সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহের ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ছবিটি তোলা হয়েছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে। এর আগে, সৌরজগতের বাইরে হাজারো গ্রহের সন্ধান মিলেছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিরই সরাসরি ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নানা সময় এরকম অনেক গ্রহের ধারণা নিজেদের কল্পনায় দিয়েছেন, আবার কখনো কখনো একাধিক ছবি বিশ্লেষণ করে একটি ছবি বানিয়েছেন। এই প্রথম সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহের ছবি সরাসরি তুলতে সক্ষম হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
সৌরজগতের বাইরের গ্রহদের ইংরেজিতে বলে এক্সোপ্ল্যানেট। বাংলায় বলা হয় বহিসৌরগ্রহ। সম্প্রতি ছবি তোলা এক্সোপ্লানেটটি সম্পূর্ণ গ্যাসীয়। অর্থাৎ, এই গ্রহে কোনো পাথুরে পৃষ্ঠ নেই। তাই গ্রহটিতে বসবাসের উপযোগী নয়।
এক্সোপ্লানেটটির নাম রাখা হয়েছে এইচআইপি ৬৫৪২৬বি (HIP 65426b)। গ্রহটির ভর বৃহস্পতির চেয়ে ৯ গুণ বেশি। গ্রহ হিসাবে একে তরুণ বলা যায়। কারণ, এর বয়স মোটামুটি দেড় থেকে দুই কোটি বছর। যেখানে আমাদের পৃথিবীর বয়স প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর। ওই গ্রহটি আমাদের থেকে ৩৫৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্রহটি এর নিজস্ব নক্ষত্র এইচআইপি ৬৫৪২৬-কে কেন্দ্র করে ঘোরে। একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৬৩০.৭ বছর।
২০১৭ সালে চিলিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদান অবজারভেটরি ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতীর্বিজ্ঞানীরা প্রথম এই গ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই টেলিস্কোপটি ছোট ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে কিছু ছবি তুলেছিল। তাই তখন ভালো করে গ্রহটির ব্যাপারে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আগের যেকোনো টেলিস্কোপের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। এর ইনফ্রারেড ক্যামেরার তরঙ্গদৈর্ঘ্য আরও বড়। ফলে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া ছবিটি আমাদের আরও অনেক নতুন তথ্য দিয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ গ্রহের ছবিটি ধরা পড়েছে এই টেলিস্কোপে।
নতুন এই গ্রহটি তার নিজস্ব নক্ষত্র থেকে প্রায় ১০০ গুণ দূরে অবস্থিত। তাই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পক্ষে ওই নক্ষত্র ও গ্রহটি আলাদা করতে অসুবিধে হয়নি। ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা ও মিড-ইনফ্রারেড ক্যামেরা দুটি করোনাগ্রাফের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এ কারণেই এ ধরণের গ্রহের সরাসরি ছবি তুলতে পারে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। তবে, এই দশকের শেষের দিকে নাসার ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হবে। সেই টেলিস্কোপে আরও উন্নত করোনাগ্রাফ ব্যবহার করা হবে। ফলে দূর মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্রের ছবি তোলা যাবে আরও পরিষ্কারভাবে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া এই ছবিগুলো বিশ্লেষণের নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল গবেষক আরিন কার্টার। তিনি বলেন, ‘ছবিটি পেয়ে মনে হয়েছিল মহাকাশে গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, এইচআইপি ৬৫৪২৬ নক্ষত্রের আলো বিকিরণ হচ্ছে। কিন্তু ছবিগুলো আরও সাবধানে, ভালো করে দেখে বুঝলাম, এটা শুধু নক্ষত্রের বিকিরিত আলো নয়। নক্ষত্রের আলো সরাতে বেরিয়ে এল গ্রহটি।’
লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা
সূত্র: নাসা