রোববার রাতে হবে উল্কাবৃষ্টি, কীভাবে দেখবেন

প্রতি বছর আকাশে যেসব উল্কাপাতের দৃশ্য দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এই পারসেইড উল্কাবৃষ্টি

প্রতি বছর জুলাই-আগস্টে সাধারণত পারসেইড উল্কাবৃষ্টির দেখা যায়। চলতি বছর এই এই উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে ১১ আগস্ট, রবিবার রাত থেকে ১২ আগস্ট, সোমবার সকাল পর্যন্ত।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে হলে শহর থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায় যেতে হবে। কারণ, শহরে আলোক দূষণ অনেক বেশি। মূলত শহরের বাইরে কোনো গ্রামে কিংবা অন্ধকার কোনো খোলা জায়গা বা নদীর পাড় হতে পারে উল্কাবৃষ্টি দেখার চমৎকার জায়গা।

কিছু উল্কাপাত এখনই দেখা যাচ্ছে। তবে ১১ তারিখ রাত থেকে ১২ তারিখ সকাল পর্যন্ত আরও বেশি ও ভালোভাবে দেখা যাবে এ উল্কাবৃষ্টি। বাংলাদেশ থেকে আজ রাত ১০টায় দেখতে পারেন এ মনোরম দৃশ্য। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় গড়ে ১০০টি উল্কা খালি চোখে দেখার কথা জানিয়েছে নাসা।

কেউ যদি সরাসরি খালি চোখে এই উল্কাবৃষ্টি দেখতে না পারেন, তাহলে এই দুটি লিংকে গিয়ে লাইভ উল্কাবৃষ্টি দেখতে পারেন। ইউটিউব লিংক: দ্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্ট ও ওয়েবসাইট লিংক: দ্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্ট ২.

আরও পড়ুন
পারসেইড উল্কাবৃষ্টির হওয়ার পেছনের মূল কারণ হলো সুইফট-টাটল ধূমকেতু। ধূমকেতুটি ১৮৬২ সালে লুইস সুইফট এবং হোরেস টাটল নামে দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। সুইফট-টাটল ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসা সবচেয়ে বড় মহাকাশীয় বস্তুগুলোর মধ্যে একটি।
পার্সিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলের নাম অনুযায়ী এর এমন নামকরণ করা হয়েছে

তবে চাঁদের জ্যোৎস্নার কারণে এ মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগে কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে। কারণ, এ সময় চাঁদ ৫৩ ভাগ উজ্জ্বল থাকবে। মানে চাঁদ পূর্ণিমার সময়ের মতো এত উজ্জ্বল না হলেও বেশ উজ্জ্বল থাকবে। এতে দেখা দিতে পারে কিছুটা সমস্যা। এ কারণে চাঁদ অস্ত যাওয়ার পর থেকে ভোর পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে উল্কাবৃষ্টি ভালো দেখা যাবে।

প্রতি বছর আকাশে যেসব উল্কাপাতের দৃশ্য দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এই পারসেইড উল্কাবৃষ্টি। মহাকাশে অনেক ভাসমান ধূমকেতু ও গ্রহাণু আছে, এ  কথা সবার জানা। যখন এই  গ্রহাণু ও ধূমকেতু বা মহাকাশীয় বস্তুর ছোট ছোট টুকরা পৃথিবীর দিকে ছুটে এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন ঘর্ষণের ফলে জ্বলে উঠে। এই জ্বলন্ত টুকরোগুলোকেই আমরা উল্কা বলি। আর যখন একসঙ্গে অনেকগুলো উল্কা আকাশে আলোকিত হয়ে ওঠে, তখন সেই দৃশ্যটিকেই বলি উল্কাবৃষ্টি।

সাধারণত উল্কাবৃষ্টির নামকরণ করা হয় যে নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে উল্কাগুলো আসছে বলে মনে হয়, সেই নক্ষত্রমণ্ডলীর নামে। পারসেইড উল্কাবৃষ্টি তেমই একটা নাম। পার্সিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলের নাম অনুযায়ী এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু পার্সিয়াস নক্ষত্রমণ্ডল উত্তর দিকে অবস্থিত, তাই আকাশের উত্তর-পূর্ব দিকে উল্কাবৃষ্টি তুলনামূলক বেশি দেখা যাবে। আকাশের অন্যন্য অংশেও দেখা যাবে তবে তুলনামূলক একটু কম।

এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডগলাস সি লিওনার্ডের বলেছেন, ‘উল্কাবৃষ্টি ভালোভাবে দেখতে হলে যতটা সম্ভব আলো থেকে দূরে যেতে হবে এবং খোলা আলোহীন প্রান্তে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপেক্ষা করতে হবে।’

সাধারণত উল্কাবৃষ্টির নামকরণ করা হয় যে নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে উল্কাগুলো আসছে বলে মনে হয়, সেই নক্ষত্রমণ্ডলীর নামে। পারসেইড উল্কাবৃষ্টি তেমই একটা নাম। পার্সিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলের নাম অনুযায়ী এর এমন নামকরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন

পারসেইড উল্কা প্রতি ঘন্টায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ কিলোমিটার গতিতে মহাকাশে ছুটে চলে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর এর গতি কমে হবে সেকেন্ডে প্রায় ৫৯ কিলোমিটার। এই গতিতে বায়ুমণ্ডের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে আগুন জ্বলে ওঠে। ফলে আমরা আকাশে উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখতে পাই। তবে উল্কার আকার বেশি ছোট হওয়ায় তা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের পড়ার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এগুলোর আকার প্রায় বালুর কণার মতো। তবে এই উল্কা আকার যদি বেশি বড় হয় তাহলে ভূপৃষ্ঠে পড়ার আগে  তা পুড়ে শেষ হতে পারে না। তখন উল্কাপিণ্ড আকারে পৃথিবীতে পড়ে।

প্রতি ঘন্টায় গড়ে ১০০টি উল্কা খালি চোখে দেখার কথা জানিয়েছে নাসা
ছবি: নাসা

ডাইনোসর ধ্বংসের জন্যও দায়ী করা হয় বিশাল আকারের উল্কাপিণ্ডকে। তবে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ পৃথিবী থেকে ৯৭ কিলোমিটার ওপরে থাকা অবস্থায় পারসেইড উল্কা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। তখন পৃথিবী থেকে শুধু আলোই দেখা যায়। তবে এ উল্কার তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। ১ হাজার ৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হতে পারে পারসেইড উল্কার তাপমাত্রা।

পারসেইড উল্কাবৃষ্টির হওয়ার পেছনের মূল কারণ হলো সুইফট-টাটল ধূমকেতু। ধূমকেতুটি ১৮৬২ সালে লুইস সুইফট এবং হোরেস টাটল নামে দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। সুইফট-টাটল ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসা সবচেয়ে বড় মহাকাশীয় বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। প্রায় ২৬ কিলোমিটার প্রশস্থ ছিল ধূমকেতুটি। সবশেষ এটি পৃথিবীর কাছে এসেছিল ১৯৯২ সালে। এটি আবার পৃথিবীর কাছে আসবে ২১২৬ সালে। তখন অবশ্য ধূমকেতুটি এতটা উজ্জ্বল হবে যে খালি চোখেই দেখা যাবে। দূর্ভাগ্যবশত, তখন আমরা কেউই তা দেখতে পারবো না। হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবে।

সূত্র: স্পেস ডটকম, ফোর্বস, দ্য গার্ডিয়ান, নাসা, উইকিপিডিয়া

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

আরও পড়ুন