সূর্য গবেষণায় নভোযান পাঠাচ্ছে ভারত

সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশটি ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১ বা এল১ বিন্দুতে এ নভোযান পাঠাবে। নভোযানটি ওই বিন্দুতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৮০ দিন।

চন্দ্রাভিযানে সফলতা পেয়ে এবার সূর্য নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে নভোযান পাঠাচ্ছে ভারত। এ মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে আদিত্য-এল১। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশটি ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১ বা এল১ বিন্দুতে এ নভোযান পাঠাবে। নভোযানটি ওই বিন্দুতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৮০ দিন। পৃথিবী থেকে এল১-এর দূরুত্ব প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার।

সূর্যের নামের সঙ্গে মিল রেখে এ অভিযানের নাম রেখেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। হ্যাঁ, সংস্কৃত ভাষায় আদিত্য মানে সূর্য। 

এ নভোযান পাঠানোর সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ভারত। আদিত্য-এল১ নভোযানটি এই মূহূর্তে রয়েছে ভারতের শ্রীহরিকোটায়, উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল বা পিএসএলভি রকেটে ভর করে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১ বা এল১ বিন্দুতে পৌঁছাবে নভোযান আদিত্য-এল১।

ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১-এ এই ‘মহাকাশযান’ স্থাপনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই জায়গা থেকে সূর্যকে সব সময় পর্যবেক্ষণ করা যাবে। মহাকাশযান বলা হলেও এটা আসলে একধরনের করোনাগ্রাফি স্পেসক্রাফট।

১৭৭২ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী জোসেফ-লুই ল্যাগ্রাঞ্জ গণনা করে দেখান, একটি সিস্টেমে যদি দুটি বড় বস্তু একে অন্যকে মহাকর্ষীয় শক্তিতে আকর্ষণ করে, তবে সেখানে পাঁচটি ভারসাম্যপূর্ণ বিন্দু পাওয়া যাবে। এসব বিন্দুতে দুটো বস্তুর মহাকর্ষ একে অন্যকে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয় যে সেখানে তৃতীয় কোনো বস্তু রাখলে সেটা কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করবে না। পৃথিবীর ও সূর্যের মধ্যেও এরকম পাঁচটি স্থান রয়েছে। এগুলোকে যথাক্রমে এল১ থেকে এল৫ নামে ডাকা হয়। অনেক বিজ্ঞানী মজা করে এ জায়গাগুলোকে বলেন, মহাকাশের নিরাপদ পার্কিং স্পট। অর্থাৎ, পার্ক করে রাখা নভোযান বা নভোদুরবিনটি নির্দিষ্ট কক্ষপথেই থাকবে, সূর্য বা পৃথিবী বা আর কোনো গ্রহের টানে সেদিকে চলে যাবে না।

ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১-এ এই ‘মহাকাশযান’ স্থাপনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই জায়গা থেকে সূর্যকে সব সময় পর্যবেক্ষণ করা যাবে। মহাকাশযান বলা হলেও এটা আসলে একধরনের করোনাগ্রাফি স্পেসক্রাফট। এ ধরনের নভোযানে তাপ নিরোধক ও সূর্যালোক প্রতিরোধী ঢালের পাশাপাশি সূর্যের করোনা অঞ্চলের বর্ণালি বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো থাকে।

সূর্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছেন। তবে এখনো সূর্যের সব রহস্য উন্মচিত হয়নি। সৌরপৃষ্ঠের চেয়ে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কেন বেশি, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানেন না বিজ্ঞানীরা। সূর্যের করোনা অঞ্চল নিয়েও রয়েছে কিছু রহস্য। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ভারতের এ নভোযানের মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলা এসব রহস্যের জট কিছুটা খুলবে।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট, বুধবার প্রথম দেশ হিসেবে সরাসরি ভারতের দক্ষিণ মেরুতে নভোযান পাঠিয়েছে ভারত। এখন পর্যন্ত যতগুলো দেশ চন্দ্রাভিযান করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে নভোযান পাঠানোর রেকর্ড গড়েছে দেশটি।

এ ছাড়াও সৌরজগতের পরিবেশের ওপর সূর্যের প্রভাব সম্পর্কে এ স্থান থেকে ভালো তথ্য পাওয়া যাবে। আগেই যেমন বলেছি, সূর্য ও পৃথিবীর মহাকর্ষ ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ায় সেখানে আদিত্য-এল১ থাকতে পারবে যত দিন ইচ্ছা, ততদিন। সেই চেষ্টাই করছে ইসরো।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট, বুধবার প্রথম দেশ হিসেবে সরাসরি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নভোযান পাঠিয়েছে ভারত। এখন পর্যন্ত যতগুলো দেশ চন্দ্রাভিযান করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে নভোযান পাঠানোর রেকর্ড গড়েছে দেশটি। মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ডলারে তারা এ অভিযান সম্পন্ন করেছে।

এ ছাড়া ২০২৬ সালে জাপানের সঙ্গে যুগ্মভাবে চন্দ্রাভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। দেশটির আশা, এ অভিযানগুলো মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পেস ডট কম, আনন্দবাজার পত্রিকা, বিজ্ঞানচিন্তা