পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর একবার ঘুরে আসতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। তাই একদিনে ২৪ ঘন্টা। কিন্তু এর মধ্যে আরও কিছু বিষয় আছে। চলুন, সেগুলো জানার চেষ্টা করি।
পৃথিবীতে প্রতি ২৪ ঘন্টায় একদিন হয়, এ কথা আমরা সবাই জানি। কেন ২৪ ঘন্টায় দিন সম্পন্ন হয়, তাও সম্ভবত সবার জানা। এককথায় বললে, পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর একবার ঘুরে আসতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। তাই একদিনে ২৪ ঘন্টা। কিন্তু এর মধ্যে আরও কিছু বিষয় আছে। চলুন, সেগুলো জানার চেষ্টা করি।
চলতি বছরের ৫ জুলাই সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা। সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কীভাবে চাঁদ ও সূর্যের প্রভাবে পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টায় এক দিন হয়। ওই গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, কেন একশ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২০ ঘন্টার কাছাকাছি ছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে, পৃথিবীর দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগের কথা। একটু একটু করে তৈরি হয়েছে আমাদের এই পৃথিবী। তখন পৃথিবী অনেক দ্রুত ঘুরত। ফলে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ছোট। মাত্র ১০ ঘন্টার মতো। পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে চাঁদের সম্পর্ক আছে। পৃথিবী চাঁদের তুলনায় অনেক বড় ও ভারী। এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও চাঁদের তুলনায় অনেক বেশি। চাঁদের সঙ্গে এই সম্পর্কের কারণে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যদিও তা খুব সামান্য। প্রতি ১০০ বছরে মাত্র ১ দশমিক ৭ মিলিসেকেন্ড করে বাড়ে দিনের দৈর্ঘ্য। প্রতি সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের এক ভাগকে বলে এক মিলিসেকেন্ড।
গণিতে আগ্রহ থাকলে হিসাব কষে দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দেখবেন, যে হারে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে, তাতে এখন দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘন্টার পরিবর্তে ৬০ ঘন্টা হওয়া উচিত ছিল। গাণিতিক হিসাব সে কথাই বলে। এখন আর ওই হিসাবে না যাই। দিনের দৈর্ঘ্য যে এখনও ২৪ ঘন্টাই আছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। কিন্তু কেন দিনের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়ে ৬০ ঘন্টা হলো না?
এর জন্যও দায়ী ওই চাঁদ। চাঁদ প্রতিনিয়ত পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যদিও এর পরিমাণ খুব কম। প্রতি বছর চাঁদ পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৪৯ ইঞ্চি করে দূরে সরছে। ফলে পৃথিবীর কৌণিক গতিবেগ কমছে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়, সময়ের সঙ্গে কোনো বস্তুর কৌণিক সরণের হারকে কৌণিক বেগ বলে। মানে, কোনো অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণমান কোনো বস্তু বা বিন্দু একক সময়ে যে পরিমাণ কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করে, তাই কৌণিক বেগ। এই কৌণিক বেগের কারণে ধীর হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি। তাই এখনো পৃথিবীতে এক দিন সমান ২৪ ঘন্টা।