চাঁদে বিধ্বস্ত রুশ নভোযান, ভারতীয় চন্দ্রযান-৩ নামবে বুধবার

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়েছে রাশিয়ার মনুষ্যবিহীন নভোযান লুনা ২৫। রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর পক্ষ থেকে ২০ আগস্ট, রবিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়েছে রাশিয়ার মনুষ্যবিহীন নভোযান লুনা ২৫। রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর পক্ষ থেকে ২০ আগস্ট, রবিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটাই ছিল রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান। সর্বশেষ ১৯৭৬ সালে চাঁদে অবতরণ করে রাশিয়ান নভোযান লুনা ২৪। আগামী ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল লুনা ২৫-এর। তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চাঁদের কক্ষপথে ঘোরার ফলে নভোযানটি আছড়ে পড়েছে চাঁদের মাটিতে। তীরে এসে কেন তরী ডুবল, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়নি রসকসমস। গত ২০ আগস্ট লুনা ২৫ বিধ্বস্ত হলে রসকসমস-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চন্দ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ৮০০ কেজি ওজনের ল্যান্ডারটির অস্তিত্ব নেই হয়ে গেছে। তবে কেন এভাবে মিশন ব্যার্থ হলো, তা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।

লুনা ২৫-এর ব্যর্থতা রাশিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা। রাশিয়ার বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি বেশ কয়েক বছর ধরেই আরও কমে যাচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রীয় তহবিল দিন দিন আরও বেশি বরাদ্দ করা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর পেছনে। 

রাশিয়ার পাশাপাশি চাঁদের ওপাশে নভোযান পাঠিয়েছে ভারতও। আশার কথা হলো, ভারতের চন্দ্রযান-৩ এখনো আছে চাঁদের কক্ষপথে। আগামী ২৩ আগস্ট, বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবরতণ করার কথা এ নভোযানের।

এখন পর্যন্ত শুধু রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চাঁদের বিষুবীয় অঞ্চলের কাছে নভোযান পাঠাতে পেরেছে। তবে দক্ষিণ মেরুতে কোনো দেশের নভোযানই এখনো সফলভাবে অবতরণ করেনি। ফলে এখনো একরকম অজানাই রয়ে গেছে চাঁদের ওই অংশ। লুনা ২৫ অভিযান সফল হলে চাঁদের ওপাশ নিয়ে জানা যেত আরও অনেক কিছু। নতুন চন্দ্র অভিযানে রাশিয়া এখনো একরকম ব্রাত্য হয়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ অভিযান রাশিয়াকে এগিয়ে দিত অনেকখানি। হয়তো এ ধারায় আবারও শুরু হতো রাশিয়ার চন্দ্র অভিযান।

রাশিয়ার পাশাপাশি চাঁদের ওপাশে নভোযান পাঠিয়েছে ভারতও। আশার কথা হলো, ভারতের চন্দ্রযান-৩ এখনো আছে চাঁদের কক্ষপথে। আগামী ২৩ আগস্ট, বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবরতণ করার কথা এ নভোযানের। বিজ্ঞানীদের আশা, এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে হয়তো পাওয়া যাবে পানির সন্ধান।  

এর আগে, ১০ আগস্ট লুনা ২৫ চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। ১৩ আগস্ট নভোযানটি পৃথিবীতে প্রথম ছবি পাঠায়। রাশিয়ার আশা ছিল, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে চাঁদে পানি থাকার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেই সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখবে চাঁদের শিলা ও দক্ষিণ মেরুর বায়ুমণ্ডল। 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২৬ সালের শুরুতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। আর্টেমিস ৩ মিশনে মানুষ আবার চাঁদের মাটিতে পা রাখবে।

লুনা ২৫ মিশনে ব্যার্থতার কারণে রাশিয়া হয়তো শিগগিরিই আর চন্দ্র অভিযান পরিচালনা করবে না। কারণ লুনা ২৫-এর ব্যার্থতার কারণ খুঁজে তার সমাধান করতেও কিছুটা সময় লাগবে। তবে রসকসমসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, লুনা ২৫ বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে একটি দল গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকেও চন্দ্র অভিযান পরিচালনা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে দেশটির জন্য। 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২৬ সালের শুরুতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। আর্টেমিস ৩ মিশনে মানুষ আবার চাঁদের মাটিতে পা রাখবে। ইতিমধ্যে মানবহীন আর্টেমিস ১ মিশন সফলভাবে ঘুরে এসেছে চাঁদের কক্ষপথ থেকে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আর্টেমিস ২ মিশন পরিচালনার কথা রয়েছে। ওই মিশনে অবশ্য মানুষ থাকবে। চার নভোচারী চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ফিরে আসবেন পৃথিবীতে।  

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পেস ডট কম ও বিবিসি