সৌরজগতে কয়টি চাঁদ আছে

আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কেবল একটি চাঁদ দেখতে পাই। অথচ সৌরজগতে চাঁদের সংখ্যা শুনলে চমকে যেতে পারেন আপনি। আমরা সেগুলোর কয়টির কথা জানি? ভবিষ্যতে কী আরও উপগ্রহ বা চাঁদ খুঁজে পেতে পারেন বিজ্ঞানীরা? 

রাত নেমেছে। কিন্তু আকাশে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কিছু উজ্জ্বল বস্তু, জ্বলজ্বল করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো চাঁদ। আপনার কাছে যদি কোনো টেলিস্কোপ না থাকে, তাহলে এটিই একমাত্র উপগ্রহ যেটা আপনি খালি চোখে দেখতে পাবেন। কিন্তু সৌরজগতে রয়েছে আরও অনেক চাঁদ, যেগুলো খালি চোখে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। ঠিক কয়টি চাঁদ বা উপগ্রহ রয়েছে আমাদের সৌরজগতে? 

এককথায় এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। কারণ, সৌরজগতে কয়েক ধরনের উপগ্রহ রয়েছে। একটা হলো প্রাকৃতিক উপগ্রহ। অর্থাৎ, প্রাকৃতিকভাবে যেসব উপগ্রহ গ্রহের চারপাশে ঘোরে। এর মধ্যে কিছু উপগ্রহের নাম আমরা জানি। হতে পারে এমন আরও অনেক উপগ্রহ রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমরা এখনো জানি না। আমাদের এরকম জানা উপগ্রহের সংখ্যা ২৮৮টি।

লাইভ সায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি লেখা বলছে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের মতে, সৌরজগতের ৮টি গ্রহের চারপাশে মোট ২৮৮টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ ঘুরছে। তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য মতে, সৌরজগতে আমাদের জানা এমন প্রাকৃতিক উপগ্রহ মোট ২৯৩টি। দুটি তথ্যই আসলে সঠিক। কারণ বামন গ্রহ প্লুটোর রয়েছে ৫টি উপগ্রহ। এই ৫টি ধরে নাসা হিসেব করেছে ২৯৩টি। এর মধ্যে পৃথিবীর আছে মাত্র একটা উপগ্রহ—চাঁদ। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ—ফোবোস ও ডিমোস। সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ শনির—১৪৬টি। টাইটান, এনসেলাডাস, মিমাস এর মধ্যে অন্যতম। এরপর বৃহস্পতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ—৯৫টি। গ্যানিমিড, ইউরোপা, আইও এর মধ্যে অন্যতম। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ গ্যানিমিড। ইউরেনাস ও নেপচুনের রয়েছে যথাক্রমে ২৮ ও ১৬টি করে উপগ্রহ।

মঙ্গল গ্রহের দুটি উপগ্রহ

কিন্তু এ ছাড়াও আরও অনেক বস্তু গ্রহের চারপাশে ঘোরে, যেগুলোকে এখনো বিজ্ঞানীরা উপগ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। কারণ সেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ভালোভাবে জানেন না। নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির মতে, সৌরজগতে এমন বস্তুর সংখ্যা ৪৭৩টি। এগুলোকে বলে ‘স্মল-বডি স্যাটেলাইট’। এর বেশির ভাগই গ্রহাণু ও বামন গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমরা যদি বেশির ভাগ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতো এগুলোকে প্রাকৃতিক উপগ্রহ হিসেবে ধরি, তাহলে মোট চাঁদের সংখ্যা হবে ৭৬১টি।

কিন্তু এর বাইরে আরও উপগ্রহ রয়েছে। সে সম্পর্কে জানার আগে একটু জানা দরকার, চাঁদের সংজ্ঞা কী। তাইওয়ানের একাডেমিয়া সিনিকা ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অ্যাশটন উপগ্রহের সংজ্ঞা দিয়েছেন, গ্রহ হলো এমন একটা বস্তু, যা বড় কিন্তু কোনো নক্ষত্রের চারপাশে না ঘুরে গ্রহের চারপাশে ঘুরবে।’

অ্যাশটনের এই সংজ্ঞা অনুসারে কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ একটি উপগ্রহ। কারণ এটা বড় এবং নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে না ঘুরে গ্রহকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। তাহলে এতদিনে যত উপগ্রহ পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, সবগুলোকেই কী চাঁদ হিসেবে ধরা হবে? এখন পর্যন্ত এর উত্তর হলো—না। কারণ, এগুলো সব কৃত্রিম উপগ্রহ। 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

তবে এর বাইরে রয়েছে আরও কিছু বস্তু, যেগুলোকে চাঁদ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়নি। সেগুলোও কিন্তু প্রাকৃতিক। যেমন শনির রিং বা বলয়ের মধ্যে হাজার হাজার ছোট টুকরো রয়েছে, যেগুলো শনি গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে, কিন্তু চাঁদ নয়। তবে ভবিষ্যতে মহাকাশে আরও উন্নত নভোযান পাঠালে আরও নতুন উপগ্রহ আবিষ্কার হতে পারে। এমনকি এখন যেগুলোকে উপগ্রহের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, সেগুলোও পেতে পারে উপগ্রহের মর্যাদা।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নাসা, স্পেস ডটকম