চাঁদে বিশাল গুহার সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা

রাতের আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ আমরা সবাই দেখেছি। চাঁদের বুকে যে কালো দাগগুলো দেখা যায়, সেগুলো আসলে চাঁদের খাদ বা গর্ত। এসব জায়গায় সূর্যের আলো পড়ে না। এই খাদগুলোকেই আমরা চাঁদের কলঙ্ক বলি। কিন্তু আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে চাঁদের বুকে। অজানা এসব বিষয় আজও কৌতূহলী করে রেখেছে বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি তেমনি এক নতুন রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের বুকে তাঁরা একটি বিশাল গুহা আবিষ্কার করেছেন। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এর মাধ্যমে সূচিত হয়েছে নতুন অধ্যায়।

এই গুহা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, এর ভেতরে কী রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে কীভাবে মানুষের কাজে লাগতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের আশা, শিগগিরই জবাব মিলবে এসব প্রশ্নের। এ আবিষ্কার মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে ইতালীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল। তাদের পরিচালিত গবেষণাটির ফলাফল সম্প্রতি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। চাঁদের এই গুহা ভবিষ্যতে মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মানুষের চাঁদে বসতি স্থাপনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে এটি।

আরও পড়ুন
চাঁদে বিশাল গুহা
ছবি: নাসা

গুহাটি চাঁদের ‘সি অব ট্র্যাঙ্কুইলিটি’ বা ট্র্যাঙ্কুইলিটি খাদ অঞ্চলে অবস্থিত। ঐতিহাসিক অ্যাপোলো-১১ নভোযান যেখানে নেমেছিল, সেখান থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি প্রায় ৪০ মিটার চওড়া, ৯ মিটার লম্বা এবং অন্তত ১০০ মিটার গভীর একটি বিশাল ও রহস্যময় ভূগর্ভস্থ গঠন। ইতালির ট্রেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেঞ্জো ব্রুজজোন জানিয়েছেন, ‘৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছিলেন, এ গুহাগুলোর অস্তিত্ব আছে। কিন্তু এবারই প্রথমবারের মতো আমরা এগুলোর অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছি। এর আগে আমরা শুধু তাত্ত্বিকভাবে এসব গুহা থাকার সম্ভাবনার কথা জানতাম।’

চাঁদে এই গুহা আবিষ্কার শুধু একটি উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা নয়, এটি চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপনে বড় সহায়ক হতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, এটি হতে পারে চাঁদে বসতি গড়ার চাবিকাঠি। আমরা জানি, চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বিকিরণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি।

বর্তমানে নাসার মহাকাশযান লুনার রিকনিসান্স অরবিটার (এলআরও) চাঁদের চারপাশে ঘুরছে। চাঁদ সম্পর্কে আরও জানতে বিজ্ঞানীদের নিয়মিত তথ্য পাঠাচ্ছে এটি। এ মহাকাশযানে একটি ছোট্ট রেডিও যন্ত্র আছে, যাকে মিনিয়েচার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা মিনি-আরএফ বলা হয়। যন্ত্রটি ২০১০ সাল থেকে চাঁদের বিভিন্ন জায়গার তথ্য সংগ্রহ করছে। বিজ্ঞানীরা সংগৃহীত এসব তথ্য খুঁটিয়ে দেখেছেন। এ তথ্যগুলোকে নতুন এক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে তাঁরা বুঝতে পারেন, চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে একটি গুহা লুকিয়ে আছে। গুহাটি কোথায় আছে, তা বোঝা যায় রাডারে প্রতিফলিত সিগন্যাল থেকে। এভাবে তাঁরা নিজেদের অনুমান প্রমাণে সফল হন। তাঁদের প্রাথমিক ধারণা, এটি কোনো ফাঁকা লাভা টিউব—অর্থাৎ শূন্য আগ্নেয়গিরির নল সদৃশ অংশ হতে পারে। যদিও এটি চাঁদে আবিষ্কৃত প্রথম গুহা, বিজ্ঞানীরা মনে করেন চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে এ ধরনের আরও অনেক গুহা লুকিয়ে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন
লুনার রিকনিসান্স অরবিটার (এলআরও) চাঁদের বিভিন্ন জায়গার তথ্য সংগ্রহ করছে। এ তথ্যগুলোকে নতুন এক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে তাঁরা বুঝতে পারেন, চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে একটি গুহা লুকিয়ে আছে। গুহাটি কোথায় আছে, তা বোঝা যায় রাডারে প্রতিফলিত সিগন্যাল থেকে।
ছবি: বিবিসি

চাঁদে এই গুহা আবিষ্কার শুধু একটি উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা নয়, এটি চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপনে বড় সহায়ক হতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, এটি হতে পারে চাঁদে বসতি গড়ার চাবিকাঠি। আমরা জানি, চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বিকিরণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। দিনের বেলায় তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে, আর নেমে যেতে পারে রাতে -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এ ছাড়া, চাঁদে সৌরবিকিরণের মাত্রা পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি—পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১৫০ গুণ বেশি। এগুলোর বিপরীতে এ ধরনের গুহাগুলো নভোচারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করতে পারে। সেখানে তাঁরা এই কঠিন পরিবেশ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।

সব মিলে বিজ্ঞানীদের আশা, এ আবিষ্কার চাঁদে মানুষের দীর্ঘ সময় বসবাসের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে।

সূত্র: স্পেস ডট কম, উইকিপিডিয়া

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

আরও পড়ুন