বৃহস্পতি: গ্রহদের রাজা

ভরে ও আয়তনের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। সৌরজগতের বাকি সব গ্রহের মোট ভরের দ্বিগুণ সে একাই। সে জন্য একে বলে গ্রহরাজ। গঠনের দিক থেকে গ্যাসদানব। এতে ৩০০ বছর ধরে চলছে প্রকাণ্ড এক ঝড়। লালচে দেখায় বলে একে বৃহস্পতির ‘গ্রেট রেড স্পট’ বলা হয়।

বৃহস্পতিছবি: নাসা

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। গ্রহটি এত বড় যে এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যাবে। গ্রহটি বড় হলেও দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ঘণ্টার। তবে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে সময় লাগে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৩ দিন। গ্রহটি গ্যাসীয়। ফলে এর কোনো পাথুরে পৃষ্ঠ নেই। স্বভাবতই সেখানে কোনো নভোযান অবতরণ করতে পারবে না। আবার কোনো পর্বত বা গিরিখাতও নেই এই গ্রহে। এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ হাইড্রোজেন ও ১০ শতাংশ হিলিয়াম। এ ছাড়া সামান্য পরিমাণে অ্যামোনিয়া, সালফার, মিথেন ও জলীয় বাষ্প থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রচণ্ড চাপ ও তাপে হাইড্রোজেন গ্যাস তরল হয়ে যায়। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৃহস্পতির কেন্দ্রে রয়েছে ভারী কঠিন কিংবা গলিত কোর। এই গ্যাসদানবের গড় তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বৃহস্পতি গ্রহ
ছবি: নাসা
গ্রহটি এত বড় যে এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যাবে। গ্রহটি বড় হলেও দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ঘণ্টার। তবে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে সময় লাগে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৩ দিন

তবে বৃহস্পতির সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়টি সম্ভবত এর অতিকায় ঘূর্ণিঝড়। দ্য গ্রেট রেড স্পট নামে পরিচিত। এটাই সৌরজগতের সবচেয়ে বড় ঝড়। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এই ঝড়। নাসার মতে, ঝড়ের আকৃতি এত বড় যে পৃথিবীর মতো দুটি গ্রহ অনায়াসে এটে যাবে এর মধ্যে। ঝড়টি নিজ কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। ঘোরার গতি ঘণ্টায় ৪৩০ থেকে ৬৮০ কিলোমিটার।

একনজরে

ভর: ১.৮৯৮ × ১০২৭ কেজি

ব্যাস: ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৪ কিলোমিটার

পরিধি: ৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৬৪ কিলোমিটার 

পৃষ্ঠতল: ৬ লাখ ১৪২ কোটি বর্গকিলোমিটার

বয়স: ৪৬০ কোটি ২৯ লাখ বছর

উপগ্রহ: ৯৫

গ্রহের অবস্থা: গ্যাসীয়

বছর: ৪ হাজার ৩৩৩ দিন

দিনের দৈর্ঘ্য: ৯ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট

সূর্য থেকে দূরত্ব: ৭৪ কোটি ৮১ লাখ কিলোমিটার (৬.৫ সৌরজাগতিক একক বা এইউ)

১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি বৃহ্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। এ জন্য এ চারটিকে বলা হয় গ্যালিলিয়ান চাঁদ। বর্তমানে বৃহস্পতির চাঁদ ৯৫টি।

বৃহস্পতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে ৯টি মিশন থেকে। প্রথম মিশন ছিল পাইওনিয়ার ১০, যা ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির জুস মিশন ছুটছে বৃহস্পতির দিকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: নাসা, উইকিপিডিয়া, স্পেস ডটকম, ইসা

* লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত