কম্পিউটারের জনক কে: টুরিং নাকি ব্যাবেজ

অ্যাপলের লিসা ২ কম্পিউটারছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় আমরা সবাই সম্ভবত পড়েছি, কম্পিউটার বা গণনাযন্ত্রের জনক চার্লস ব্যাবেজ। তবে আধুনিক কম্পিউটার এখন আর শুধু গণনাযন্ত্র নয়। এমনকি আজকের যে ক্যালকুলেটর—হিসাব-নিকাশের জন্য আমরা যে যন্ত্র ব্যবহার করি, সেটাও সাধারণ গণনার বাইরে অনেক কিছু করতে পারে। আর কম্পিউটার তো কোডিং থেকে শুরু করে বিমান পরিচালনা কিংবা নভোযানকে মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া—সবই করতে পারে নির্দেশানুযায়ী। একদম সব যে করতে পারে, তা অবশ্য নয়। তবে আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, একধরনের কম্পিউটারই আসলে, আরও অনেক কিছুই করতে পারে।

বড় হয়ে আমরা জেনেছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলি কিংবা আধুনিক কম্পিউটার—এর জনক আসলে অ্যালান টুরিং। তাহলে প্রশ্ন আসে, কে আসলে কম্পিউটারের জনক। চার্লস ব্যাবেজ, নাকি অ্যালান টুরিং।

আরও পড়ুন
চার্লস ব্যাবেজ
ছবি: উইকিমিডিয়া

আসলে ব্যাবেজ শুধু গণনা যন্ত্রের কথা ভাবেননি। তিনি সত্যি সত্যিই কম্পিউটার বানাতে চেয়েছিলেন। এর নাম তিনি দিয়েছিলেন অ্যানালিটিক্যাল বা অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন। অর্থাৎ বিশ্লেষণী ইঞ্জিন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, এই যন্ত্রে কিছু গিয়ার থাকবে, কিছু রড থাকবে, চাকা থাকবে—এসব নড়াচড়া করে যন্ত্রটা নির্দেশানুযায়ী অনেক কিছু করতে পারবে। যেমন নানারকম বৈজ্ঞানিক সমীকরণ সমাধান বা সঙ্গীত কম্পোজ করা। এর একটা নকশাও করতে শুরু করেন তিনি। সেটা ১৮৩৪ সালের ঘটনা। তবে ব্যাবেজ তাঁর কাজের পূর্ণতা দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তিনিই যে আধুনিক কম্পিউটারের স্বপ্নদ্রষ্টা, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

অ্যালান টুরিং
ছবি: সংগৃহীত

অ্যালান টুরিং মঞ্চে আসেন আরও প্রায় ১০০ বছর পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। জার্মান নাৎসি বাহিনি বিভিন্ন জায়গায় আচমকা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। প্রয়োজনীয় বার্তা আদান-প্রদান করতে ব্যবহার করছে গোপন সংকেত। এই সংকেত নির্দিষ্ট যন্ত্র দিয়েই শুধু ভাঙা যায়। টুরিং ও একদল বিজ্ঞানীর কাঁধে দায়িত্ব পড়ল এই সংকেত ভাঙার। তাঁরা তখন যুক্তরাজ্যের ব্লেচলি পার্ক নামে এক জায়গায় গবেষণাগারে কর্মরত। টুরিং তখন ইউনিভার্সাল মেশিন নামে এক যন্ত্রের কথা ভাবলেন। এটা নানারকম জটিল কাজ করতে পারবে। বলা বাহুল্য, এর মধ্যে হিটলারের নাৎসি বাহিনির কোড ভাঙার বিষয়টি তো রয়েছেই। এনিগমা মেশিন নামে একটি যন্ত্র তাঁরা তৈরি করেন। এর মূল চালিকা শক্তি ছিল ‘কলোসাস’ নামে আরেকটি যন্ত্র। সেটাই অবশেষে হিটলারের কোড ভাঙ্গতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় এর ফলে।

অর্থাৎ চার্লস ব্যাবেজের স্বপ্নকে সত্যি করার পথে প্রথম পদক্ষেপ নেন অ্যালান টুরিং। কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়নে আরও নানারকম অবদান রেখেছেন তিনি। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সমকক্ষ হয়ে উঠছে কি না, এজন্য একধরনের পরীক্ষার প্রস্তাবনাও দেন। এ পরীক্ষার নাম টুরিং টেস্ট। এই সব মিলেই আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনকের উপাধি ও সম্মান দেওয়া হয় অ্যালান টুরিংকে।

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: বিবিসি ফোকাস