আলু-পটলের দাম বাড়ার এই সময়ে আজ এমন এক জিনিসের গল্প বলব, যার দাম প্রতিনিয়ত কমে চলেছে। শুধু যে কমছে, তাই নয়; প্রায় প্রতি দুই বছর পরপর এর দাম অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এটা ব্যবহার করেনি। এমনকি গড়ে প্রতিটি মানুষের কাছে এই জিনিসটা প্রায় আট বিলিয়ন করে আছে। খুঁজলে আপনার পকেটেও আট-দশ বিলিয়ন পাওয়া যেতে পারে। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও কথাগুলো সত্যি।
বুঝতেই পারছেন, জিনিসটা খুব ছোট। বর্তমানে এর ক্ষেত্রফল প্রায় ০.০০৪৫ বর্গ মাইক্রন (মানে মাইক্রন২)। সংখ্যাটা কত ছোট, বোঝার জন্য আপনার চুলের সঙ্গে তুলনা করা যাক। একটা চুলকে কাটলে যে বৃত্ত তৈরি হয়, তার ক্ষেত্রফল প্রায় ৫০০০ মাইক্রন২। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আপনার চুলের শেষ মাথায় এই জিনিস প্রায় ১০ লক্ষটা রাখা যাবে। ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের কথা মনে আছে? সবার জীবন নাজেহাল করে দেওয়া সেই করোনা ভাইরাসের আয়তনও এর দ্বিগুণ।
ডিটেকটিভ গল্পের মতো রহস্য আর না বাড়াই। অনেকেই হয়তো এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন, জিনিসটা হলো ট্রানজিস্টর। আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বখ্যাত বেল ল্যাবের তিন পদার্থবিদ জন বারডিন, ওয়াল্টার ব্র্যাটাইন ও উইলিয়াম শকলি নামজাদা সায়েন্স জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউতে ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের খুঁটিনাটি প্রকাশ করেন। সেদিন পৃথিবী নামের এই গ্রহটা পাল্টে গিয়েছিল চিরতরে।
আজ কোনো না কোনোভাবে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ। কম্পিউটার, ট্যাবলেট, মোবাইলে ফোন, টিভি, প্রিন্টার, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেনসহ প্রতিটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মধ্যেই ট্রানজিস্টর আছে। এমনকি আজকাল ট্রানজিস্টর থাকে রিকশাতেও (ব্যাটারিচালিত)। আসলে খুজঁলে খুব কম যন্ত্রই পাওয়া যাবে, যাতে ট্রানজিস্টর নেই। এ জন্য বলা হয়, আগুন আবিষ্কারের মতো ট্রানজিস্টরের আবিষ্কার মানুষের সভ্যতাকে আমূল বদলে দিয়েছিল।
আজকাল চ্যাটজিপিটি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এটি প্রায় মানুষের মতো কথা বুঝতে ও বলতে (পড়ুন, লিখতে) পারে। যেকোনো প্রশ্ন করলে চোখের নিমেষে উত্তর নিয়ে হাজির হয় আলাদিনের দৈত্যের মতো। চ্যাটজিপিটিকে এই পর্যায়ে আনার জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রশিক্ষণ মানুষের শিক্ষা পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই প্রশিক্ষণের জন্য লাগে অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার। সহজ করে বললে, এই প্রশিক্ষণ আসলে অসংখ্য যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ছাড়া আর কিছুই না। কম্পিউটার তার মাইক্রোপ্রসেসর বা সিপিইউ এবং জিপিইউ দিয়ে এসব কাজ করে।
একটা শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ নিয়ে একটা সিপিইউ বা জিপিইউকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, সিপিইউ বা জিপিইউ আসলে কতগুলো ফাংশনাল ব্লক দিয়ে গঠিত। কোনো কোনো ব্লক গাণিতিক কাজগুলো (যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ ভাগ) করে, কোনো ব্লক মেশিন কোডকে মাইক্রোঅপারেশনে পরিণত করে, কোনো ব্লক ইনপুট-আউটপুট কন্ট্রোল করে ইত্যাদি। আরও অনেক জুম-ইন করলে দেখা যাবে, এই ব্লকগুলো অত্যন্ত ছোট ছোট লজিক গেট দিয়ে গঠিত। আর লজিক গেটগুলো তৈরি হয় ট্রানজিস্টর দিয়ে।
প্রতিটি মোবাইল ফোনে এক বা একাধিক মাইক্রোপ্রসেসর বা সিপিইউ থাকে। আপনার বা আপনার বন্ধুর মোবাইলেও আছে প্রায় ৭ থেকে ১৫ বিলিয়ন ট্রানজিস্টর। এ সংখ্যাটা কত বড়, তা বোঝার জন্য উদাহরণ দিই। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৮ বিলিয়ন। বুঝতেই পারছেন, আপনার পকেটে যে ট্রানজিস্টর থাকার কথা বলেছিলাম, সেটা আসলে মোবাইলের ট্রানজিস্টর।
খুব সহজ করে বললে, ট্রানজিস্টরকে একটা পানির ট্যাপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পানির ট্যাপের একপ্রান্ত পানির লাইনের সঙ্গে লাগানো থাকে। এটাকে বলা যায় সোর্স বা উৎস। অন্যপ্রান্ত সিংক বা বেসিনের ওপরে থাকে, যাকে বলা যায় ড্রেন। আর ট্যাপের নবটাকে বলা যায় গেট বা দরজা। নব ঘুরিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঠিক একইভাবে ট্রানজিস্টরেও তিনটা প্রান্ত বা কন্ট্যাক্ট থাকে, যাদের নাম ড্রেন, সোর্স ও গেট। সোর্স থেকে ড্রেনে বিদ্যুৎপ্রবাহ গেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গেটে শূন্য ভোল্টেজ দিলে উৎস বা সোর্স থেকে ড্রেনে বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়, যেটা অনেকটা সুইচ অফ করার মতো। আর গেটে হাই ভোল্টেজ দিলে উৎস থেকে ড্রেনে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালু হয়, যেটা অনেকটা সুইচ অন করার মতো। অর্থাৎ গেটের মাধ্যমে ট্রানজিস্টরকে সুইচের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, শুধু এই সুইচের মতো জিনিসটা দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ থেকে শুরু করে ভিডিও এডিটিং, গেম খেলা, ফেসবুক, টিকটক, চ্যাটজিপিটি, এমনকি চাঁদে মানুষ পাঠানোও সম্ভব!
১৯২০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় রেডিওর স্বর্ণযুগ। তখনকার দিনে সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই রেডিওর সামনে জড়ো হতো রেডিও শোনার জন্য। প্রায় এক ডজন ভ্যাকুয়াম টিউব দিয়ে বানানো সেই রেডিও ছিল একটা ছোটখাটো আলমারির সমান। ১৯৫০-এর দশকে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো রেডিও বাজারে আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ছোট হতে শুরু করে রেডিওর আকার। ৮-১০টি ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো রেডিও শার্টের পকেটে রাখা যেত। ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো বলে এই রেডিওকে বলা হতো ট্রানজিস্টর-রেডিও বা সংক্ষেপে ট্রানজিস্টর। আপনাদের দাদা-দাদি বা নানা-নানিকে ট্রানজিস্টরের কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা এই ট্রানজিস্টর-রেডিওর কথা বলবেন।
পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামেবল ডিজিটাল কম্পিউটার ‘এনিয়াক’ বানানো শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। প্রায় ১৭ হাজার ভ্যাকুয়াম টিউব দিয়ে বানানো এই দানবসদৃশ কম্পিউটারের আকার ছিল দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট, প্রস্থে ৩ ফুট এবং উচ্চতায় ৮ ফুটের মতো, অর্থাৎ প্রায় ১৫×২০ বর্গফুট ঘরের সমান। প্রায় ২৭ হাজার কেজি ওজনের এই দানব কম্পিউটার ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে প্রতি সেকেন্ডে ৫ হাজার যোগ/বিয়োগ করতে পারত। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাড়ির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আধুনিক ট্রানজিস্টর টেকনোলজিতে বানানো হলে এই কম্পিউটারের আকার হতো ১০ মাইক্রন২-এর মতো। মানে, একটা চুলের আগায় ৫০০ এনিয়াক কম্পিউটার রাখা যেত।
প্রথম ট্রানজিস্টরের ধারণা দেন পদার্থবিদ জুলিয়ান এডগার লিলিয়েনফিল্ড। সেই ১৯২৫ সালে। এই ট্রানজিস্টরকে বলা হয় ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (Field Effect Transistor বা FET)। তবে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেও তখন এই ট্রানজিস্টর বানাতে পারেননি। পরে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জন বারডিন, ওয়াল্টার ব্র্যাটাইন ও উইলিয়াম শকলি পয়েন্ট কন্টাক্ট ট্রানজিস্টর নামে অন্য এক ধরনের ট্রানজিস্টর তৈরি করতে সক্ষম হন, যার কার্যপ্রণালী ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর থেকে কিছুটা আলাদা। এই ট্রানজিস্টর বানানোর জন্য ১৯৫৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান এই তিন বিজ্ঞানী।
আকারে ছোট, হালকা, দ্রুত গতিসম্পন্ন ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পয়েন্ট কন্টাক্ট ট্রানজিস্টর অচিরেই কম্পিউটার সার্কিট বোর্ডে জায়গা করে নেয়। ইউনিভ্যাক-২ কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট কন্টাক্ট ট্রানজিস্টর। তবে শুধু ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কম্পিউটার ট্রাডিক (ট্রানজিস্টর ডিজিটাল কম্পিউটার) বানানোর কাজ শুরু হয় ১৯৫১ সালে এবং শেষ হয় ১৯৫৪ সালে। মাত্র ১০০ ওয়াট পাওয়ার ব্যবহার করেই প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ গাণিতিক অপারেশন করতে পারত এই কম্পিউটার। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানে ব্যবহারের জন্য এই কম্পিউটার ডিজাইন করে বেল ল্যাবস। এভাবেই বিমানে কম্পিউটারের ব্যবহারের মতো অসম্ভব একটা কাজকে সম্ভব করে তুলল ট্রানজিস্টর।
আধুনিক ট্রানজিস্টরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। প্রথম মসফেট বা মেটাল অক্সাইড ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর তৈরি করেন বেল ল্যাবের মোহাম্মাদ (মোহামেড) আতাল্লা এবং ডাওয়েন ক্যাং। পৃথিবীর ইতিহাসের এই মহানায়কের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একে ক্রমাগত ছোট করতে থাকলে এর কার্যক্ষমতা বাড়তে থাকে। আর একটা ছোট্ট সিলিকনের টুকরোর মধ্যে অনেক ট্রানজিস্টর বানিয়ে তাদের মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল কানেকশন দিয়ে ইলেকট্রনিক সার্কিট তৈরি করা যায়। এরকম সার্কিটকে বলা হয় ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি। আপনার মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর বা সিপিইউ এরকম একটা আইসি। এর মধ্যে কোটি কোটি মসফেট আছে।
১৯৭১ সালে সিলিকন ভ্যালির অখ্যাত এক স্টার্টআপ পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক মাক্রোপ্রসেসর ৪০০৪ বাজারে আনে। ২৩০০ মসফেট দিয়ে বানানো এই সিপিইউর আকার ১২ বর্গমিলিমিটার। সেটা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১ লক্ষ গাণিতিক অপারেশন করতে পারত। সেই অখ্যাত স্টার্টআপ বর্তমানের বিখ্যাত ইন্টেল করপোরেশন। ১৯৬৫ সালে ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর লক্ষ্য করলেন, প্রতি দুই বছর পরপর একটা আইসিতে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ করলে ট্রানজিস্টর প্রতি গড় উৎপাদনের খরচ সর্বনিম্ন হয়। আরেকটু সহজ করে বললে, প্রতি দুই বছর পরপর প্রতিটি ট্রানজিস্টরের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তাঁর এই পর্যবেক্ষণ মুর’স ল (Moore’s Law) নামে পরিচিত। ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশক পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর ধরে প্রতি দুই বছর পরপর সিপিউতে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে প্রধানত মসফেটের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে। মসফেট ছোট করলে তার কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে মসফেট শুধু ছোট করে তার কার্যক্ষমতা আর বাড়ানো যাচ্ছিল না। তাই তখন থেকে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা নতুন নতুন বুদ্ধি বের করেছেন মুর'স ল-কে টিকিয়ে রাখতে।
মুর’স লর কারণে প্রতি দুই বছর পরপর কম্পিউটারের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, যে ধরনের প্রযুক্তি আগে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল, এখন সেটা চলে এসেছে নাগালের মধ্যে। নাসা যে কম্পিউটার দিয়ে চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে, তার ১০০০ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার এখন আপনার পকেটের মোবাইল ফোনে আছে।
ট্রানজিস্টর আবিষ্কার না হলে মোবাইল ফোন তৈরি হতো না; থাকত না ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ক্যালকুলেটর, জিপিএস, টিভি, গুগল, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব। কম্পিউটারগুলো হতো দানবাকৃতির, রয়ে যেত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ট্রানজিস্টর না থাকলে হয়তো চাঁদে মানুষ পাঠানো যেত না। ট্রানজিস্টর না থাকলে আজকের পৃথিবী সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। তাই মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টা আবিষ্কারের মধ্যে ট্রানজিস্টর প্রথম দিকে থাকবে।
হয়তো জেনে খুশি হবেন, ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি আজকের অবস্থায় আসার পেছনে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান আছে। বর্তমানে ইন্টেল, এএমডি, কোয়ালকমে কর্মরত শত শত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা ট্রানজিস্টর ও ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো আইসি উন্নততর করতে গবেষণা করে যাচ্ছেন। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আপনার ব্যবহৃত ল্যাপটপের সিপিইউতে থাকা ট্রানজিস্টরের একাধিক অংশ বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের গবেষণার ফল।
শত শত বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর লক্ষ লক্ষ ঘন্টার পড়াশোনা, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। আর আগামীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আবিষ্কার আসবে আপনাদের—আমাদের কিশোর-তরুণদের হাত ধরে। তবে তার জন্য চাই গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশলবিদ্যা ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা ও নিয়মিত চর্চা। তবেই আগামীতে মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখা যাবে, এগিয়ে নেওয়া যাবে বিশ্বকে।
লেখক: প্রকৌশলী, ইন্টেল কর্পোরেশন, ওরেগন, যুক্তরাষ্ট্র
টীকা ও সূত্র:
১. মানুষের চুলের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল: ৫০০০ বর্গ মাইক্রন বা মাইক্রন২। সূত্র:
২. আধুনিক ট্রানজিস্টরের আনুমানিক ক্ষেত্রফল: ০.০৫ × ০.০৩ × ৩ = ০.০০৪৫ মাইক্রন২; আয়তন: ০.০০৪৫ × ০.০৬ = ০.০০০২৭ মাইক্রন৩।
৩. চুলের ডগায় ট্রানজিস্টর রাখা যাবে: ৫০০০/০.০০৪৫ ~ ১০,০০,০০০
৪. করোনা ভাইরাসের ব্যাস: ১০০ ন্যানোমিটার।
ক্ষেত্রফল: পাই × ০.০৫ × ০.০৫ = ০.০০৭৮৫ মাইক্রন২, আয়তন: ৪/৩ × পাই × ০.০৫ × ০.০৫ × ০.০৫ = ০.০০০৫২ মাইক্রন৩ ~ ২ × ট্রানজিস্টরের আয়তন।
৫. পৃথিবীর জনসংখ্যা: ৭.৯ বিলিয়ন
৬. পৃথিবীতে স্মার্টফোনের সংখ্যা: ৬.৮ বিলিয়ন
৭. মোটামুটি মানের স্মার্টফোনে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা: ১০ বিলিয়ন
৮. আধুনিক আইফোনে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা: ১৬ বিলিয়ন
৯. গড়ে প্রতিটি মানুষের কাছে ট্রানজিস্টর আছে: ৬.৮ × ১০ / ৭.৯ = ৮.৬ বিলিয়ন।
১০. ভ্যাকুয়াম টিউব দিয়ে বানানো পুরানো দিনের রেডিও।
১১. প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার এনিয়াক।
১২. ডিজিটাল কম্পিউটারের উন্নত ভার্সন, যেখানে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়েছে: ইউনিভ্যাক ২।
১৩. বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ: ১১০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা/বছর/জনপ্রতি। গড়ে প্রতি বাড়িতে জনসংখ্যা: ৪.৩। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি বাড়ির বিদ্যুতের ব্যবহার: ১১০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা/৩৬৫/ ২৪ ~ ৫৪ ওয়াট.
১৪. মুরস ল: প্রতি দুই বছরে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়।