে চিঠি, ই–মেইল লেখা, কোডিং করা, গল্প বানানো, অফিসের হিসাব-নিকাশ করে দেওয়া—এসব জটিল কাজের জন্য আগে যেখানে কয়েকজন নানা বিষয়ে দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হতো, তা এখন চ্যাটজিপিটি করে দিচ্ছে একাই।

কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি কনজ্যুমার অ্যাপ্লিকেশন কীভাবে মানুষের মতো গুছিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে? কীভাবে মানুষের মতো এত বিষয়ে পারদর্শী হতে পারে? কীভাবে এসব শিখেছে এই এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি?

চ্যাটজিপিটি যেভাবে শেখে

চ্যাটজিপিটি যেকোনো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের মতোই দুই ধাপের ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যায়—প্রি-ট্রেনিং ও ফাইন টিউনিং।

প্রি-ট্রেনিং (Pre-Training) ধাপে বিশালাকার ডেটাসেট দিয়ে ওপেনএআইয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে ভাষার ব্যবহার শেখানো হয়। বোঝার সুবিধার্থে ডেটাসেটকে আপনি চাইলে ধরে নিতে পারেন টেবিল বা তালিকা আকারে সাজানো বা এলোমেলোভাবে একসঙ্গে রাখা অনেক তথ্য। এই সেটের সব তথ্যই নেওয়া হয় ইন্টারনেটে থাকা অসংখ্য আর্টিকেল, ব্লগ পোস্ট, বই ও ডকুমেন্ট থেকে।

ডেটাসেট থেকে প্রথম মডেলটি শেখে, কীভাবে শব্দ দিয়ে বাক্য গঠিত হয়। তবে এ পর্যায়ে যে ডেটা সেট ব্যবহার করা হয়, তাতে কোনো লেবেল বা নির্দেশক থাকে না। বলা থাকে না, এই ডেটা বা লেখাটি ঠিক কোন বিষয়ের। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ডেটাগুলো লেবেলিং করে দেয় না। সহজে ভাবতে পারেন, একটা টেবিলে কয়েকটি কলামে বেশ কিছু তথ্য আছে। কিন্তু কলামগুলোর কোনো নাম দেওয়া নেই। মানে, এটা একদম ‘র (raw) ডেটা’। সম্পাদনা কিংবা নামকরণ (লেবেলিং), কিছুই করা নেই। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি এই ‘র ডেটা’ থেকে নিজে নিজে শেখে।

যেহেতু ট্রেনিংয়ের এই ধাপে ডেটাসেটে কোনো লেবেল থাকে না বা কারও তত্ত্বাবধায়ন কিংবা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, প্রি-ট্রেনিংকে তাই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের আনসুপারভাইজড লার্নিং বা তত্ত্বাবধানহীন শেখার প্রক্রিয়া বলা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় চ্যাটজিপিটির মডেলটি শেখে কীভাবে একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক গড়ে তোলে অর্থবোধক ভাষা। রচনার প্রেক্ষাপটে কোন শব্দের পর কোন শব্দটি সবচেয়ে ভালো যায়, একটি বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ কীভাবে পরের বাক্যের শব্দচয়ন নির্দেশ করে, শেখে এ রকম নানা কিছু।

আনসুপারভাইজড লার্নিং পর্ব শেষে চ্যাটজিপিটি বুঝে ফেলে, বিচ্ছিন্ন শব্দগুলো কীভাবে একে অপরের পাশাপাশি বসে অর্থবোধক ভাষা গঠন করে। কিন্তু এভাবে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি থেকে যেতে পারে।

উদাহরণ দিই। একটি উপন্যাসে যদি মজার ছলে বলা হয় ‘ধেৎ, মরোগে!’; শেখার এ পর্যায়ে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি বুঝতে পারবে না, উপন্যাসের একটি চরিত্র আরেকটিকে বিরক্ত হয়ে কথাটি বলেছে। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটিকে যদি বোঝাতে হয় কথাটি বিরক্ত হয়ে বলা, তাহলে বাক্যটির সঙ্গে আলাদা লেবেল থাকতে হবে। এই লেবেল নির্দেশ করবে, বাক্যটি এ উপন্যাসে বিরক্তিসূচক বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ঠিক এ কাজই হয় ফাইন টিউনিং ধাপে।

ফাইন টিউনিংয়েও ডেটা সেট থেকে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে শেখানো হয়। তবে এই ডেটা সেটগুলো আনসুপারভাইজড লার্নিং বা প্রি-ট্রেনিংয়ে ব্যবহৃত ডেটা সেটের মতো এত বিশালাকার হয় না। ফাইন টিউনিংয়ে ব্যবহৃত ডেটাসেট মূলত বেশ ছোট হয়। এ সেটের ডেটাগুলো হয় একই শ্রেণির বা ধরনের। এ ছাড়া একজন মানুষ আগে এই সুনির্দিষ্ট ডেটা সেটগুলোর লেবেলিং করে দেন। ফলে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি জানে, এটি ঠিক কী শিখছে এই ডেটাসেট থেকে। যেহেতু এ ধাপের ডেটাসেটগুলো পরিমার্জিত ও লেবেল করা এবং পুরো প্রক্রিয়াটি হয় মানবনিয়ন্ত্রিত, তাই এই ফাইন টিউনিং ধাপকে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের সুপারভাইজড লার্নিং বা তত্ত্বাবধানে শেখার প্রক্রিয়া বলা হয়।

চ্যাটজিপিটির মডেলটি এই সুপারভাইজড লার্নিংয়ে শেখে কীভাবে কনটেক্সট বা অর্থের ওপর ভিত্তি করে আরও সুনির্দিষ্ট জবাব তৈরি করতে হয়। মূলত চ্যাটজিপিটির মূল মডেল, জিপিটির (GPT) জবাবকে আরও নির্ভুল ও প্রশ্ন অনুযায়ী আরও সংগত করতে সুপারভাইজড লার্নিং ব্যবহার করা হয়। বহু বছরের প্রি-ট্রেনিং এবং ফাইন টিউনিংয়ের কারণেই আজকের চ্যাটজিপিটি মডেল যেকোনো প্রশ্নের উত্তর মানুষের মতো দিতে পারে। চ্যাটজিপিটি যদি কোনো মানুষের মতোই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, তাহলে এটি কি মানুষের মতো বানিয়ে বানিয়েও কথা বলতে পারবে?

সুপারভাইজড লার্নিং মডেল: এ মডেলে একজন তত্ত্বাবধানকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলটিকে বলে দেয়, ভুলটা কোথায় হচ্ছে এবং কীভাবে তা শুধরে নিতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে শুধরে নেয় ও উন্নতি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক রচনা

সুপারভাইজড ও আনসুপারভাইজড লার্নিংয়ে চ্যাটজিপিটি মডেল বিভিন্ন ডেটাসেট থেকে ভাষার ব্যবহার শেখে। এই ডেটাসেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি নাটক, উপন্যাস বা কল্পকাহিনির অংশও থাকে। সঠিক তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি যেহেতু গল্পকাহিনি রূপে কিছু বানোয়াট ডেটা থেকেও জিপিটি মডেলটি শেখে, চ্যাটজিপিটির দেওয়া উত্তর, তাই সব সময় সঠিক না-ও হতে পারে। অর্থাৎ চ্যাটজিপিটি কোনো প্রশ্নের ভুল উত্তর দিতে পারে। তবে এ রকম এআই সরাসরি মিথ্যা বলতে পারে না। কারণটা খুব স্পষ্ট।

আমরা মিথ্যা কেন বলি? নিজের স্বার্থের জন্য, তাই না?

যেকোনো মিথ্যার পেছনে আমাদের নিজেদের কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু চ্যাটজিপিটির কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা উদ্দেশ্য নেই। তাই প্রশ্নের জবাবে চ্যাটজিপিটির মিথ্যা বলার কোনো কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, চ্যাটজিপিটি বানিয়ে বলতে পারে।

চ্যাটজিপিটিকে যদি বিড়াল নিয়ে একটি গল্প লিখতে বলা হয়, তবে এটি অনায়াসে একটি ঘটনা বানিয়ে দেবে। এ ঘটনা বাস্তবে কখনো ঘটেনি কিংবা কোনো গল্পের বই থেকে নকলও করা হয়নি। অর্থাৎ চ্যাটজিপিটি ঘটনা বানিয়ে লিখতে পারে, যেকোনো ধরনের সৃজনশীল মৌলিক কনটেন্ট লিখতে পারে। তবে এখানে একটা ছোট ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ আছে।

হ্যাঁ, চ্যাটজিপিটি বানিয়ে মৌলিক রচনা লিখতে পারে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি এমন কিছু বানাতে পারে না, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে সে নিজে অবগত নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চ্যাটজিপিটির ট্রেনিং ডেটাসেটে যদি মহাকাশ নিয়ে কোনো তথ্য না রাখা হতো, তাহলে ট্রেনিং শেষে চ্যাটজিপিটিকে মহাকাশ নিয়ে একটা গল্প লিখতে বললে এটি তা পারত না। অর্থাৎ চ্যাটজিপিটি এমন কিছু নিয়ে লিখতে পারবে না, যে বিষয়ে সে আগে থেকে কিছু জানে না। এটি যা-ই লিখুক না কেন, তার অনুপ্রেরণা কোথাও না কোথাও থেকে নেওয়া। চ্যাটজিপিটি যদি বিড়াল নিয়ে একটি ঘটনা লিখে ফেলে, তবে অবশ্যই তাকে সে জন্য ট্রেনিংয়ে শেখা তথ্য ব্যবহার করতে হয়েছে। প্রি-ট্রেনিং ধাপেই এই মডেলকে শেখানো হয়েছে বিড়াল দেখতে কী রকম, এর আচার, বৈশিষ্ট্য কোন ধরনের ইত্যাদি। পাশাপাশি এটি আরও শিখেছে, গল্পের মধ্যে ‘বিড়াল’ শব্দটি কীভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব তথ্য ব্যবহার করেই চ্যাটজিপিটি বিড়াল নিয়ে নতুন একটি গল্প লিখে ফেলতে পারে।

এটাও যেমন সত্যি যে চ্যাটজিপিটি এই গল্প নিজ থেকে লিখেছে, এটাও সত্যি যে আগের গল্প ও তথ্যগুলো ছাড়া চ্যাটজিপিটি এ গল্প লিখতে পারত না। যেহেতু আগের রেফারেন্স ছাড়া চ্যাটজিপিটির পক্ষে এ রকম ক্রিয়েটিভ কিছু লেখা সম্ভব নয়, আপাতদৃষ্টে তাই চ্যাটজিপিটি নিজেই এগুলো লিখছে মনে হলেও সত্যিকার অর্থে এটি নিজে নিজে শূন্য থেকে কোনো কিছু বানিয়ে লিখতে পারে না।

চ্যাটজিপিটির বিবর্তন

চ্যাটজিপিটির ভিত যে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, তার নাম জেনারেটিভ প্রি-ট্রেন্ড ট্রান্সফরমার বা জিপিটি (GPT) মডেল। ওপেনএআই বহু বছর এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল নিয়ে কাজ করলেও এর প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জিপিটি-২–এর হাত ধরে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে ব্যাপক সাড়া ফেললেও তখনো এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি সর্বসাধারণের কাছে ততটা পরিচিতি পায়নি। এর মূল কারণ ছিল, অতিক্ষুদ্র ট্রেনিং ডেটাসেট। মাত্র ৪০ জিবি ডেটা ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এই মডেল। এ ছাড়া জিপিটি-৩ ও জিপিটি-৪–এর তুলনায় এর প্যারামিটারও অনেক কম ছিল, মাত্র ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন। তাই জিপিটি-২ মডেলটি প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও তা অনেকাংশেই কম্পিউটার জেনারেটেড বলে মনে হতো। অনেক সময় এটি প্রশ্নের সঠিক অর্থও বুঝতে পারত না। তাই জবাবগুলো প্রশ্নের সঙ্গে ঠিক প্রাসঙ্গিক মনে হতো না।

সত্যিকার অর্থে জিপিটি মডেল মানুষের মতো জবাব দিতে শুরু করল ২০২০ সালের জুনে জিপিটি-৩ মুক্তির পর থেকে। ওই বছরই এপিআইয়ের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো জিপিটি-৩। আর ডেভেলপাররা বানাতে শুরু করল নিজেদের এআই চ্যাটবট ও ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ওপেনএআইয়ের নিজস্ব পণ্য চ্যাটজিপিটি।

জিপিটি-৩–এর ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে ৪৫ টেরাবাইট (৪৫ হাজার গিগাবাইট) সাইজের ডেটাসেট, যাতে প্যারামিটার ছিল ১৭৫ বিলিয়ন। এ মডেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কথাবার্তা বা প্রশ্নের অর্থ ভালোভাবে বুঝতে শুরু করে। ফলে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথাবার্তা ন্যাচারাল মনে হয়। এ অভিজ্ঞতাটা অনেকটা খুব জ্ঞানী কারও সঙ্গে চ্যাট করার মতোই।

জিপিটি-৩ থেকেই এই এআই টুলটি প্রশ্নের জবাবে মানুষের মতো করে উত্তর দিতে শুরু করে। একটি কথোপকথনের শুরু থেকে সব প্রশ্নের কনটেক্সট বা অর্থ মনে রেখেই চ্যাটজিপিটি পরের প্রশ্নের উত্তর দেয়। এ কারণে কথোপকথন আরও স্বাভাবিক মনে হয়। ফলে গত বছরের নভেম্বরে জিপিটি-৩-সহ চ্যাটজিপিটি সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে ওঠে ব্যাপক জনপ্রিয়।

তবে চ্যাটজিপিটির সবচেয়ে বড় আপডেট আসে গত মাসে (মার্চ ২০২৩), জিপিটি-৪ নামে। এই মডেলকে ট্রেইন করা হয়েছে ১ পেটাবাইটেরও (১ কোটি গিগাবাইট) বড় ডেটাসেট দিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এই জিপিটি মডেলে ৩০০ বিলিয়নের বেশি প্যারামিটার রয়েছে। তবে এ বিষয়ে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

আনসুপারভাইজড লার্নিং মডেল: এ মডেলে কোনো তত্ত্বাবধানকারী থাকে না। মডেল বারবার ডেটাসেট থেকে শেখে, পরীক্ষা দিয়ে দেখে কতটা শেখা হলো, তারপর উন্নতির প্রয়োজন হলে আবার শেখে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ পদ্ধতিতে ভুলও শিখতে পারে।

সব কাজের কাজি

চ্যাটজিপিটি কী কী করতে পারে, তার তালিকা তৈরি করতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না। গুগলের মতো যেকোনো প্রশ্নের উত্তর তো দিতে পারেই, পাশাপাশি ওই প্রশ্নের জবাবে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বড়সড় আর্টিকেলও লিখে দিতে পারে।

হোমওয়ার্ক বা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা দরকার? এখন আর আগের মতো কোনো বিষয় নিয়ে গুগলে সার্চ করে ডজনখানেক আর্টিকেল পড়ার প্রয়োজন নেই। যে বিষয় নিয়ে জানা দরকার, চ্যাটজিপিটিকে ঠিক সেই প্রশ্ন করলে সঙ্গে সঙ্গে ঠিক তার বিস্তারিত উত্তর জানিয়ে দেবে। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি সহজ হবে গবেষণাবিষয়ক কাজ।

এ ছাড়া টেকনিক্যাল কাজেও ব্যবহার করা যাবে একে। অনেক কঠিন ও জটিল হিসাবেও পটু চ্যাটজিপিটি। ৪৭ হাজার টাকায় ১৩ বছর ৪ মাসে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে প্রাপ্ত মুনাফা ৯৩ হাজার টাকার ২২ বছরে ৭ শতাংশ হারে সরল মুনাফার কত শতাংশ—এমন জটিল হিসাবও অনায়াসে করতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মুনাফার হিসাবের মতো শতকরা, লগারিদম, ক্যালকুলাসসহ আরও অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধানেই কাজে আসবে চ্যাটজিপিটি।

গাণিতিক সমস্যা ছাড়াও ডেটা প্রসেসিংও করতে পারে ওপেনএআইয়ের এই টুল। একটা সহজ উদাহরণ দিই। যদি একটি ক্লাসের সবার ইংরেজিতে প্রাপ্ত নম্বরগুলো চ্যাটজিপিটিকে দেওয়া হয়, তবে সে নম্বরগুলোর গড়, মধ্যক, প্রচুরক—এসব বের করার পাশাপাশি নম্বর অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজাতেও পারবে। এটা শুধু পরীক্ষার নম্বরের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো ধরনের উপাত্তই বিশ্লেষণ করে সাজাতে পারে চ্যাটজিপিটি।

ডেটা অ্যানালাইসিস ছাড়াও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো টেকনিক্যাল কাজও করতে পারে এটি। সিম্পল ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, যেমন কিউআর কোড জেনারেটর বা সাধারণ ক্যালকুলেটর বানাতে চাইলে একবার নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট। আবার ওয়েবসাইট বানাতে যেসব ল্যাঙ্গুয়েজে কোড লিখতে হয়, সেগুলোও পারে চ্যাটজিপিটি। বললেই সিএসএস (CSS), জাভাস্ক্রিপ্টসহ (JavaScript) পুরো এইচটিএমএল (HTML) কোড লিখে দেবে। বেসিক অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন বানাতে চাইলে তার জন্যও লিখে দেবে কোড। সেই কোড অ্যান্ড্রয়েড স্টুডিওতে বসালেই হয়ে যাবে একটি অ্যাপ!

এসব টেকনিক্যাল কাজ ছাড়াও ক্রিয়েটিভ প্রায় সব রকম কাজই পারে চ্যাটজিপিটি। অফিসে ছুটি চেয়ে একটা দরখাস্ত লাগবে? লিখে দেবে। একটি ই–মেইলের জবাব লিখতে হবে? ই–মেইলটি কপি করে চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে দিলেই জবাব লিখে দেবে চট করে। বড় আর্টিকেল পড়ার সময় নেই? কপি করে চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে দিন। পুরো লেখার সারমর্ম বানিয়ে দেবে। একটা রিপোর্ট থেকে শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটুকু লাগবে? পুরো রিপোর্টটা দিয়ে দিলে সেটা থেকে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্যটুকু আলাদা করে দেবে চ্যাটজিপিটি। এগুলো ছাড়াও যেকোনো বিষয়ে ছোটগল্প, রচনা, এমনকি কবিতাও লিখতে পারে এটি।

চ্যাটজিপিটির এত বিষয়ে এমন দক্ষতা অনেককে বেশ ভাবিয়ে তুলছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি হিসাবরক্ষকের মতো সব অঙ্ক মিলিয়ে ফেলতে পারে, সহকারীর মতো আপনার হয়ে চিঠি, ই–মেইল লিখে দিতে পারে, ডেভেলপারের মতো কোডিং করতে পারে, লেখকের মতো গল্প-কবিতাও লিখতে পারে; তবে এই হিসাবরক্ষক, অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডেভেলপার, লেখক—তাদের কী প্রয়োজন?

চ্যাটজিপিটির ইন্টারফেস। প্রশ্ন করুন, জানলে সে গুছিয়ে জবাব দেবে চটপট। জানলে সেটাও জানিয়ে দেবে ভদ্রভাবে

কর্মীগ্রাসী চ্যাটজিপিটি?

চ্যাটজিপিটি অনেক কিছুই করতে পারে। ই–মেইল লেখা, আর্টিকেল ড্রাফট করা, কাস্টমার সাপোর্ট, প্রোগ্রামিং ছাড়া আরও অনেক কাজেই চ্যাটজিপিটি ও এর মতো অন্যান্য এআই সাহায্য করতে পারে। তবে এসব কাজে এখনো হিউম্যান মডারেশন (Human Moderation) প্রয়োজন। চ্যাটজিপিটি যদিও অনেক কিছু লিখে দিতে পারে, সেসব কনটেন্ট কিন্তু সরাসরি কোথাও ব্যবহার করা যায় না। কারণ, লেখাটিতে তথ্যগত ভুলও থাকতে পারে। এ ছাড়া এসব কনটেন্ট খুব পারসোনালাইজড হয় না। একটা গৎবাঁধা ধাঁচে লেখা, ব্যবহারযোগ্য করতে হলে পরে একজন মানুষকে দিয়ে সেগুলো সম্পাদনা করতেই হয়।

অনেক ক্ষেত্রে এসব লেখা একদমই ব্যবহার করা যায় না। যেমন ব্লগ পোস্ট বা ওয়েব কনটেন্ট হিসেবে। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের এমন নিষেধাজ্ঞাই আছে এআইয়ের লেখা ওয়েবসাইটে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কনটেন্ট রাইটার বা কপিরাইটারের কাজ চ্যাটজিপিটি করতে পারলেও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জায়গা ঠিক এখনই দখল করতে পারবে না। তবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা নতুন নতুন কনসেপ্ট জেনারেট করতে পারেন। এটি যে কারও কাজে সহায়ক।

প্রোগ্রামিং বা ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হচ্ছে। চ্যাটজিপিটি ছোট অনেক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন কোড করে দিতে পারে বটে, কিন্তু সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা সফটওয়্যার বা ওয়েব ডেভেলপাররাই জানেন মূলত। এ ছাড়া বড় কোনো কনসেপ্ট যদি হয়, তার জন্য পুরো কোড চ্যাটজিপিটি দিতে পারবে না। তবে পুরো প্রোগ্রামকে কয়েকটা ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করে চ্যাটজিপিটিকে দিলে একে একে সেই ব্লকগুলোর জন্য হয়তো কোড লিখে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও কোড ব্লকগুলোকে একত্র করে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য একজন ডেভেলপারের প্রয়োজন হবেই।

মোটকথা, চ্যাটজিপিটি এবং এর মতো এআইগুলো বানানো হয়েছে আমাদের কাজকে সহজ করতে। আমাদের কর্মসংস্থান ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। অর্থাৎ খুব শিগগির চাকরির বাজার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে চলে যাবে, এমন ধারণা ভুল। তবে এআইগুলোর সঙ্গে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই নিজের স্কিলকে সময়ের সঙ্গে মানানসই রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, চ্যাটজিপিটি এবং এর মতো এআইগুলো যেন আপনার কাজের পরিপূরক হয়, সম্পূরক নয়।

এটা সত্যি যে এসব এআইয়ের কারণে অনেক চাকরিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে এটাও সত্য, এসব এআইয়ের ব্যবহার যত বাড়বে, ততই এআইগুলোর ডেভেলপমেন্ট এবং রক্ষণাবেক্ষণে লোকের প্রয়োজন পড়বে। এআই মডেল ট্রেনিং, ডেটা মডারেশন বা কিউরেশন এবং ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য অনেক নতুন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হবে।

এআই কি মানুষের ক্ষতি করতে পারে

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটিই। চ্যাটজিপিটি বা এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি অনৈতিক কিছু করতে পারে?

চ্যাটজিপিটির মতো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা যেকোনো এআই টুলই মানবনিয়ন্ত্রিত। মানুষই এ মডেলগুলোকে ডেটা দিয়ে ট্রেইন করে। সেজন্য যে ডেটা ব্যবহার করা হয়, তা–ও মানুষেরই লেখা। এসব ডেটা ও মানবনিয়ন্ত্রিত সুপারভাইজড লার্নিং ছাড়া এই এআই কোনো কিছু শিখতে পারে না। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা কিছু শিখেছে বা শিখছে, তা মানুষের কাছ থেকেই শিখছে।

তাই যদি চ্যাটজিপিটি বা এ রকম কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সরাসরি কোনো বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব করতে শেখানো না হয়, তবে এটিও কোনো বিষয় নিয়ে বায়াসড বা পক্ষপাতদুষ্ট মতামত দিতে পারে না। কিন্তু যদি ট্রেনিংয়ের সময়েই কোনো মডেলকে একটি নির্দিষ্ট পক্ষের হয়ে ভাবতে ও জবাব দিতে শেখানো হয়, তবে মডেলটি অবশ্যই এক পক্ষের হয়ে উত্তর দিতে পারে। আবার চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তা মানুষের ক্ষতিও করতে পারবে। তবে বুঝতেই পারছেন, এটি আসলে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করছে না। করছে এর ডেভেলপাররা। চ্যাটজিপিটির উদাহরণই দিই। আপনি যদি ওপেনএআইয়ের নামে কোনো মামলা করার জন্য চ্যাটজিপিটির কাছে পরামর্শ চান, এটি আপনাকে কিছুতেই সহায়তা করতে চাইবে না। এটি কিন্তু চ্যাটজিপিটি নিজের বুদ্ধিতে করছে না। তাকে এ রকম নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তবে এসব কিছু খোদ এআই নিজে নিজে করতে পারবে না। কেননা চ্যাটজিপিটির মতো এআই মডেলের নিজস্ব কোনো অভিমত, নৈতিকতা বা বোধশক্তি নেই। এই মডেলগুলোকে যা শেখানো হচ্ছে বা হবে, এগুলো তা-ই শিখবে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। বানাতে হবে প্রয়োজনীয় আইন, নিশ্চিত করতে হবে তার যথাযথ প্রয়োগ। নিশ্চিত করতে হবে, চ্যাটজিপিটির মতো মডেলগুলোকে সঠিক ডেটা দিয়ে যেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তখন এর ব্যবহার শুধু ভালোর জন্যই হবে, মন্দের জন্য নয়।

লেখক: ব্যবস্থাপক, ডেফটাইল্ড

সূত্র: ওপেনএআই, এআই ম্যাগাজিন

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত