রকেট সায়েন্স

বিশ্বাস করা কঠিন হলেও রকেটের ইতিহাস কিন্তু অনেক অনেক পুরোনো। সেই খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০ শতকের কথা। ওই সময়টাতে চীনের রসায়নবিদেরা বারুদ আবিষ্কার করেন। বারুদ অবশ্য শুরুতে ব্যবহার করা হতো নিছক আতশবাজি ফোটানোর কাজে। পরে দেখা গেল, আগ্নেয়াস্ত্র, বোমাসহ আরও কত কাজে লাগে এই বারুদ! এই পুরোনো ইতিহাস তাই ঠিক রকেটের না হলেও রকেট বিজ্ঞানের যে ওখানেই শুরু তা মানতেই হবে।

১৯১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট গডার্ড সর্বপ্রথম তরল জ্বালানির রকেট প্রস্তুত করেন। এতেই শুরু হয় রকেটের আধুনিক কাল। এর আগে শুধু কঠিন পদার্থই ব্যবহূত হতো জ্বালানি হিসেবে। আজ পর্যন্ত শুধু নাসাই তার কেপ ক্যাভেরাল থেকে ৫০০-এর বেশি রকেট উেক্ষপণ করেছে। সমগ্র বিশ্বে সব মিলিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উেক্ষপিত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি।

রকেটে নিউটনের সূত্র

রকেটের ইতিহাস হাজার বছরের হলেও রকেটের পেছনের বিজ্ঞান জানান দিয়েছে নিউটনের সূত্র। ১৬৮৭ সালে প্রকাশিত ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকায় প্রকাশ হয় সব বস্তুর গতির বিবরণ দেওয়া তিনখানা সূত্র।

প্রথম সূত্র: ‘বাইরে থেকে বল না দিলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে আর গতিশীল বস্তু চলতেই থাকবে।’ বল প্রয়োগের আগে রকেটও স্থির থাকে। কেউ বা কোনো কিছু না থামানো পর্যন্ত চলতেই থাকে মহাশূন্যে।

দ্বিতীয় সূত্র: যে বস্তুর ভর বেশি, তার বেগের পরিবর্তন করতে তত বেশি বল দিতে হবে। রকেটের বিস্ফোরণে চাপ থেকেই আসে বল। এর ধাক্কার ফলেই রকেটের বেগ বাড়ে। প্রপেল্যান্ট পুড়তে পুড়তে ভর কমে আসে। বেগও তাই বাড়তে থাকে।

তৃতীয় সূত্র: এটাই মূল সূত্র। ‘প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।’ রকেট নিক্ষিপ্ত হলে এর ইঞ্জিন থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। আর তার ধাক্কায় রকেট ছুটে যায় উল্টো দিকে। যেভাবে লাফ দিলে নৌকা বা গুলি করলে বন্দুক পেছনে ছুটে আসে।

তরল জ্বালানির রকেট কীভাবে কাজ করে

রকেট শব্দটা শুনলেই আমাদের মনে হয়, ওই বুঝি আকাশের কোণ দিয়ে পাইপের মতো কিছু একটা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ছুটে চলেছে! তবে গাড়ি বা জেট প্যাকও (পিঠে গ্যাস ব্যাগ ঝুলিয়ে শূন্যে ভাসার কৌশল) হতে পারে রকেটের উদাহরণ। সব রকেটেরই মূল গঠন প্রায় একই রকম। দেখতে নলের মতো। থাকবে প্রপেল্যান্ট (জ্বালানি ও জারক পদার্থ)। এক বা একাধিক ইঞ্জিন, স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ যন্ত্র গ্যাসের প্রসারণ ও ত্বরণ প্রদানের জন্য নজল।

মুক্তি বেগ

রকেট কীভাবে নিক্ষিপ্ত হয়?

ওপরের দিকে কোনো কিছু ছুড়ে মারলেই তো সেটি নিচে নেমে আসে। কিন্তু ছুড়ে মারার বেগ যদি হয় সেকেন্ডে প্রায় সাত মাইল (১১.২ কিমি), তাহলে সেটি আর ফিরবে না পৃথিবীর বুকে। খাড়া ওপরে না ছুড়ে বাঁকা করে একট বস্তু ছুড়লে সেটা পরাবৃত্তাকার পথ অনুসরণ করে একটু দূরে গিয়ে নীচে পড়বে। আরও জোরে ছুঁড়লে এই পাল্লাটা আরও বড় হবে। একটি নির্দিষ্ট বেগে মারলে সেটি আর মাটিতে নামবেই না। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকবে। খুঁজে পাবে একটি কক্ষপথ। পরিণত হবে একটি কৃত্রিম উপগ্রহে। উপগ্রহ নিক্ষেপের সময় তাই ন্যূনতম এই বেগটি দিতেই হয়। ছবিতে বিভিন্ন বেগে নিক্ষিপ্ত বস্তুর কক্ষপথ।