মহাকাশে প্রাণী পাঠানো হয় মূলত সেখানে প্রাণীর বাসযোগ্যতা পরীক্ষা করার জন্য। এ পর্যন্ত সাতটি দেশ মহাকাশে বিভিন্ন জীবজন্তু পাঠিয়েছে। ১৯৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে মহাকাশে কিছু মাছি পাঠায়। তবে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো প্রথম প্রাণী হলো লাইকা নামের কুকুরটি। এটি পাঠিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া)।
লাইকা (১৯৫৭)
সাধারণ এই কুকুরটি স্পুটনিক-২ যানে চেপে এটি প্রথমবারের মতো পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করে। তবে উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা পরই মারা যায় প্রাণীটি।
রুশ কাছিম (১৯৬৮)
সোভিয়েত ইউনিয়ন এই কাছিম দুটিকে পাঠায় জন্ড-৫ যানের মাধ্যমে। এরাই প্রথমবারের মতো পৃথিবীর প্রাণী হিসেবে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে। ফিরেও আসে প্রাণ নিয়েই।
ব্রেলকা ও স্ট্রেলকা (১৯৬০)
এ দুটি কুকুরও সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো। এরাই প্রথম মহাকাশ থেকে সফলভাবে বেঁচে ফিরে আসে। স্পুটনিক-৫ নামক যানে চেপে এরা পুরো এক দিন পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে।
অ্যারাবেলা ও অনিতা (১৯৭৩)
এরা হলো দুটি মাকড়সা। হাইস্কুল ছাত্রদের অনুরোধে স্কাইল্যাব যানে করে এদের পাঠানো হয় মহাকাশে। দেখা গেল, এরা মহাকাশেও জাল বুনতে ওস্তাদ।
তিতির পাখি (১৯৯০)
জাপানি সাংবাদিক তোয়োহিরো আকিয়ামা মির মহাকাশ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তিতির পাখির ডিম নিয়ে যান। উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে পরীক্ষামূলক পশুপালন। ডিম ফুটে তিতিরের বাচ্চা হয় ঠিকই।
হ্যাম (১৯৬১)
মহাকাশে যাওয়া প্রথম শিম্পাঞ্জির নাম হ্যাম। এটি প্রমাণ করে, মহাকাশে ভ্রমণরত অবস্থায়ও লিভার টানাসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। ফলে একই বছর প্রথম আমেরিকান ও দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অ্যালান শেপার্ড মহাকাশে যেতে সক্ষম হন।
জেলি ফিশ (১৯৯১)
প্রথম কোনো জেলি ফিশের মহাকাশ ভ্রমণ। মহাকাশে এরা বেড়ে উঠতে পারে কি না, সেটা যাচাই করাই ছিল উদ্দেশ্য। পরবর্তী সময়ে মহাকাশে জেলি ফিশের জন্মও হয়। যদিও পৃথিবীতে এসে তাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয়। এ ছাড়া নব্বইয়ের দশকে ইঁদুর, ব্যাঙ, গুইসাপ, মাছিসহ বিভিন্ন পোকার ডিম পাঠানো হয়।
হেক্টর (১৯৬১)
প্রথম ফরাসি নভোচারী প্রাণী। এ ভাগ্যবান ইঁদুরটিও সফলভাবে জীবিত ফেরত আসতে সক্ষম হয়। একটি স্পেসস্যুটও পরিধান করেছিল প্রাণীটি।
ফেলিকেট (১৯৬৩)
মহাকাশ থেকে বেঁচে ফেরত আসা একমাত্র বিড়াল। ফ্রান্সের ভেরোনিক রকেটের সে অভিযানে ফেলিক্স নামের আরেকটি বিড়ালের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উেক্ষপণের ঠিক আগ মুহূর্তে পালিয়ে যায় ফেলিক্স। আর তাতেই ভাগ্য খুলে যায় ফেলিকেটের।
টিকটিকি (২০১৪)
মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে সরীসৃপদের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয় কি না, তা জানতে মহাকাশে ১টি পুরুষ ও ৪টি স্ত্রী টিকটিকি পাঠায় রাশিয়া। দুর্ভাগ্যক্রমে সব কটি টিকটিকিই মারা যায়। এ ছাড়া ২০১০ সালে কচ্ছপ ও মাকড়সাও পাঠানো হয় মহাকাশে।
সূত্র: স্পেস ডট কম
* লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত