অলিম্পিক
প্যারিস অলিম্পিকে নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হচ্ছে এবারের প্যারিস অলিম্পিকে। এসেছে নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি অলিম্পিক ইভেন্টগুলো উপভোগের অভিজ্ঞতায় যোগ করতে যাচ্ছে ভিন্নমাত্রা। পাশাপাশি আরও নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যাবে এসব ইভেন্টের ফলাফল। প্রযুক্তির দেখা মিলেছে এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও। সংক্ষেপে জেনে নিন এবারের অলিম্পিকে নতুন প্রযুক্তিগুলোর কথা।
পর্দা উঠেছে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের। গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশ সময়ে সকাল ১১টায় উদ্বোধন হয়েছে এবারের আসরের। ৩৩তম এ আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে ফ্রান্সের প্যারিসের সিন নদী ও এর চারপাশ ঘিরে। প্যারিসের পন্ট দে’অস্তারলিৎজ থেকে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত ৬ কিমি নদীপথে দেখা মিলেছে নাচ-গান ও শারীরিক কসরতের অপূর্ব প্রদর্শনী। ৪ ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে প্যারিস সেজেছিল রঙিন সাজে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী না হয়ে নদীতে হলো। সেখানেই প্রথম দেখা গেল অভিনব প্রযুক্তির খেলা।
ধাতব ঘোড়ার পিঠে চড়ে সিন নদী পাড়ি দিচ্ছেন এক নারী। প্রযুক্তির সাহায্যে ঘোড়াটিকে ছোটানো হয়েছে। পানিতে নয়, বোটের ওপর। আরোহী কিন্তু ছিলেন সত্যিকারের মানুষ। নাম তাঁর ফ্লোরিয়ান ইসার্ৎ। হাতে তাঁর পতাকা। এই দৃশ্যটিই হয়ে উঠেছে এবারের উদ্বোধনী পর্বের আইকনিক দৃশ্য। প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ দৃশ্য দেখেছে নদীর চারপাশে দাঁড়িয়ে, আশপাশ থেকে।
টিভির পর্দায় সাঁতার দেখার ক্ষেত্রে এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে দর্শকদের। সুইমিং পুলে থাকবে চারটি বিশেষ ক্যামেরা। পানির মধ্যে অ্যাথলেটদের সবরকম নড়াচড়া এই ক্যামেরার সাহায্যে ধরা পড়বে। সেগুলো চলে যাবে কম্পিউটারে।
এ তো গেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্যারিস অলিম্পিকে পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আরেকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর একটি অনুবাদ যন্ত্র (ট্রান্সলেটর)। দর্শকেরা এ যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারবেন, খুঁজে নিতে পারবেন নির্দিষ্ট স্টেডিয়াম। এ যন্ত্রের নাম রাখা হয়েছে ত্রিদিভিয়া। এ ডিভাইসের সাহায্যে মান্দারিন, হিন্দিসহ ১৬টি ভাষা অনুবাদ করা যাবে।
এবারে বিভিন্ন ইভেন্টের দিকে তাকানো যাক। টিভির পর্দায় সাঁতার দেখার ক্ষেত্রে এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে দর্শকদের। সুইমিং পুলে থাকবে চারটি বিশেষ ক্যামেরা। পানির মধ্যে অ্যাথলেটদের সবরকম নড়াচড়া এই ক্যামেরার সাহায্যে ধরা পড়বে। সেগুলো চলে যাবে কম্পিউটারে। এ পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে কম্পিউটারভিশন। এর সাহায্যে দর্শক টিভির পর্দায় অ্যাথলেটদের গতিবিধির বিশ্লেষণ দেখতে পাবেন। পাশাপাশি সেকেন্ডে কে কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করল, তখন কার হার্টবিট কত ছিল, শনাক্ত করা যাবে তা-ও।
এখানেই শেষ নয়। ধরুন একসঙ্গে ৭ জন সাঁতার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যে প্রথমে আছেন, তাঁর সঙ্গে ৭ম জনের দূরত্ব কতটুকু এবং ৭ম জন কী বেগে সাঁতার কাটছেন, তাঁর গতি আর কতটা বাড়ালে প্রথম জনকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন, জানা যাবে সে সবও। শুধু প্রথম ও শেষ জনের নয়, প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের পার্থক্য ও সংশ্লিষ্ট সব তথ্য দেখা যাবে। এতে সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখে দর্শকেরা আরও রোমাঞ্চিত হবেন।
অলিম্পিকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ডাইভিং। ডাইভ দেওয়ার সময় বোর্ড থেকে মাথা দূরে রাখতে হয়। এতদিন খালি চোখে দেখে বিচারকেরা বিচার করতেন, বোর্ডের সঙ্গে মাথা স্পর্শ করেছে কি না। কিন্তু এখন থেকে কম্পিউটারাইজড ক্যামেরার সাহায্যে দেখা যাবে মাথা ও বোর্ড স্পর্শ করেছে কি না।
দৌড়বিদদের জন্যও রয়েছে প্রযুক্তি। দৌড়ানোর ক্ষেত্রে কে প্রথমে দড়ি স্পর্শ করেছেন, সেটাই মূল কথা। কিন্তু অনেকসময় একসঙ্গে অনেকে দৌড়ে এসে দড়ি স্পর্শ করেন। ফলে খালি চোখে দেখে বোঝা মুশকিল, কে আগে দড়ি স্পর্শ করেছেন। সে জন্য এতদিন ব্যবহার করা হতো ক্যামেরা। এই ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে ১০ হাজার ফ্রেম ধরতে পারত। কিন্তু এখন নতুন প্রযুক্তির যে ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে, তা সেকেন্ডে ৪০ হাজার ফ্রেম ধরতে পারবে। পাশাপাশি ক্যামেরার পিক্সেলও উন্নত করা হয়েছে।
দর্শকেরা টিভির পর্দায় অলিম্পিক খেলা লাইভ দেখতে পারবেন ৮কে (8K) রেজ্যুলুশনে। এর আগে কখনো এত উচ্চ রেজ্যুলুশনে অলিম্পিক দেখা যায়নি। এই প্রযুক্তি সম্ভব হয়েছে ইন্টেলের চিপসেট ব্যবহার করে।
প্যারিস অলিম্পিকের পরতে পরতে এরকম নানা প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। এতে অলিম্পিক দেখা যেমন হবে আরও রোমাঞ্চকর, তেমনি বিজয়ী নির্বাচন হবে আরও সহজ, আরও নিখুঁত।