স্মার্টফোন কীভাবে পদক্ষেপ মাপে

মুঠোফোন বাজারে এসেছিল কথা বলার যন্ত্র হিসেবে। এখনও মুঠোফোন দিয়ে কথা বলা যায়। পাশাপাশি করা যায় আরও হরেক রকম কাজ। ফিচারসমৃদ্ধ এসব ফোন এখন স্মার্টফোন হিসেবে পরিচিত। ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সরাসরি সম্প্রচার তো বটেই, স্মার্টফোন এখন স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানা তথ্যের রেকর্ডও রাখতে পারে। কতক্ষণ হাঁটলেন, কত পা হাঁটলেন, হিসেব করতে পারে সেটাও। প্রশ্ন হলো কীভাবে?

অনেকেই মনে করতে পারেন, জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের মাধ্যমে কাজটি করে স্মার্টফোন। আসলে কি তাই? জিপিএসের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর কোথায় আছেন, সেটা নির্ণয় করা যায়। তবে কতদূর বা কত পা হাঁটছেন, তা জানার জন্য জিপিএসএর প্রয়োজন নেই। এটা পরীক্ষা করার জন্য জিপিএস বন্ধ করে দিয়ে একদিন হেঁটে দেখতে পারেন।

স্মার্টফোন ফুটস্টেপ বা পদক্ষেপ মাপে সাধারণত দুটি সেন্সর ব্যবহার করে—অ্যাকসিলারোমিটার ও জাইরোস্কোপ। আমরা সময়ের সাপেক্ষে কত বেগে এগোচ্ছি, অর্থাৎ ত্বরণ মাপে অ্যাকসিলারোমিটার। নামটা সেখান থেকেই এসেছে। আর জাইরোস্কোপ সেন্সর দিয়ে মাপা হয় দিক। ফোন কোনদিকে রাখা আছে বা ঘুরছে, সেটা। 

চলাচলের সময় অতিসামান্য নড়াচড়া বা দিকের পরিবর্তন ধরা পড়ে এসব সেন্সরে। সে অনুযায়ী তৈরি হয় ইলেকট্রিক সিগন্যাল। এ সিগন্যাল হিসাব করেই স্মার্টফোন বুঝতে পারে, আমরা কত দ্রুত চলছি বা আদৌ চলছি কি না। বা চললে, কীভাবে চলছি। অর্থাৎ পায়ে হেঁটে না যানবাহনে যাচ্ছি, সেটাও বোঝা যায় এ দুটি সেন্সরের সাহায্যে। স্মার্টফোন এর মাধ্যমে সহজেই গুনতে পারে পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেছনের পকেটে রাখলে ফুটস্টেপ বা পদক্ষেপ গণনা সবচেয়ে ভালো হয়।

ফোনের গোনা এই ফুটস্টেপ কতটা নিখুঁত, তা জানার জন্য চীনের একদল বিজ্ঞানী একটি গবেষণা করেন। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন জার্নাল পাবমেড (ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন)-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। 

গবেষক দলটি ১০৩ জন মানুষের পেছনের পকেটে একটি স্মার্টফোন ও একটি মেডিকেল গ্রেডের অ্যাকসিলারোমিটার রাখেন। তিন সপ্তাহ ধরে তাঁরা যন্ত্র দুটি ব্যবহার করেন। সেখান থেকে গবেষকেরা তথ্য নেন। দেখা যায়, দৈনিক সাড়ে ৮ হাজার ধাপের মধ্যে মাত্র ৫০০ ধাপ এদিক-ওদিক হয় স্মার্টফোনের অ্যাপে। আরও সহজ করে বললে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের দিনে গড় পদক্ষেপের পরিমাণ দেখিয়েছিল ৮ হাজার ৯৭৫ ধাপ। অন্যদিকে মেডিকেল-গ্রেড অ্যাকসিলারোমিটারে পাওয়া গিয়েছিল গড়ে ৮ হাজার ৪৬২ ধাপ। বুঝতেই পারছেন, আধুনিক স্মার্টফোনগুলো একেবারে ভুল তথ্য আপনাকে দেয় না। বরং বেশ নির্ভরযোগ্য গণনাই করতে পারে।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, পাবমেড জার্নাল