মঙ্গলে পাওয়া গেল গলিত স্তরের খোঁজ

২৪ এপ্রিল, ২০২২ নাসার মার্স ল্যান্ডার ইনসাইটের তোলা শেষ সেলফির দৃশ্য।ছবি: নাসা

মঙ্গল গ্রহের কোর বা কেন্দ্রের চারপাশে গলিত সিলিকেট স্তরের চিহ্ন পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এ দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। গত ২৫ অক্টোবর, বুধবার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষক হেনরি স্যামুয়েল। নতুন এ আবিষ্কারের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের গঠন, পরিবর্তন ও আজকের অবস্থা কীভাবে তৈরি হলো, সে সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে।

২০১৮ সালে মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করতে রোভার ‘ইনসাইট’ মঙ্গলে পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সে সব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মানচিত্র তৈরি করেছেন। লাল এ গ্রহের ভূকাঠামো নিয়ে জেনেছেন অজানা অনেক বিষয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় মঙ্গল গ্রহের কেন্দ্রের গঠন ও আকার সম্পর্কিত নানা তথ্য পাঠিয়েছে রোবোটিক এ তথ্য সংগ্রাহক। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রোভারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় পৃথিবীর। তখন অবশ্য এ মিশনের মেয়াদ পূর্ণ হতে বাকি ছিল মাত্র ৭ দিন। রোভারটির সেই মিশনে পাঠানো তথ্য এখনও বিশ্লেষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। এরকম এক বিশ্লেষণ থেকে উঠে এল নতুন এ আবিষ্কারের দাবি।

২৪ এপ্রিল, ২০২২ নাসার মার্স ল্যান্ডার ইনসাইটের তোলা শেষ সেলফির দৃশ্য।
ছবি: নাসা

গবেষক দলটি বলছে, মঙ্গলের ভূ-আবরণ ও কেন্দ্রের মধ্যে আছে গলিত সিলিকেটের স্তর। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও জানা গেছে, মঙ্গলের কেন্দ্র আগে যতটা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে আকারে ছোট ও ঘন।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের সহলেখক ভেদ্রান লেকিক গলিত এই স্তরকে কম্বল বা তাপীয় আবরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ আবরণ গ্রহটির কেন্দ্রকে ঢেকে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘এটা যে শুধু মঙ্গলের কেন্দ্রের তাপ ধরে রাখছে, তা নয়; বরং তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় জমিয়ে আরও তাপ উৎপন্ন করছে।’

এ ঘটনার ফলে কোর যথেষ্ট ঘূর্ণনগতি পাচ্ছে না। তাই গ্রহের চারপাশে চৌম্বকক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে না। সক্রিয় চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায় সৌরবায়ু প্রতিরোধ করতে পারেনি গ্রহটির বায়ুমণ্ডল। ফলাফল হিসেবে বায়ুমণ্ডলহীন মরু গ্রহে পরিণত হয়েছে গোটা মঙ্গল। মরুময় লাল মাটির কারণে এটি ‘লাল গ্রহ’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন

নতুন এ গবেষণা দেখাচ্ছে, পৃথিবী ও মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো অনেকটা ভিন্ন। এ কারণেই কাছাকাছি হওয়ার পরও কালের আবর্তে দুই গ্রহের ভাগ্যে ঘটেছে দুই রকম পরিণতি।

মঙ্গলগ্রহ এর বর্তমান অবস্থায় কীভাবে এল, তার একটি ভালো ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া গেল এ গবেষণায়। এ থেকে গ্রহটিতে কীভাবে নতুন করে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করা যায় এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের সম্ভাবনা কতটুকু, তা যাচাই করা হচ্ছে। তবে সে জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

অধ্যাপক লেকিক বলেন, ‘ইনসাইট মিশন থেকে আমরা কী শিখতে পারছি, তার একটা উদাহরণ এই আবিষ্কার।’ মঙ্গল সম্পর্কে যত ভালোভাবে জানা যাবে, তত সহজ ও নিরাপদ হবে চাঁদ, শুক্র বা মঙ্গলে ভবিষ্যৎ মিশন পরিচালনার পথ। এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ফিজ ডট অর্গ