পৃথিবী কি গোল
মানুষ কীভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে শিখল
পৃথিবী গোলাকার, এ কথা সবার জানা। একসময় মানুষ বিশ্বাস করত পৃথিবী চ্যাপ্টা বা সমতল। কিন্তু সে ধারণা এখন বদলে গেছে। প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার আগে কীভাবে মানুষ বুঝতে পারল পৃথিবী গোল? পৃথিবীর আকারই-বা জানল কীভাবে? ছোটদের জন্য এসব নিয়ে আনাতোলি তমিলিন রুশ ভাষায় লিখেছেন দারুণ একটি বই। এই বইয়ের বাংলা অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। নাম দিয়েছেন পৃথিবী কি গোল। বইয়ের ছবি এঁকেছেন ইউরি সমোলনিকভ। ‘রাদুগা’ প্রকাশনের এই বই বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
শিকার একটা ভালো জীবিকা, তবে তার ওপর খুব একটা নির্ভর করা যায় না। আজ হয়তো একপাল হরিণ ধরা পড়ল, পরদিন কিছুই না। অথচ খেতে তো হয় রোজই। তাহলে শিকারীর শ্রম কীভাবে সহজসাধ্য করা যায়?
কোনো এক সময় কেউ কুকুর পোষ মানাল। হয়তো সেই কুকুর প্রথমে অসুস্থ বা আহত ছিল, মানুষ করুণা করে ওটাকে সুস্থ করে তুলল, পেট পুরে খাওয়াল। কুকুর নিয়ে শিকার করা অনেক সুবিধা। কুকুর শিকার খুঁজে বের করে, মানুষ পশু শিকার করে। মাংস ও ছাল নিজের জন্য রাখে, হাড় আর নাড়িভুড়ি দেয় তার চারপেয়ে সাহায্যকারীকে। কতই বা দরকার হবে কুকুরের?
মানুষ অল্প অল্প করে অন্যান্য বন্য জন্তুকেও পোষ মানাতে লাগল। কাজটা খুব সহজ ছিল না, খুব তাড়াতাড়িও হলো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ পেল গৃহপালিত পশু।
ফসলের শীষ আরও আকারের বড় হয়, দানা হয় আরও ভারী। তাছাড়া সারাদিন ধরে একটা একটা করে শীষ খুঁজে খুঁজে দানা বের করার হাঙ্গামাও পোয়াতে হয় না। যেখানে বোনা হলো, সেখানেই ফসল ফলল।
কন্দমূল ও খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজও দেখতে দেখতে নারী ও শিশুদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াল। বসতিতে খাওয়ার লোকজনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে লাগল। সবার জন্য খাবার যোগাড় করা কি সম্ভব? নারীরা শেষে খেয়াল করল, খাদ্যশস্যের বীজ যদি নদীর ধারের ভেজা পলিমাটিতে বোনা যায়, তাহলে বুনো মাঠের তুলনায় গাছ আরও বড় ও মজবুত হয়। ফসলের শীষ আরও আকারের বড় হয়, দানা হয় আরও ভারী। তাছাড়া সারাদিন ধরে একটা একটা করে শীষ খুঁজে খুঁজে দানা বের করার হাঙ্গামাও পোয়াতে হয় না। যেখানে বোনা হলো, সেখানেই ফসল ফলল। লোকে তাই বিশেষ উদ্দেশ্যে ফসলের বীজ পাঁকে (কাঁদা) পুততে লাগল। এতে প্রথম লাভ, ফসল আরও ভালো ফলে। দ্বিতীয়ত, পাখিরা খুঁটে খেয়ে ফেলতে পারে না। এভাবে প্রথম খেতের আবির্ভাব, কৃষিকাজের সূত্রপাত।
পশুপালন ও কৃষিকর্মের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বেশ স্বচ্ছল হয়ে পড়ল। কিন্তু তাতে গৃহস্থালি জটিল হলো। একে শিকার, তার ওপর পশুপালন। ওদিকে আবার জমি চাষ করতে হয়, হাঁড়িকুড়ি বানাতে হয়, হাতিয়ারও তৈরি করতে হয়। একটা ছোট পরিবারের পক্ষে সব দিক সামলানো মুশকিল। মানুষ ভাবতে শুরু করল, আচ্ছা, প্রতিবেশীর সঙ্গে মিললে কেমন হয়?
শিকার আর যুদ্ধের সময়ও পরিবারগুলো একসঙ্গে হতো, সাময়িক বন্ধনে আবদ্ধ হতো। কিন্তু কৃষিকর্মে দরকার হতো স্থায়ী সহযোগিতার।
আলাদা আলাদা কুল বা পরিবার এভাবে একসঙ্গে মিলে গোষ্ঠীবদ্ধ হতে শুরু করল। বড় বড় গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বাস করা অনেক নিরাপদ, আবার খানিকটা কঠিনও বটে। এ ধরনের গৃহস্থালিতে কাজের বণ্টন কীভাবে হবে? কে কী কাজ করবে? শিকার আর লাভের ভাগ কীভাবে হবে? কে বেশি পাবে, কে পাবে কম?
ঠিক হলো, সবচেয়ে বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে গোষ্ঠীসভা তৈরি করা হবে। শিকার আর যুদ্ধের সময়ও পরিবারগুলো একসঙ্গে হতো, সাময়িক বন্ধনে আবদ্ধ হতো। কিন্তু কৃষিকর্মে দরকার হতো স্থায়ী সহযোগিতার। নতুন খেতের জন্য জলাভূমি শুকোতে হলে, খাল কাটতে হলে অথবা বন্যা রোধের জন্য বাঁধ তৈরি করতে হলে সমবেত প্রয়াস অপরিহার্য।