‘তুমি কী করবে, তা ব্যাখ্যা করো এবং টেবিল পরিষ্কার করে দাও।’ আদেশ দিলেন গবেষক।
রোবট জবাব দিল, ‘আমি রোবটিক বাহু ব্যবহার করে টেবিল পরিষ্কার করব। সে জন্য প্রথমে দেখব, স্পঞ্জ (ন্যাকড়া) তুলে নেওয়া ও টেবিল মোছার জন্য কী ধরনের গতিদক্ষতা রয়েছে; তারপর ধারাবাহিকভাবে নড়াচড়ার মাধ্যমে টেবিল পরিষ্কার করব।’
শুধু বলেই থেমে নেই। রোবটিক বাহুটি সঙ্গে সঙ্গে স্পঞ্জ তুলে নিল, তারপর মুছে ফেলল টেবিলের ওপরের তল। শুনে মনে হচ্ছে সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, তাই না? অথচ এটিই এখন বাস্তব। রোবটিক বাহুটি যে খুব ভালোভাবে কাজটা করেছে, তা নয়। তবে কাজ সম্পন্ন করেছে এটি এবং তা চলনসই। অবিশ্বাস্য বা কল্পবিজ্ঞানের এই বাস্তব রূপ কিনতে খরচও খুব বেশি পড়বে না—মাত্র ১২০ ডলার, মানে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার টাকার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি বার্কলির একদল গবেষক বানিয়েছেন এই রোবটিক বাহু। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন ওপেনএআইয়ের জিপিটি-৪০। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোবটিক বাহুর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সফলভাবে এটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন গবেষক দলের দুই সদস্য জানিক গ্রোথুসেন ও ক্যাসপার জ্যানসেন।
এ জন্য তাঁরা যে রোবটিক বাহু ব্যবহার করেছেন, তা ওপেন-সোর্স। যে সব সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারের ডিজাইন ও মূল কোড সবার জন্য উন্মুক্ত, যে কেউ তা দেখতে, পরিমার্জন বা বদলে নিতে পারে প্রয়োজনমতো এবং নতুন নকশা ও মূল কোড (Source Code) উন্মুক্ত থাকে সবার জন্য, সেগুলোই ওপেন-সোর্স। যাহোক, এই রোবটিক বাহুকে তাঁরা প্রায় ১০০ নমুনা কাজের তথ্য দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং এভাবে ‘এসিটি’ নামের একটি ফ্রেমওয়ার্কনির্ভর গতিবিষয়ক নির্দেশনা গড়ে তুলেছেন এই রোবটিক বাহুর জন্য। এসিটি (অ্যাক্টর-ক্রিটিক ট্রেনিং) ফ্রেমওয়ার্কটি আগেই ছিল। এগুলো আসলে একসেট নির্দেশনা, ধাপে ধাপে কীভাবে পুরো কাজের সময় নড়াচড়া করতে হবে, তা বলা রয়েছে এতে। এর মাধ্যমে মানুষের নড়াচড়া অনুকরণ করতে পারে রোবটিক বাহু। এর ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাজ কার্যকরভাবে করার জন্য নিজেকে উন্নতও করতে পারে। ফলাফলটা আগেই বলেছি—টেবিল পরিষ্কারই শুধু নয়, কী করছে, তা ব্যাখ্যাও করতে পারে রোবট।
এভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সহজেই ঘরে বসে বানিয়ে নেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় রোবট! রোবটিকসে এটি যে একটি যুগান্তকারী ধাপ, তা বলা বাহুল্য। আর ওপেন-সোর্সের কল্যাণে বহু মানুষ একসঙ্গে এসব নিয়ে কাজ করলে যে আরও চমৎকার সব জিনিস পাওয়া যাবে অদূর ভবিষ্যতে, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলছে
এ প্রকল্পের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এতে ব্যবহৃত এসও-১০০ রোবটিক বাহু পুরোপুরি ওপেন-সোর্স এবং অত্যন্ত কম দামী। কিনে এনে কীভাবে জুড়তে হবে, সে নির্দেশনা পাওয়া যাবে ইউটিউব এবং গিটহাবে। আর এর সঙ্গে যদি থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি জুড়ে নেন, অর্থাৎ এ রোবটিক বাহু যদি থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে নেন, তাহলে কাজটা আপনি নিজেই করতে পারবেন ঘরে বসে।
এভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সহজেই ঘরে বসে বানিয়ে নেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় রোবট! রোবটিকসে এটি যে একটি যুগান্তকারী ধাপ, তা বলা বাহুল্য। আর ওপেন-সোর্সের কল্যাণে বহু মানুষ একসঙ্গে এসব নিয়ে কাজ করলে যে আরও চমৎকার সব জিনিস পাওয়া যাবে অদূর ভবিষ্যতে, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে রোবটিকসের কাজে জিপিটি-৪০-এর ব্যবহার হয়তো খানিকটা ‘আনইউজুয়াল’ বা অপ্রচলিত ধারার, কিন্তু এটি এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ও সমাদৃত হচ্ছে। এর ফলে রোবটকে আগে থেকে প্রোগ্রাম করে দিয়ে ধরা-বাঁধাভাবে কিছু কাজ করানোর সীমাবদ্ধতি কেটে গেছে অনেকাংশে।
দিন দিন কল্পবিজ্ঞান বাস্তবে রূপ নিচ্ছে তো বটেই, এর পাশাপাশি চলে আসছে ঘরে। অবিশ্বাস্য এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। সেই ভবিষ্যৎ, যা এক সময় শুধু টিভির পর্দায় দেখা যেত।