সূর্যের মূল জ্বালানি হাইড্রোজেন ইতিমধ্যে অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। তবে বাকি যে হাইড্রোজেন সূর্যের বুকে আছে, তা দিয়ে আরও ৫০০ কোটি বছর চলতে পারবে।
পৃথিবীর শক্তির প্রধান উৎস সূর্য। সূর্যের কারণে আমরা আলো ও তাপ পাই। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, সূর্যের বেশিরভাগটাই হাইড্রোজেন। প্রায় ৭৩ শতাংশ। বাকি ২৫% হিলিয়াম ও ২% অন্যান্য মৌল। এ নক্ষত্রের কেন্দ্রে নিরন্তর ঘটে চলেছে পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন পরিণত হয় হিলিয়ামে। আর এ সময় বেরিয়ে আসে বিপুল শক্তি।
সূর্যের মূল জ্বালানি হাইড্রোজেন ইতিমধ্যে অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। তবে বাকি যে হাইড্রোজেন সূর্যের বুকে আছে, তা দিয়ে আরও ৫০০ কোটি বছর চলতে পারবে। কাজেই, আপনার চিন্তার কিছু নেই। তবু প্রশ্ন আসে, এরপর সূর্যের পরিণতি কী হবে?
আসলে সূর্যের ভেতরে ফিউশন বিক্রিয়া চলার কারণে বাইরের দিকে চাপ সৃষ্টি হয়। আবার সূর্যের মহাকর্ষের কারণে কেন্দ্রের দিকেও একটি বল কাজ করে। ফলে বাইরের দিকে ছিটকে যেতে পারে না এর ভেতরের পদার্থগুলো, আবার সংকুচিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে না নিজের ওপরে। স্থিতিশীল থাকে। এ কারণেই সূর্য গোলাকার।
একসময় সূর্যের বাইরের আবরণ আর ধরে রাখার ক্ষমতা থাকবে না। বাইরের অংশ গ্যাস ও ধূলিকণা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। আর সূর্য পরিণত হবে ছোট্ট শ্বেত বামন বা হোয়াইট ডোয়ার্ফে।
কিন্তু সূর্যের ভেতরের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে বাইরের দিকের চাপের তুলনায় সূর্যের মহাকর্ষের চাপ বেড়ে যাবে। সূর্য সংকুচিত হতে থাকবে। ফলে তাপমাত্রা বাড়বে। এ অবস্থায় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম পরিণত হবে কার্বনে। তখন সূর্যের আকার আবার বড় হবে। অনেক, অনেক বড় গোলকে পরিণত হবে সৌরঅধিপতি। তখন সে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। এ অবস্থায় সূর্য বুধ ও শুক্রকে গ্রাস করবে। এমনকি পৃথিবীও পড়তে পারে সূর্যের কোপানলে। এভাবে ধীরে ধীরে সূর্য পরিণত হবে রেড জায়ান্ট বা লাল দানব নক্ষত্রে।
এ অবস্থায় এসে সূর্যের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের ভেতরে থাকা বাকি হিলিয়াম ফুরিয়ে যাবে। তখন সূর্য মহাকর্ষের টানে আবার ছোট হতে থাকবে। একসময় সূর্যের বাইরের আবরণ আর ধরে রাখার ক্ষমতা থাকবে না। বাইরের অংশ গ্যাস ও ধূলিকণা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। আর সূর্য পরিণত হবে ছোট্ট শ্বেত বামন বা হোয়াইট ডোয়ার্ফে। এ সময় সূর্য অবিশ্বাস্য ঘন অবস্থায় থাকবে। তখন সূর্যের আকার হবে প্রায় পৃথিবীর সমান। কতটা কমবে তখন সূর্যের আকার? বর্তমান আকারটা বললেই বুঝবেন। বর্তমানে সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩ লাখ গুণ বড়।
ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার মতো যথেষ্ট ভর আমাদের সূর্যের নেই। ব্ল্যাকহোল তো দূরের কথা, নিউট্রন নক্ষত্রেও পরিণত হতে পারবে না সূর্য।
শ্বেত বামন থেকে কি সূর্য ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে পারবে? এক কথায় সহজ উত্তর হলো, না। ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার মতো রসদ নেই সূর্যের। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের পদার্থবিজ্ঞানী ও কৃষ্ণগহ্বরবিশেষজ্ঞ জেভিয়ার ক্যালমেট। তিনি বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার মতো ভারী নয় সূর্য।’
একটি নক্ষত্র ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে কি না, তা বেশ কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করে। যেমন নক্ষত্রের গঠন, ঘূর্ণন, ভর ইত্যাদি। কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে হলে নক্ষত্রের প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ভর হতে হয় আমাদের সূর্যের ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি। যে নক্ষত্রগুলো অতটা বেশি ভর নিয়ে জন্মায়, সেগুলোই শেষ পর্যায়ে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে পারে। তবে কিছু কিছু ভারী নক্ষত্রও কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয় না। বিস্ফোরিত হয় সুপারনোভা হিসেবে। অথবা নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয় এসব নক্ষত্র। কিংবা শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হয়ে নিরামিষভাবে কাটিয়ে দেয় বাকি জীবন।
অর্থাৎ, ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার মতো যথেষ্ট ভর আমাদের সূর্যের নেই। ব্ল্যাকহোল তো দূরের কথা, নিউট্রন নক্ষত্রেও পরিণত হতে পারবে না সূর্য। আমাদের সৌরজগতের এই অধিপতির শেষ জীবন কাটবে নিরিবিলি এক শ্বেত বামন হিসেবে।
লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নাসা