পৃথিবী ও আকাশ
পৃথিবীর আকার কেমন
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। খোঁজার চেষ্টা করেছে আকাশ ও পৃথিবীর সম্পর্ক। পৃথিবী ও আকাশ নামের এই বইয়ে সেই সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোটদের জন্য, সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ থেকে। আলেকজান্ডার ভলকভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন সমর সেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
প্রথম খণ্ড
পৃথিবীর আকার
স্কুলের ছেলেমেয়ে সবার জানা পৃথিবী গোল, চেহারাটা বলের মতো, আর মহাশূন্যে তার সফরের পথটা কেমন।
অনেক দিন আগে লোকে ভাবত, পৃথিবী আকারে চ্যাপ্টা চাকতির মতো বা একটু উত্তল (প্রাচীন যোদ্ধাদের বর্ম গোছের), কিছু একটার ওপর ভর করে আছে। কীসের ওপরে ভর করে আছে, তা নিয়ে নানা মুনির ছিল নানা মত।
প্রাচীন ভারতের লোকেরা ভাবত পৃথিবী একটা গোলার্ধ, জিনিসটা ভর দিয়ে আছে চারটি দিগহস্তীর ওপর, আর দিগহস্তীগুলো দাঁড়িয়ে থাকে বিরাট একটা কূর্মের ওপর। কূর্মটি কীসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, সে নিয়ে তারা মাথা ঘামিয়েছে বলে মনে হয় না। আগের দিনে রাশিয়ায় জ্ঞানপিপাসু কোনো বাচ্চা ছেলে হয়তো জিজ্ঞেস করল:
‘দাদু, পৃথিবীকে ধরে আছে কী?’
‘তিমি, ভাইয়া, ইয়া বড় বড় তিমি,’ উত্তর দিতেন দাদু। ‘তিমিগুলো লেজ নাড়ালেই ভূমিকম্প।’
‘তিমিগুলো কীসের ওপরে ভর করে আছে, দাদু?’
‘ভাইয়া, ওগুলো তো থাকে জলে।’
‘আর জলের নিচে কী?’
‘পৃথিবীর মাটি।’
‘তাহলে পৃথিবী কীসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে?’
‘তোর মতো বোকা আর দেখিনি। বলেছি তো, পৃথিবী তিনটে তিমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে...’
এ যুক্তির শেষ কখনো হবে না।
পৃথিবী টেবিলের ওপরের মতো চ্যাপ্টা, অনেক দিন যে লোকে এটা ভাবত, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক হওয়ার কথা হলো, মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে আমাদের গ্রহের সত্যিকার আকার বের করতে পারে। অবশ্য এটা করতে হাজার হাজার বছর কেটে যায়, লোকে যখন সমুদ্রে এবং স্থলপথে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করে, তখন ব্যাপারটা বোঝা সহজতর হয়।
লোকে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ শুরু করে এত দিন আগে যে প্রথম যাত্রাগুলোর কথা কোনো ইতিহাস বলতে পারবে না। দাবানল, বন্যা, ক্ষুধা, উত্তর থেকে নেমে-আসা বরফ, মরুভূমি থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে-পড়া বালি, ইত্যাদির কারণে মানুষে বাধ্য হয় স্থান পরিবর্তনে...
আদিম মানুষের যাত্রা এত মন্থর ছিল যে সেটাকে ভ্রমণ না বলে দেশান্তর যাত্রা বলাই উচিত। যা-ই হোক, অনেক বছরব্যাপী এসব যাত্রায় লোকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিবাহিত করত। ইতিহাসের পরের যুগে মানুষ পণ্য বিনিময়ের জন্য যেত অন্য জায়গায়। তলোয়ার, ছুরি ও ধাতুর শক্ত পাত্রের বদলে শিকারীরা দিত জন্তু-জানোয়ারের চামড়া, যারা চাষ করত তারা কাপড়, সুন্দর ব্রেসলেট ও গলার হারের বদলে দিত খাদ্যশস্য। গোটা একটা উপজাতির পক্ষে এ পণ্য বিনিময়ে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ লোকে যেত এক দেশ থেকে অন্য দেশে ব্যবসার জন্য। এরা ছিল সওদাগর। আগের দিনের সওদাগররা ছিল সাহসী উদ্যোগী লোক; প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চালাতে হতো তাদের, বুনো জন্তুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে হতো; সম্পদলোভী হামলাদারদের বিরুদ্ধেও লড়াই চালাতে হতো।
আদিম মানুষের যাত্রা এত মন্থর ছিল যে সেটাকে ভ্রমণ না বলে দেশান্তর যাত্রা বলাই উচিত। যা-ই হোক, অনেক বছরব্যাপী এসব যাত্রায় লোকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিবাহিত করত। ইতিহাসের পরের যুগে মানুষ পণ্য বিনিময়ের জন্য যেত অন্য জায়গায়।
স্থলপথে দীর্ঘ যাত্রায় বেরোত সওদাগররা, সমুদ্র পাড়ি দিত ছোট ছোট জাহাজে। প্রায় সাত শ বছর আগে ইতালীয় সওদাগর মার্কো পোলো ইতালির ভেনিস শহর থেকে ভ্রমণ করে যান চীনে। তিনি যান স্থলপথে, উত্তুঙ্গ পাহাড় আর সীমাহীন মরুভূমি পেরিয়ে, ফেরেন জলপথে, দক্ষিণ এশিয়ার উপকূল বরাবর।
মার্কো পোলো যখন ভেনিস ছাড়েন, তখন তিনি কিশোর; আর ফিরে আসেন মধ্য বয়সে। চব্বিশ বছর দেশছাড়া ছিলেন তিনি। চীনে কাটান সতেরো বছর, সেখানে যাওয়ার আর ফেরার পথে কাটে সাত বছর।
ভেনিসে ফিরে এসে বহু দিন বেঁচে থাকেন মার্কো পোলো। তখনকার চীনের জীবনযাত্রা নিয়ে বড় একটা বই লেখেন তিনি।
দু শ বছর পরে ত্ভের-এর রুশ সওদাগর আফানাসি নিকিতিন যান প্রাচ্যে। উত্তর রাশিয়া থেকে পারস্য হয়ে তিনি যান ভারতে। ‘তিন সমূদ্র পাড়ি’ নামের একটি মনোগ্রাহী বইতে নিজের যাত্রার কথা লিখেছেন তিনি। ভারতে পৌঁছাতে ছয় বছর লাগে নিকিতিনের।
তখনকার দিনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে অনেক সময় লাগত। আজকাল যেখানে হপ্তাখানেক বা দুয়েক লাগে, তখন সেখানে পৌঁছাতে বছরের পর বছর কেটে যেত। দ্রুতগামী উড়োজাহাজ, রেলওয়ে বা বাষ্পপোত তো ছিল না। স্থলে সওদাগরদের বাহন ছিল ঘোড়া বা উটের ক্যারাভান, সমুদ্রে খুদে জাহাজ।
তবু অনেক লোক দীর্ঘ যাত্রায় বেরোত। সে সব যাতার স্মৃতি অবলুপ্ত হয়ে যেত অবিলম্বে, কেননা মার্কো পোলো এবং আফানাসি নিকিতিনের মতো নিজেদের এ্যাডভেঞ্চারের কথা লিখে রাখতে পারে, এমন লোক বেশি ছিল না। দূর দেশে যাত্রার ফলে লোকে পৃথিবীর বিষয়ে আরও ভালো করে, বিশদভাবে জানল। দেখা দিল পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মানচিত্র—অবশ্য এগুলো অনেক দিনই নিখুঁত বা সম্পূর্ণ ছিল না।
আজকালকার মানচিত্রে লাইনের একটা ঘন বুনোট চোখে পড়ে—দ্রাঘিমা ও অক্ষাংশ রেখা। গোলকে যেকোনো বিন্দুর অবস্থান ঠিক করতে আমাদের সাহায্য করে লাইনগুলো। ডিগ্রিতে নির্দিষ্ট লাইনগুলো বের করা হয় আঠারো শ বছরেরও আগে।
ধরো ১৩ পাতার মানচিত্রটা। দু হাজার বছরেরও আগে এটা আঁকেন এক ভূগোলবিদ। পৃথিবীকে চ্যাপ্টা একটা চাকতির মতো দেখানো হয়েছে, যেন খাবার প্লেট, শুকনো ডাঙা ঘিরে আছে ওসেনাস নদী। ডাঙার মাঝখানে বড় একটা সমুদ্র—এমনকি পুরাকালেও লোকে ভালো করে জানত সমুদ্রটিকে: একে পাড়ি দিত সওদাগর, যুদ্ধ জাহাজ, জলদস্যু। এর নাম ভূমধ্যসাগর, মেডিটেরানিয়ান; লাতিন শব্দ মেডিয়াস—মধ্য; এবং টেরা—ভূমি থেকে কথাটার উৎপত্তি। লোকে ভাবত, এটার অবস্থিতি পৃথিবীর মধ্যভাগে। এখন সবাই জানে কথাটা ঠিক নয়, তবু নামটা টিকে আছে।
আজকালকার মানচিত্রে লাইনের একটা ঘন বুনোট চোখে পড়ে—দ্রাঘিমা ও অক্ষাংশ রেখা। গোলকে যেকোনো বিন্দুর অবস্থান ঠিক করতে আমাদের সাহায্য করে লাইনগুলো। ডিগ্রিতে নির্দিষ্ট লাইনগুলো বের করা হয় আঠারো শ বছরেরও আগে। গ্রিসের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি ভূগোল বিষয়ে সব খবর সংগ্রহ করে পৃথিবীর একটি মানচিত্র তৈরি করেন—গ্রিক এবং তাদের প্রতিবেশীরা পৃথিবীকে যা ভাবত, সেই পৃথিবীর মানচিত্র।
মানচিত্রে আছে ইউরোপের সবটা (উত্তরাংশ বাদে), উত্তর আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেকখানি।
টলেমি সঠিক ধরেছিলেন যে পৃথিবী একটি গোলক, এর চারপাশে মহাশূন্য।
শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেল, প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাজের কথা লোকে ভুলে গেল, হারিয়ে গেল তাঁদের লেখা; আবার লোকে ভাবতে শুরু করল যে পৃথিবী চ্যাপ্টা আর ধর্মভাবাপন্ন ভূগোলবিদরা মৃত সন্তদের স্থান হিসেবে স্বর্গ বসাল মানচিত্রে। স্বর্গ জায়গাটা তারা নির্দিষ্ট করল এশিয়া মাইনরে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে।
পনেরো শতকের শেষার্ধে সমুদ্রপথে দীর্ঘ যাত্রা শুরু হলো লোকের। প্রথম সব সমুদ্রযাত্রীদের শুনতে হলো যে তাদের এ সব পরিকল্পনা পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। জোর দিয়ে তাদের বোঝানো হলো যে পৃথিবী চ্যাপ্টা, ওসেনাস নদী পৃথিবীর প্রান্তদেশ ঘিরে বিরাট একটা জলপ্রপাতে পড়েছে অতল গহ্বরে। পৃথিবীর প্রান্তদেশে পৌঁছালে জাহাজ সে গহ্বরে পড়ে বিনষ্ট হবে।
কিন্তু তখনো এমন সব পণ্ডিত ছিলেন, যাঁরা প্রাচীন টলেমির মতো বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী বলের মতো গোল, প্লেটের মতো চ্যাপ্টা নয়।
দূরযাত্রার বিরোধিতা যারা করত, তারা বলত, ‘বেশ, মেনে নিলাম যে পৃথিবী গোল। কিন্তু ওপর থেকে নিচে নামলে জাহাজটা আর উঠে ফিরে আসতে পারবে না!’
শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেল, প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাজের কথা লোকে ভুলে গেল, হারিয়ে গেল তাঁদের লেখা; আবার লোকে ভাবতে শুরু করল যে পৃথিবী চ্যাপ্টা আর ধর্মভাবাপন্ন ভূগোলবিদরা মৃত সন্তদের স্থান হিসেবে স্বর্গ বসাল মানচিত্রে। স্বর্গ জায়গাটা তারা নির্দিষ্ট করল এশিয়া মাইনরে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে।
এদের ভুলটা কোথায়? এরা ভাবত যে তারাই যেন পৃথিবীর একেবারে চূড়ায় আছে, আছে একটা পাহাড়ের ওপরে।
ছোট একটা গল্প বলি।
একদা ঊর্ধ্ব পৃথিবীর গ্রামে থাকত দুই বন্ধু। তাদের নাম ঘরকুনো আর যাত্রী।
ঘরকুনো অগ্নিকুণ্ডের পাশে বসে আছে, কিন্তু বিচিত্র দেশের সফরে বেরোবে যাত্রী, তার ইচ্ছে পৃথিবী চক্কর দেওয়া। ঘরকুনো সাংঘাতিক সব বিপদের কথা তুলে বন্ধুকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল।
‘তুমি যাচ্ছ পৃথিবীর তলাকার জায়গায়,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ঘরকুনো, ‘সেখান থেকে পড়ে যাবে আকাশে।’
যাত্রীর বুকের পাটা ছিল।
‘তবু যাচ্ছি, ভাই,’ সে বলল। ‘তিন বছরের মধ্যে না ফিরলে ধরে নিও মরে গিয়েছি...’
যাত্রী চলল তো চলল—কত শহর, কত দেশ পেরোল; সে বরাবর চলল একদিকে। যেখানে যায়, সেখানেই পায়ের নিচে মাটি, মাথার ওপরে আকাশ। হয়তো পৃথিবী থেকে আকাশে পড়ে গেলে তার ভালোই লাগত। কিন্তু আকাশে কী করে পড়া যায়? সর্বদা তো সেটা মাথার ওপরে।
‘আমরা কী বোকা,’ যাত্রী ভাবল, ‘আমাদের ছোট্ট গ্রামটার নাম দিয়েছি ঊর্ধ্ব পৃথিবী। এখন তো মনে হচ্ছে সব জায়গাই পৃথিবীর ওপরদিকে। ঘরকুনোকে কথাটা জানালে অবাক হয়ে যাবে সে।’
দেড় বছর কেটে যাওয়ার পর যাত্রী হিসেব করল যে এত দিনে পৃথিবীর বিপরীত দিকে এসে পড়েছে।
‘খাসা ব্যাপার,’ বলে উঠল সে। ‘ঘরকুনো আর আমার পা এখন মুখোমুখি, আর দুজনের মাথা উল্টোদিকে।’ ঘরকুনোর সঙ্গে তর্কে জিতেছে বলে সে এত খুশি যে আরও তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করল আর বাড়ি পৌঁছাল তিন মাস আগে।
ঘরকুনো বরাবর অগ্নিকুণ্ডের পাশে বসে যাত্রী যে পথে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে, সে দিকে তাকিয়েছিল বিষন্নমুখে। প্রথম প্রথম বন্ধু ফিরে আসার ভরসা ছিল, কিন্তু পরে সব আশা উবে যায়।
‘জানতাম ও পৃথিবী থেকে পড়ে যাবে,’ প্রতিদিন বিষন্নভাবে সে বলত। কিন্তু যাত্রী ঘরে ফিরে এল নিরাপদে, সুস্থ দেহে, খোশ মেজাজে। যে রাস্তা ধরে তার যাত্রা শুরু, তার অন্য মোড় ধরে ফিরে এল।
তখন ঘরকুনোর বিশ্বাস হলো যে পৃথিবী গোল, লোকেরা পা মুখোমুখি আর উল্টো দিকে মাথা রেখে বাঁচতে পারে [পৃথিবীর দুই প্রান্তে বসবাসরত মানুষের কথা ভাবলে, প্রত্যেকের পা-ই মাটিতে, মানে মুখোমুখি]। ফলে গ্রামের নাম বদলানো হলো—ঊর্ধ্ব পৃথিবী নয়, সাধারণ গ্রাম।
এ গল্পের কোনটা সত্যি আর কোনটা কল্পনাপ্রসূত?
এটা সত্যি যে পৃথিবী গোল, পুবদিকে সরাসরি সোজা চলতে থাকলে যাত্রা শুরুর জায়গায় ফিরে আসবে, কিন্তু আসবে পশ্চিম থেকে।
এটা সত্যি যে পুরোনো দিনে অনেকে ভাবত তারা আছে পৃথিবীর ‘ঊর্ধ্বাংশে’, ‘তলাকার অংশে’ গেলে বিপদের সীমা থাকবে না।
ল্যাকটানটিয়াস নামের এক লেখক একদা লেখেন: ‘মাথা নিচের দিকে আর পা ওপরে রেখে লোকে হাঁটে, আমাদের পৃথিবীর সব কিছু শূন্য থেকে লম্বমান, সে দেশে ঘাস আর গাছ গজায় নিচের দিকে, বৃষ্টি আর শিলা পড়ে ওপর দিকে, এটা ভাবার মতো অপ্রকৃতিস্থমনা কেউ থাকা সম্ভব?’
বিশ্রামের সময় পড়ার জন্য ল্যাকটানটিয়াসের বই ঝোলাতে নিয়ে বেরোলে পৃথিবীর বিপরীত প্রান্তে পৌঁছে আমাদের যাত্রী লেখকপ্রবরকে নিয়ে বেশ একচোট হেসে নিতে পারত। ল্যাকটানটিয়াস লেখক ছিলেন বটে, কিন্তু অজ্ঞজনের নির্বোধ সব ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
পৃথিবীকে প্রথম চক্কর দেওয়াটা ঘটে কী ভাবে, সে কথা বলব একটু পরে। কিন্তু তার আগে ইতিহাসের কয়েকটা পাতা ওল্টানো যাক। তমসার সঙ্গে জ্ঞানের মহাযুদ্ধ।
আমাদের যাত্রী হয়তো বলত: ‘ল্যাকটানটিয়াসের উচিত নিজে ঘুরে বেড়ানো। তাহলে এ সব ছাইভস্ম তিনি লিখতেন না। ঘরকুনো আর আমি পৃথিবীর এদিকে-ওদিকে আছি, কিন্তু দুজনার মাথাই ওপরে আর পা মাটিতে। এখানকার আর ওখানকার গাছ বাড়ে একইভাবে: শেকড় মাটিতে, গুড়ি আর ডালপালা ওপর দিকে। বৃষ্টি আর শিলা মেঘ থেকে পড়ে নিচে।
ভেবে দেখলে বোঝা যায়, এ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। পৃথিবী গোল বলে সব লোকেই থাকে একই ভঙ্গীতে, ফুটির ওপরে পিঁপড়ের মতো।’
এ গল্পের মধ্যে কোনটা কল্পনাপ্রসূত?
একটা জিনিস মাত্র: যেভাবে যাত্রী ভ্রমণ করে, সেটা। পৃথিবীকে ঘুরে প্রথম যাত্রাগুলো ঘটে সমুদ্রপথে, আমাদের যাত্রীর ভ্রমণের মতো সহজ ছিল না সেগুলো।
পৃথিবীকে প্রথম চক্কর দেওয়াটা ঘটে কী ভাবে, সে কথা বলব একটু পরে। কিন্তু তার আগে ইতিহাসের কয়েকটা পাতা ওল্টানো যাক। তমসার সঙ্গে জ্ঞানের মহাযুদ্ধ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের বীর আর শহীদ, যাঁরা সত্যের সন্ধানে এবং জনগণের মধ্যে তার প্রচারে সর্বপ্রয়াস করেন, এমনকি নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জনে কুণ্ঠা করেননি, শোনা যাক তাঁদের কথা।