ইউরেনাস: হার্শেলের গ্রহ

ইউরেনাস আবিষ্কার করেন উইলিয়াম হার্শেল। গ্রিক আকাশদেবতার নামে এর নাম রাখা হয় ইউরেনাস। এর কেন্দ্রেও সম্ভবত হীরার সমুদ্র আছে।

ছবি: ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা

সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ। দূর থেকেই টের পাওয়া যায় এর একটি বিশেষত্ব—চমৎকার বলয় ঘিরে আছে ইউরেনাসকে। আসলে দুটি বলয়ব্যবস্থা। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় আছে নয়টি বলয়। দেখতে ধূসর, সরু। বাইরের ব্যবস্থার দুটি বলয়ের ভেতরেরটি দেখতে লালচে, বাইরেরটি আবার নীলচে! গ্রহটিকে তাই ছবিতে অনিন্দ্যসুন্দর দেখায়।

মোট ২৮টি উপগ্রহবিশিষ্ট দানব গ্রহ এই ইউরেনাস। ব্যাসের হিসাবে পৃথিবীর মাত্র চার গুণ বড়। তবে আয়তনে এত বিশাল যে এর ভেতরে এঁটে যাবে ৬৩টি পৃথিবী!

গ্রহটির বেশির ভাগটাই ঘূর্ণনরত তরল দিয়ে তৈরি, তাই সেই অর্থে এর কোনো পৃষ্ঠতল নেই। থাকলে সেটা হতো ৮০৮ কোটি ৩ লাখ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু কোনো নভোযান নামতে গেলে কোথাও আসলে নামতে পারবে না।

নিজ কক্ষপথের তুলনায় প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। এটি ইউরেনাসের আরেক অনন্য বৈশিষ্ট্য। দেখে মনে হয়, কাত হয়ে বা উল্টো ঘুরছে।

গ্রহটির বেশির ভাগটা পানি, মিথেন আর অ্যামোনিয়ার মিশ্রণে সৃষ্ট বরফজাতীয় পদার্থ দিয়ে গঠিত। এই বরফজাতীয় পদার্থ আবার প্রচণ্ড উত্তপ্ত, ফলে ঘন একধরনের তরল হিসেবে থাকে। গ্রহটির একদম ছোট্ট পাথুরে কেন্দ্রের ওপরের ৮০ শতাংশই এই তরল। কেন্দ্র বা কোরের কাছে গ্রহটির তাপমাত্রা ৪ হাজার ৯৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ছবি: নাসা

একনজরে

আবিষ্কারক: উইলিয়াম হার্শেল

আবিষ্কারের কাল: ১৩ মার্চ, ১৭৮১

ভর: ৮.৬৮ × ১০২৫ কেজি

ব্যাস: ২৫ হাজার ৩৬৩ কিলোমিটার

পরিধি: ৫১ হাজার ১১৮ কিলোমিটার

পৃষ্ঠতল: ৮০৮ কোটি ৩ লাখ বর্গকিলোমিটার

বয়স: ৪৫০ কোটি ৪৩ লাখ বছর

উপগ্রহ: ২৮টি

গ্রহের অবস্থা: গ্যাসীয়

বছর: ৩০ হাজার ৬৮৭ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)

দিনের দৈর্ঘ্য: ১৭ ঘণ্টা ১৪ মিনিট

সূর্য থেকে দূরত্ব: ২৯০ কোটি কিলোমিটার (১৯ সৌরজাগতিক একক বা এইউ)

যেহেতু গ্রহটির বেশির ভাগটাই ঘূর্ণনরত তরল দিয়ে তৈরি, তাই সেই অর্থে এর কোনো পৃষ্ঠতল নেই। থাকলে সেটা হতো ৮০৮ কোটি ৩ লাখ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু কোনো নভোযান নামতে গেলে কোথাও আসলে নামতে পারবে না।

আরও পড়ুন

গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের বেশির ভাগটাজুড়ে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। সঙ্গে সামান্য পরিমাণ মিথেন, পানি ও অ্যামোনিয়া রয়েছে। এই মিথেনই ইউরেনাসের নীল রঙের পেছনের কারিগর। বায়ুমণ্ডলের ন্যূনতম তাপমাত্রা মাইনাস ২২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটারও হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে কোনো ধাতব নভোযান ঢুকতে চাইলে প্রচণ্ড চাপে ও এত কম তাপমাত্রায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই আজ পর্যন্ত ইউরেনাসের কাছাকাছি যাওয়া একমাত্র নভোযান ভয়েজার ২। ১৯৮৬ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রায় সাড়ে ৮১ হাজার কিলোমিটার দূর দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময় এটি ইউরেনাসকে পর্যবেক্ষণ করে।

ইউরেনাস আবিষ্কার ও নামকরণের পেছনেও রয়েছে মজার কাহিনি। জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল নিজেই এক টেলিস্কোপ তৈরি করেন তারা দেখার জন্য। তিনি টের পান, একটা তারা যেন অন্য রকম। পরে তিনি একে গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তৎকালীন রাজা তৃতীয় জর্জের নামে তিনি এর নাম রাখতে চেয়েছিলেন জর্জিয়াম সাইডাস! তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। গ্রহদের নামের রীতি মেনে গ্রিক আকাশদেবতার নামে গ্রহটির নাম রাখা হয় ইউরেনাস।

সূত্র: নাসা, স্পেস ডট কম, উইকিপিডিয়া

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন