পৃথিবী কতদিন টিকে থাকবে

প্রতীকী ছবি
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য লাল দানব তারায় পরিণত হবে। ফলে ফুলে ফেঁপে উঠবে সৌরাধিপতি। গ্রাস করে নেবে শুক্র ও বুধকে।

যার শুরু আছে, তার শেষও আছে। এটাই জগতের নিয়ম। পৃথিবীর শেষটা কেমন হতে পারে? বিজ্ঞান কী বলে এ ব্যাপারে?

পৃথিবীর মহাকর্ষ ও প্রয়োজনীয় শক্তির মূল উৎস সূর্য। কিন্তু একদিন এই সূর্যই পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ হবে। কালের আবর্তে বাড়ছে সূর্যের বয়স। একসময় এটি গ্রাস করে নিতে পারে পৃথিবীকে। কীভাবে? কতদিন পরে?

লাইভ সায়েন্স-এর এক আর্টিকেল বলছে, পৃথিবীর মৃত্যু হতে পারে কয়েক বিলিয়ন বছর পরে। তবে আরও আগেই মারা যাবে পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণ। কত আগে? সূর্যের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে আজ থেকে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন বছর পরে বেশির ভাগ প্রাণের জন্য বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে পৃথিবী। এই অনুমানের ভিত্তি যে গবেষণা, তা প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: অ্যাটমোস্ফিয়ার-এ। তা ছাড়া মানবজাতি নিজেরাও মারামারি করে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। এমনিতেও মানুষের হাতে মারা যাচ্ছে বহু প্রজাতি, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চিরতরে।

তবে মূল বিষয়টি আসলে সূর্যকে ঘিরে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের গ্রহবিজ্ঞানী রাভি কোপারাপু। প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য লাল দানব তারায় পরিণত হবে বলে জানান তিনি। ফলে ফুলে ফেঁপে উঠবে সৌরাধিপতি। গ্রাস করে নেবে শুক্র ও বুধকে। এ সময় এটি গ্রাস করে নিতে পারে পৃথিবীকে। অবশ্য, এ যাত্রায় বেঁচেও যেতে পারে পৃথিবী।

আজ থেকে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন বছর পর মানুষ আর এই তাপমাত্রায় টিকতে পারবে না।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইসার তথ্যানুসারে, সূর্যের মতো মূল ধারার তারাগুলো জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে রেড জায়ান্ট বা লাল দানব তারায় পরিণত হয়। এ সময় ফুরিয়ে যায় এর ভেতরের প্রায় সব হাইড্রোজেন, এতদিন ধরে চলা ফিউশন বিক্রিয়ায় পরিণত হয় হিলিয়ামে। কেন্দ্রের নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া থমকে যায় তখন। এই ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন প্রচণ্ড তাপ ও বহির্মুখী চাপই নক্ষত্রের বিপুল ভরের মহাকর্ষের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে। ফিউশন থামতেই নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মহাকর্ষ। এই মহাকর্ষীয় চাপে কেন্দ্রের হিলিয়ামগুলো সংকুচিত হতে থাকে, বেড়ে যায় এর তাপমাত্রা। এই প্রচণ্ড তাপের ফলেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে সূর্যের বাইরের প্লাজমার স্তর। বিজ্ঞানী কোপারাপু জানান, এই ফুলে-ফেঁপে ওঠা প্লাজমার স্তর পৌঁছে যেতে পারে পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত।

তবে এর অনেক আগেই পৃথিবী সূর্যের এই ক্ষ্যাপাটে রাগের তোপে পড়বে। বেড়ে যাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বাষ্পীভূত হয়ে যাবে সমুদ্র, পৃথিবী হারাবে রক্ষাকারী বায়ুমণ্ডল এবং সূর্যের মহাকর্ষে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যেতে পারে পৃথিবী।

প্রায় ২ বিলিয়ন বছর পরে বাষ্পীভূত হবে সমুদ্রের পানি। এ সময় সূর্যের উজ্জ্বলতা বর্তমানের তুলনায় প্রায় বিশ শতাংশ বেড়ে যাবে।

আজ থেকে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন বছর পর মানুষ আর এই তাপমাত্রায় টিকতে পারবে না। স্বাভাবিক। জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো বেড়ে গেলেই মানুষের জীবন সংশয় হয়। আর সে সময় তাপমাত্রা হবে প্রচণ্ড।

প্রায় ২ বিলিয়ন বছর পরে বাষ্পীভূত হবে সমুদ্রের পানি। এ সময় সূর্যের উজ্জ্বলতা বর্তমানের তুলনায় প্রায় বিশ শতাংশ বেড়ে যাবে। হয়তো এক্সট্রেমোফাইল বা প্রচণ্ড তাপমাত্রায় টিকতে পারে, এমন কিছু প্রাণী টিকে যেতে পারে।

হিলিয়াম জ্বালানি ১০০ মিলিয়ন বছরেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর কাঁচামাল হিসাবে সূর্য পোড়াতে চাইবে হিলিয়াম-হিলিয়াম ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন। তবে এই কার্বন পুরোপুরি পোড়াতে, অর্থাৎ কার্বনের ফিউশন ঘটাতে সূর্যের ভর যথেষ্ট নয়। আরও ভারী তারায় কার্বনের ফিউশন ঘটে। ফিউশনহীন সূর্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে শেষের পথে।

মানুষ যদি নক্ষত্রান্তরে যাওয়ার কোনো উপায় আবিষ্কার করে, তবে হয়তো এ সময় আবার ফিরতে পারে পৃথিবীতে।

এই শেষটা কেমন? উড়ে যাবে সূর্যের বাইরের স্তর। সূর্য পরিণত হবে শ্বেত বামন নক্ষত্রে। কেন্দ্রের সব জ্বালানি এখন নিশ্চল, চুল্লীটা বিকল হয়ে গেছে। ফলে সূর্যের তাপমাত্রা কমে যাবে অনেক। এই তাপমাত্রা আর কখনো ফিউশন ঘটানোর জন্য যথেষ্ট হবে না। সৌরজগতের বাইরের দিকে গ্রহগুলো—বৃহস্পতি, ইউরেনাস, নেপচুন পরিণত হতে পারে ভবঘুরে নক্ষত্রে। এভাবে কতদিন টিকবে সূর্য, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে এ সময়ে সূর্য আগের মতো উজ্জ্বল না হলেও মানুষ বা পৃথিবীতে প্রাণ টিকে যাওয়ার মতো যথেষ্ট হবে। এত কিছুর পরেও সূর্য যদি পৃথিবীকে ততদিনে গিলে না নেয়, তাহলে এই পর্যায়ে এসে পৃথিবী হয়তো প্রাণের অনুপযোগী থাকবে না অতটা।

মানুষ যদি নক্ষত্রান্তরে যাওয়ার কোনো উপায় আবিষ্কার করে, তবে হয়তো এ সময় আবার ফিরতে পারে পৃথিবীতে। দিনের আকাশে তখন আর এমন দেখা যাবে না সূর্যকে। শ্বেত বামনের মতো ফ্যাকাশে ম্লান সূর্যদয়ের দিকে তাকিয়ে আজকের গল্প শোনাতে কি পারবে মানুষ? উত্তরটা তোলা থাকুক কালের খাতায়।

সূত্র:

১. জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: অ্যাটমোস্ফিয়ার-এ প্রকাশিত গবেষণা

২. হাউ লং উইল আর্থ এক্সিস্ট/ লাইভ সায়েন্স

৩. সূর্যের শেষ পরিণতি/ আবুল বাসার/ বিজ্ঞানচিন্তা সেপ্টেম্বর ২০২২

৪. উইকিপিডিয়া

৫. স্পেস ডট কম