মহাবিশ্বের সব নক্ষত্রের জীবনকাল শুরু হয় গ্যাসের মেঘ থেকে। একে বলে নেবুলা বা নীহারিকা। মহাকর্ষীয় আকর্ষণে এসব গ্যাসের কণা পরস্পরের কাছে এসে একটি গুচ্ছ তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। যত বেশি গ্যাস গুচ্ছবদ্ধ হতে থাকে, তার মহাকর্ষীয় টানও ততই বাড়তে থাকে। পাশাপাশি তার চাপও তৈরি হতে থাকে এবং সেই সঙ্গে বাড়ে তাপমাত্রাও। গ্যাসের গুচ্ছ যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নক্ষত্রটিতে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। এ সময় তার ভেতরের পরমাণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারী মৌল তৈরি করতে থাকে (যেমন হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম পরমাণু)। এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন। পরমাণু থেকে এ প্রক্রিয়ায় বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে (আইনস্টাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র অনুযায়ী বেরিয়ে আসে এই শক্তি)। এতে শিশু নক্ষত্রটি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মহাকর্ষ বল নক্ষত্রটিকে ভেতরের দিকে টানতে থাকে, অন্যদিকে বিস্ফোরিত গ্যাস তাকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয়। এই দুই বিপরীত বলকে ভারসাম্যে আনে নক্ষত্রটির বিপুল আকারের এই পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে। জ্বালানির মাধ্যমে নক্ষত্রটি জ্বলতে থাকে। তবে জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে থাকলে এই ভারসাম্যও একসময় নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। এতে নক্ষত্রটি প্রথমে প্রসারিত হয়, এমনকি মাঝেমধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়েও যেতে পারে। এরপর তাদের জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে তারা সংকুচিত হয়ে যায়।
পটভূমি
নক্ষত্ররা হলো মহাবিশ্বের এক একটি বিপুল আকৃতির ইঞ্জিনের মতো। এদের কোনো কোনোটির তাপমাত্রা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশি। নক্ষত্রদের ভেতরে প্লাজমা স্যুপের মতো অতিপারমাণবিক কণারা ঘুরপাক খেতে থাকে। এর ভেতরের মহাকর্ষের টান এতই বেশি যে সেখানে পরমাণুদেরও চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ভারী পরমাণুতে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় শক্তি বিকিরিত হয়। কোনো অতি ভরের নক্ষত্রের মৃত্যু হলে সুপারনোভা বিস্ফোরণের এসব মৌল কণা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে গ্যাস ও ধূলিকণার একটি মেঘের সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে অন্য আরও নক্ষত্রের জন্ম হতে পারে।
ভারী মৌল
নক্ষত্র গঠনের শুরুতে সেখানে শুধু হাইড্রোজেন থাকে। পর্যায় সারণির অন্য মৌল পদার্থগুলো আসে এই নক্ষত্র থেকেই। বিভিন্ন নক্ষত্র বিভিন্ন ধরনের মৌল তৈরি করে। কিছু কিছু নক্ষত্র হাইড্রোজেন থেকে শুধু হিলিয়ামই তৈরি করে। তবে অতিভারী নক্ষত্রগুলো পরমাণুদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে লোহার মতো ভারী মৌলও তৈরি করতে পারে।
তবে কোনো নক্ষত্র একবার লোহা তৈরি করলে সমস্যা শুরু হয়। কারণ, যত ভারী মৌল তৈরি হবে ততই নক্ষত্রটি তার উৎপাদিত শক্তির তুলনায় বেশি শক্তি ব্যবহার করে ফেলে। কাজেই মহাকর্ষ বলকে ঠেকাতে নক্ষত্রটি আর যথেষ্ট উত্তাপ তৈরি করতে পারে না। তাতে তার ভেতরের দিকের মহাকর্ষের টানের সঙ্গে বাইরের দিকের টানের কোনো ভারসাম্য থাকে না। ফলে এর কেন্দ্র সংকুচিত হয়ে নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয়। এতে বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে, যে শক্তির ব্যবহার করে হয়তো লোহা বা অন্য কোনো মৌল তৈরি করতে পারত। এ বিস্ফোরণে তৈরি হওয়া ভারী মৌলগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধূলিকণার মেঘের সৃষ্টি করে। এখান থেকেই আবার নতুন প্রজন্মের নক্ষত্র বা গ্রহ গঠিত হতে পারে।