বুলেট ট্রেন কেন পাখির ঠোঁটের মতো

বুলেট ট্রেন

১৯৬৪ সাল। জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে যাত্রা শুরু করে ‘টোকাইডো শিনকানসেন’। গন্তব্য, ওসাকা শহর। ইংরেজি নাম, বুলেট ট্রেন! দ্রুতগতির এই ট্রেনের ওসাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। অথচ এক্সপ্রেস ট্রেনের এ দূরত্ব পাড়ি দিতে লাগত ৬ ঘন্টা ৪০ মিনিট।

বুলেট ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার। এক বছরে জাপানে এই ট্রেন ব্যবহার করে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। কিন্তু কেন এই ট্রেনের নাম বুলেট ট্রেন রাখা হলো?

শুরুর দিকে ট্রেনের সামনের আকৃতি ছিল বুলেটের মতো। গতিও ছিল অনেক বেশি। তাই এই নাম। তবে যাত্রার কয়েক বছরের মধ্যে শিনকানসেন বুলেট ট্রেন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জাপানের পাহাড়ি পথ।

অনেক দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন টানেলের ভেতরে প্রবেশ করা ও বেরোনোর সময় প্রচণ্ড শব্দ হতো। কারণ বুলেট ট্রেন টানেলে প্রবেশ করায় এর সামনের বাতাস সংকুচিত হয়

জাপান মূলত পাহাড়-ঘেরা দ্বীপ অঞ্চল। ফলে রেললাইনগুলো পাহাড়ের টানেলের মধ্য দিয়ে গেছে। অনেক দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন টানেলের ভেতরে প্রবেশ করা ও বেরোনোর সময় প্রচণ্ড শব্দ হতো। কারণ বুলেট ট্রেন টানেলে প্রবেশ করায় এর সামনের বাতাস সংকুচিত হয়। এই বাতাস ট্রেনের বডির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকত না। ফলে সব বাতাস বুলেট ট্রেনের ধাক্কায় একযোগে বেরিয়ে যেত টানেলের অন্য পাশ দিয়ে। এতে টানেলের শেষে যে প্রচণ্ড শব্দ হতো, তা শোনা যেত প্রায় ৪০০ মিটার দূর থেকেও।

যেই চিন্তা, সেই কাজ। পাখির আকৃতির নকশায় তৈরি করা হয় বুলেট ট্রেন। বিষয়টিকে ইংরেজিতে বলা হয় বায়োমিমিক্রি

এই সমস্যা সমাধানে জাপান রেলওয়ে বিজ্ঞানীদের সাহায্যে কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে। বুলেট ট্রেনকে কীভাবে আরও দ্রুতগতির করা যায় এবং একই সঙ্গে শব্দ দূষণ কমানো যায়, সে উদ্যোগ নেয় তারা। বিজ্ঞানীদের দলে ছিলেন পাখি পর্যবেক্ষক ইজি নাকাতসু। তিনি জাপান রেলওয়ে কারিগরি উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক। মাছরাঙা পাখির ঠোঁটের আকৃতির ওপর ভিত্তি করে তিনি একটা নকশা করেন। কারণ মাছরাঙা ঠোঁটের আকৃতির কারণে পানিতে বেশি কম্পন সৃষ্টি না করেও সহজে স্বীকার ধরতে পারে।

যেই চিন্তা, সেই কাজ। পাখির আকৃতির নকশায় তৈরি করা হয় বুলেট ট্রেন। বিষয়টিকে ইংরেজিতে বলা হয় বায়োমিমিক্রি। অর্থাৎ কোনো জীবের কাজকর্ম অনুসরণ করা। এতে ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পায় ১০ শতাংশের মতো। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় প্রায় ১৫ শতাংশ এবং শব্দসীমা নেমে আসে ৭০ ডেসিবেলে। ডেসিবেল হলো শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক। এ থেকে বোঝা যায়, বুলেট আকৃতির চেয়ে মাছরাঙার ঠোঁটের আকৃতি ট্রেনের শব্দ দূষণ কমাতে বেশি উপযোগী।

ধীরে ধীরে বুলেট ট্রেনের আরও উন্নতি হয়েছে। শুরুতে বলেছিলাম, টোকিও থেকে ওসাকা শহরে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। এখন তা কমে হয়েছে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মতো। ভবিষ্যতে হয়তো এ ধরনের ট্রেনের আকৃতিতে আরও পরিবর্তন আসবে, উন্নতি হবে আরও। তবে নামটা থেকে যাবে একই—বুলেট ট্রেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: জেআরপাস ডট কম, সিটি ডট আইও