নেপচুন: আকাশ থেকে হীরের বৃষ্টি ঝরে

সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ এটি। নেপচুনের বায়ুপ্রবাহকে বলে সুপারসনিক বাতাস। কারণ সৌরজগতের সবচেয়ে গতিশীল বায়ুপ্রবাহ ঘটে এখানে।

নাসার অনেক ছবিতেও গাঢ় নীল দেখানো হয়, তবে নেপচুনের সত্যিকার রং ইউরেনাসের কাছাকাছি, অনেকটা এ ছবির মতোছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের আরেকটি গ্রহের রং নীলচে। নাম নেপচুন। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ। সূর্য থেকে গড় দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে সূর্যের যে দূরত্ব, তার চেয়েও প্রায় ৩০ গুণ বেশি। সূর্য থেকে নেপচুনে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা!

গ্রহটিতে দিন-রাত হয় মাত্র ১৬ ঘণ্টায়। তবে বছরের দৈর্ঘ্যটা বেশি। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ১৬৫ বছর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ গ্রহটি আবিষ্কারের আগে এর উপগ্রহ ট্রাইটন আবিষ্কার হয়। ১৮৬৪ সালে উপগ্রহটি খুঁজে পান উইলিয়াম ল্যাসেল। এর ঠিক ১৭ দিন পর জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গটফ্রায়েড গ্যালি নেপচুন আবিষ্কার করেন। তবে তার আগেও গ্যালিলিওসহ অনেক জ্যোতির্বিদ গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

একনজরে

আবিষ্কারক: জোহান গটফ্রায়েড গ্যালি, জন কাউচ অ্যাডামস, আরবেইন লে ভেরিয়ের

ভর: ১.০২৪×১০২৬ কেজি

ব্যাস: ৪৯ হাজার ২৪৪ কিলোমিটার

পরিধি: ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬০০ কিলোমিটার

পৃষ্ঠতল: বরফশীতল বায়বীয়

বয়স: ৪৫০ কোটি বছর

উপগ্রহ: ১৬

গ্রহের অবস্থা: বরফজাতীয়

বছর: ১৬৫ বছর 

দিনের দৈর্ঘ্য: ১৬ ঘণ্টা

সূর্য থেকে দূরত্ব: ৪৪৮ কোটি ২২ লাখ কিলোমিটার (১৯ সৌরজাগতিক একক বা এইউ)

নেপচুনের ব্যাস প্রায় ৪৯ হাজার ৫২৮ কিলোমিটার। পৃথিবীর তুলনায় ব্যাস ৪ গুণ বেশি। কিন্তু আয়তনের দিক থেকে প্রায় ৫৮ গুণ বড় নেপচুন।

সৌরজগতের দুটির বরুফে গ্রহের মধ্যে একটি নেপচুন, অন্যটি ইউরেনাস। নেপচুনের ভরের ৮০ ভাগের বেশি গঠিত হয়েছে পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেন দিয়ে। ছোট্ট পাথুরে কোরের চারপাশে এসব উপাদান অত্যন্ত ঘন অবস্থায় আছে। গ্রহের বাইরের অংশ বরফশীতল মেঘে আবৃত। গ্রহটিতে নেই কোনো শক্ত পৃষ্ঠতল।

নাসার গ্রহ পরিচিতি পোস্টারে নেপচুন, এর ব্যাস প্রায় ৪৯ হাজার ৫২৮ কিলোমিটার
ছবি: নাসা

সৌরজগতের সবচেয়ে গতিশীল বায়ুপ্রবাহ ঘটে এখানে। ঘণ্টায় প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বেগে। তবে শব্দের গতি ঘণ্টায় মাত্র ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার। এ জন্য নেপচুনের বায়ুপ্রবাহকে বলে সুপারসনিক বাতাস। পৃথিবীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছিল ঘণ্টায় ৪০৭ কিলোমিটার।

নেপচুনের উদ্দেশ্যে এখনো কোনো মিশন পরিচালিত হয়নি। তবে ভয়েজার–২ মিশনের মাধ্যমে এ গ্রহটি সম্পর্কে কিছুটা জানা গেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সূত্র: নাসা, উইকিপিডিয়া, স্পেস ডটকম, ইসা

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত