লাইরিড উল্কাবৃষ্টি

উল্কাদের নাকি ইচ্ছেপূরণের ক্ষমতা আছে। তাই নানা স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন একটা উল্কাপাত দেখার আশায়। সেসব গালগল্পে বিশ্বাস না করেও শুধু মুগ্ধ হওয়ার আশায় অনেকেই আকাশের দিকে চাতকের চোখে তাকিয়ে থাকেন একটা উল্কাপাত দেখতে। কখনো একটা দেখতে পেলে উল্লসিত হন। আমরা ভাবি, উল্কাপাত ব্যাপারটা খুবই অনিশ্চিত, কখন কোথায় দেখা যাবে, তার বুঝি ঠিক নেই। কিন্তু কোথাও কোথাও একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর উল্কাপাত দেখা যায়। আকাশের একটা নির্দিষ্ট এলাকায় এক ঘণ্টায় এক শরও বেশি উল্কাপাত দেখা সম্ভব। এ ব্যাপারটাকে বলা হয় উল্কাবৃষ্টি। আর এই বৃষ্টি দেখার জন্য টেলিস্কোপ কিংবা বাইনোকুলারের কোনো প্রয়োজন নেই, খালি দুটো চোখ থাকলেই হলো।

প্রতিবছর এপ্রিলে কয়েক দিন ধরে একটা উল্কাবৃষ্টি দেখা যায় রাতের আকাশে, যার নাম লাইরিড উল্কাবৃষ্টি। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে ২৩ এপ্রিল প্রথম প্রহরে। অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ঘুমাতে না গিয়ে কিংবা শেষ রাতে তাকিয়ে থাকতে হবে আকাশের দিকে। কিন্তু সেই জেগে থাকা আনন্দদায়ক কিছু হবে, তা নিশ্চিত।

কেন এই উল্কাবৃষ্টি

উল্কাপাত দেখা যায় যখন আকাশ থেকে ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো কোনো জ্যোতিষ্ক যেমন গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদির ছোট টুকরো পৃথিবীতে চলে আসে। যখন এগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি আসে, তখন অভিকর্ষ বলের টানে এটি দ্রুতগতিতে ভূমির দিকে নেমে আসতে থাকে। যখন সেটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন এর বিপুল গতিতে ও বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে এটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর আগুন ধরা অবস্থায় আর কিছুদূর আসতেই এটি পুরোপুরি পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে শুধু কিছু ধুলাবালু। আমরা যে অগ্নিবিন্দুর ছুটে যাওয়া দেখি, সেটা জ্বলন্ত জ্যোতিষ্কের টুকরো। দ্রুত সেটি পুড়ে শেষ হয়ে যায় বলে একদম অল্প একটু সময় দেখা যায় উল্কা। লাইরিড উল্কাবৃষ্টি আমরা দেখতে পাব থ্যাচার নামে এক ধূমকেতুর লেজের অবশিষ্টাংশ থেকে নানা রকম টুকরো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পড়ায়। থ্যাচার ধূমকেতু ৪১৫ বছরে একবার সূর্যকে ঘুরে আসে। কিন্তু লাইরিড উল্কাবৃষ্টি আমরা দেখতে পাই প্রতি এপ্রিলেই। প্রতিবছর থ্যাচার ধূমকেতু পৃথিবীর পাশ দিয়ে যায় না। কিন্তু একটা ধূমকেতু যেদিক দিয়ে যায়, সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন খসে যাওয়া অংশ নিয়ে একটি পথ তৈরি করে রেখে যায়। শেষ একবার যখন ধূমকেতুটি পৃথিবীকে অতিক্রম করে, তখন এটি পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত বিস্তৃত পাথর এবং বরফখণ্ড রেখে যায়। প্রতিবছর এপ্রিলে পৃথিবী সেই পথের কাছ দিয়ে যায় এবং ধূমকেতুর ছোট টুকরোগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে উল্কাবৃষ্টি তৈরি করে।

যেভাবে দেখবেন লাইরিড উল্কাবৃষ্টি

লাইরিড উল্কাবৃষ্টি ১৬ এপ্রিল থেকেই দেখা যাবে। বীণামণ্ডলে ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে অনবরত উল্কাপাত। এবং সর্বোচ্চ দেখা যাবে ২৩ এপ্রিল প্রথম প্রহর থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত। সে জন্য ২২ তারিখ রাতটা আপনি কাটাতে পারেন শহর থেকে দূরে কোথাও।

লাইরিড উল্কাবৃষ্টি আপনি খালি চোখেই দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনার প্রয়োজন হবে অন্ধকার জায়গা। ঢাকার খুব ব্যস্ত এলাকাগুলোয় ধুলাবালু আর আলোদূষণ খুব বেশি হওয়ায় এসব এলাকায় দেখতে পাওয়ার আশা কম। যদি কোনো শহরের কাছাকাছি জায়গা হয়, তবে আশপাশ থেকে উঁচু একটি ছাদ বেছে নেবেন, যেখানে আপনার চোখে আলো পড়বে না। এ ছাড়া অন্ধকার মাঠ কিংবা নদীর পাড় খুব ভালো জায়গা হতে পারে উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য।

আকাশের কোথায় দেখবেন?

আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে বীণামণ্ডল। যেটা একদমই সহজ একটা কাজ। আপনি যদি রাত ১২-১টার দিকে দেখতে যান, তবে আকাশের উত্তর-পূর্ব দিকে খানিকটা ওপরের দিকে তাকাবেন। সবচেয়ে উজ্জ্বল যে তারাটি দেখবেন উত্তর আকাশে, সেটিই বীণামণ্ডলের অভিজিৎ তারা। উজ্জ্বল অভিজিৎ তারার দিকে সোজা না তাকিয়ে একটা জায়গায় শুয়ে তাকিয়ে থাকুন এর আশপাশের জায়গাগুলোতে। দৃষ্টিকে একটা বিন্দুতে ফোকাস না করে এলাকাটির দিকে ফোকাস করুন। ভোরের আগে আগে প্রতি ঘণ্টায় ১৫-১৬টি উল্কাপাত দেখতে পাবেন আশা করা যায়। আর প্রতিবার উল্কাপাতের সময় মনে মনে একটা উইশ করা প্রাচীন রীতি। সে অনুযায়ী আপনি প্রতিবারই উইশ করতে পারেন, পরের উল্কাপাতটাও যেন আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে না যায়।

সূত্র: স্পেস ডট কম