সৌরজগতে মোট গ্রহ আছে ৮টি। সঙ্গে আছে আরও অনেক উপগ্রহ ও বামন গ্রহসহ নানা মহাজাগতিক বস্তু। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহ হলো গ্রহরাজখ্যাত বৃহস্পতি। প্রায় তিন দশক আগে, ১৯৯৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম সৌরজগতের বাইরে গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। এ ধরনের গ্রহগুলোকে বলে এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌর গ্রহ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতে, এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এক্সোপ্ল্যানেটের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
শনাক্তকৃত বেশিরভাগ এক্সোপ্ল্যানেটের অবস্থানই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। তবে মিল্কিওয়ের বাইরেও কিছু এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। নাসার তথ্যানুসারে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে, মহাবিশ্বে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন এক্সোপ্ল্যানেট রয়েছে। কথা হলো, এখন পর্যন্ত যেসব এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহ কোনটি?
সাধারণত প্রস্থ ও ভরের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় যেকোনো গ্রহের আকার। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল এক্সোপ্ল্যানেট গবেষক সোলেন উলমার-মোল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর গ্রহের ব্যাসার্ধ গ্রহরাজ বৃহস্পতির ব্যাসার্ধের প্রায় দ্বিগুণ। এই গ্রহগুলো তাদের নিজ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে।’
গ্রহের প্রস্থের সঙ্গে ভরের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। কারণ গ্রহগুলোর ঘনত্ব ভিন্ন হয়। যেমন ধরুন, দুটি গ্রহের ব্যাস বা প্রস্থ একই। কিন্তু একটি পাথুরে গ্রহ, অন্যটি গ্যাসীয়। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় দুটি গ্রহের ভর সমান হবে না। পাথুরে গ্রহের ভর গ্যাসীয় গ্রহের তুলনায় বেশি হবে। আবার দুটি গ্যাসীয় গ্রহের ব্যাস সমান, কিন্তু ঘনত্ব ভিন্ন হলে ভরও ভিন্ন হবে।
যেমন এইচএটি-পি-৬৭ বি (HAT-P-67 b) একটি বিশালাকার গ্যাসীয় গ্রহ। এর ব্যাস বৃহস্পতির ব্যাসের প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রস্থের দিক থেকে, অর্থাৎ আকারে এটি মহাবিশ্বে বৃহত্তম ব্যাসার্ধের গ্রহগুলোর একটি। কিন্তু পৃথিবী থেকে ১ হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরের এ গ্রহটির ঘনত্ব অনেক কম। তাই ভরের দিক থেকে এটি বৃহস্পতির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভারী গ্রহটির ভর বৃহস্পতির ভরের প্রায় ১৩ গুণ। পৃথিবী থেকে ৬০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এ গ্রহের নাম এইচডি ৩৯০৯১ বি (HD 39091 b)।
তবে এ বিষয়টি স্থির বা চিরায়ত কিছু নয়। নতুন নতুন এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হলে বদলে যেতে পারে সবচেয়ে ভারী বা আকারে বৃহত্তম গ্রহ। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক, সময় আমাদের জন্য আর কী বিস্ময় তুলে রেখেছে এক্সোপ্ল্যানেট গবেষণায়!
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: লাইভ সায়েন্স ডট কম