মানব মস্তিষ্কের পরিসরের শক্তিশালী এক সুপারকম্পিউটার নির্মাণ করছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। বিজ্ঞানবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল সায়েন্স অ্যালার্ট-এর তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে সক্রিয় হবে ডিপসাউথ নামের এই সুপারকম্পিউটার।
মানুষের মস্তিষ্ক প্রচণ্ড শক্তিশালী। বিস্ময়কর এক সুপারকম্পিউটার বলা যায়। প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন ও ১০০ ট্রিলিয়ন সিন্যাপ্টিক সংযোগ রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কে। শুধু তাই নয়, শক্তি ব্যবহারের দিক থেকেও এটি দারুণ কার্যক্ষম। মাত্র ২০ ওয়াটের মতো পাওয়ার (ক্ষমতা) ব্যবহার করে সেকেন্ডে এক বিলিয়ন মিলিয়ন গাণিতিক অপারেশন (যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ইত্যাদি) করতে পারে।
সেকেন্ডে ২২৮ ট্রিলিয়ন সিন্যাপ্টিক সংযোগের মতো কার্যক্ষম ও ক্ষমতাশালী এই কম্পিউটার আগামী বছরই সক্রিয় হবে বলে জানা গেছে
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ঠিক এই পরিসরের নেটওয়ার্কবিশিষ্ট কম্পিউটার নির্মাণ করছেন। সেকেন্ডে ২২৮ ট্রিলিয়ন সিন্যাপ্টিক সংযোগের মতো কার্যক্ষম ও ক্ষমতাশালী এই কম্পিউটার আগামী বছরই সক্রিয় হবে বলে জানা গেছে।
এই কম্পিউটার নির্মাণের একটি লক্ষ্য হলো, মস্তিষ্ক এত অল্প শক্তি ব্যবহার করে কীভাবে বিপুল তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে, তা বোঝার চেষ্টা করা। অর্থাৎ এটি মানব মস্তিষ্ককে আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে নেবে গবেষকদের। সঙ্গে হয়তো নির্মাণ করা যাবে মস্তিষ্কের মতো ক্ষমতাশীল সাইবর্গ মস্তিষ্ক।
ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নিউরোমোর্ফিক সিস্টেমের পরিচালক আন্দ্রে ভ্যান শাইক মনে করেন, মস্তিষ্কের মতো নেটওয়ার্ক বানাতে না পারার ফলেই মানুষ এখনো মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতি, কীভাবে নিউরন ব্যবহার করে মস্তিষ্ক এত বিপুল তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তা বুঝতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ধারার কম্পিউটারে গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ও একাধিক কোরের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউনির্ভর নিউরাল নেটওয়ার্ক অনেক ধীরগতির। এগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পাওয়ার। আমাদের কম্পিউটার সেটা বদলে দেবে বলে আশা করছি।’
অর্থাৎ এই সুপারকম্পিউটার দুটি ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। এক, নিউরোসায়েন্স গবেষণায়। আর দুই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায়
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষক র্যালফ এটিয়েন-কামিংস নিউ সায়েন্টিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নিউরোসায়েন্স বা স্নায়ুবিজ্ঞানের খোলনলচে বদলে দিতে পারে এই কম্পিউটার। তাঁর ভাষ্যে, ‘মস্তিষ্ক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার হবে এটি।’
অর্থাৎ এই সুপারকম্পিউটার দুটি ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। এক, নিউরোসায়েন্স গবেষণায়। আর দুই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায়।
ডিপসাউথ ছাড়াও এ ধরনের আরও বেশ কিছু প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্যও একই—মস্তিষ্কের কোষ কীভাবে জৈব কম্পিউটার বা মস্তিষ্ক পরিচালনা করে, তা বোঝা ও সেটা সিমুলেট করা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সময়ে সুপারকম্পিউটার ও কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গুগল, আইবিএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও গবেষণা করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈপ্লবিক ক্ষমতার কিছুটা ইতিমধ্যেই দেখেছে বিশ্ব। সামনের দিনগুলোর প্রযুক্তি নিয়ে তাই আশাবাদী হওয়াই যায়।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নিউ সায়েন্টিস্ট