পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে পাঁচটি গ্রহাণু: নাসা

পৃথিবীর দিকে পাঁচটি বড় আকৃতির গ্রহাণু ধেয়ে আসছে বলে সর্তক করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এদের মধ্যে একটি চাঁদের চেয়েও পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসবে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চলুন, এ গ্রহাণুগুলোর ব্যাপারে সংক্ষেপে জেনে নিই। 

শিল্পীর চোখে সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহের আবাস—গ্রহাণু বেষ্টনীছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর দিকে পাঁচটি বড় আকৃতির গ্রহাণু ধেয়ে আসছে বলে সর্তক করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এদের মধ্যে একটি চাঁদের চেয়েও পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসবে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চলতি সপ্তাহে গ্রহাণুগুলো পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে বলে জানিয়েছে নাসা। এই গ্রহাণুগুলো হলো: ২০২৩ কিউআর, ২০২৩ পিএম১, ২০২৩ কিউই, ২০২৩ পিএম এবং ২০২৩ কিউও।

প্রায়ই পৃথিবীর পাশে দিয়ে ছুটে যায় এরকম নানা গ্রহাণু। তবে এগুলো সাধারণত পৃথিবীকে আঘাত করে না। পৃথিবীর কান ঘেষে বেরিয়ে যায়। তেমন ক্ষয়ক্ষতিও হয় না তাই। কোনো কারণে কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়লেও তেমন সমস্যা হয় না। কারণ, প্রথমত, গ্রহাণুগুলোর বেশিরভাগের আকার খুব ছোট। তাই ভূপৃষ্ঠে পড়তে পড়তে সেগুলোর বেশিরভাগই সাধারণত পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে বড় কোনো গ্রহাণু এভাবে ছুটে এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে ঘটতে পারে বিপর্যয়। ডাইনোসরদের বিলুপ্তি আমাদের সে কথা জানিয়ে দিয়েছে স্পষ্ট করে। কিন্তু মানুষও প্রস্তুত। ডার্ট মিশন নামের একটি প্রকল্প রয়েছে নাসার ঠিক এরকম পরিস্থিতির জন্যই। ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাকশন টেস্ট, সংক্ষেপে ডার্ট প্রকল্পে নভোযান ছুড়ে দেওয়া হয় গ্রহাণুকে লক্ষ্য করে। লক্ষ্যে আঘাত হেনে এ নভোযান গ্রহাণুটির কক্ষপথ সরিয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছে নাসা। তাই চিন্তার কিছু নেই। তবু এই পাঁচটি গ্রহাণু আকারে এত বড় আর এত কাছ দিয়ে যাবে যে এগুলো কৌতুহলের কারণ হয়ে উঠেছে। 

এ সপ্তাহের মধ্যেই এই পাঁচটি গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ দিয়ে ছুটে যাবে। চলুন, গ্রহাণুগুলোর আকার, আকৃতি ও বেগ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জানা যাক। 

১. ২০২৩ কিউআর (2023 QR): মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্যানুসারে, ২০ আগস্ট রবিবার রাতে এ গ্রহাণুর পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার কথা। এ সময় পৃথিবী থেকে গ্রহাণুটির দূরত্ব থাকবে ১ লাখ ২৯ হাজার কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে দূরত্বটি অনেক বেশি মনে হলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এই দূরত্ব অনেক কম। কার বা গাড়ি আকারের এই গ্রহাণুটির আকৃতি প্রায় ১৬ ফুট।

২. ২০২৩ পিএম১ (2023 PM1): ঘন্টায় ৬৬ হাজার ৮৬০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে গ্রহাণুটি। এটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয় ১৩ আগস্ট। শেষবার ১৮ আগস্ট দেখা গেছে। নাসার হিসাবে, এ গ্রহাণুটি নিয়েও  আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ২২০ ফুট দৈর্ঘ্যের (প্রায় একটা বোয়িং-৭৭৭ বিমানের সমান) গ্রহাণুটি ২১ আগস্ট, সোমবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে। 

৩. ২০২৩ কিউই (2023 QE): এই গ্রহাণুটির আকৃতি একটি যাত্রীবাহী বাসের সমান। ২১ আগস্ট, সোমবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে গ্রহাণুটি। ৩৭ ফুট দৈর্ঘ্যের গ্রহাণুটি পৃথিবীর ২০ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার দূর দিয়ে ছুটে যাবে। গ্রহাণুটির বেগ থাকবে ঘন্টায় ২৩ হাজার ৬০৯ কিলোমিটার। 

৪. ২০২৩ পিএম (2023 PM): গ্রহাণুটি ২২ আগস্ট, মঙ্গলবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যাবে। এ সময় পৃথিবী থেকে গ্রহাণুটির দূরত্ব থাকবে প্রায় ২২ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। বেগ থাকবে ঘন্টায় ২৫ হাজার ৮১ কিলোমিটার। এ বছরের ৮ আগস্ট গ্রহাণুটিকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। এটি অ্যামোর পরিবারের গ্রহাণু। তবে পৃথিবীবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গ্রহাণুটি আকারে বেশ ছোট। ১৯০ ফুটের এই গ্রহাণুটির আকৃতি একটি অ্যারোপ্লেনের মতো। দ্বিতীয়ত, আগেই বলেছি, এটাও পৃথিবীর অনেক দূর দিয়ে চলে যাবে।

৫. ২০২৩ কিউও (2023 QO): নাসার হিসেবে, এ গ্রহাণুটি ২৩ আগস্ট, বুধবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে। এ সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকবে ১৫ লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার। এটি অ্যাপোলো পরিবারের সদস্য। পৃথিবীর পাশ দিয়ে ঘন্টায় ১৯ হাজার ৫৮৪ কোটি কিলোমিটার বেগে ছুটে যাবে গ্রহাণুটি। ১৮ আগস্ট শেষবার গ্রহাণুটিকে দেখা গেছে। মোটামুটি একটি বাড়ির আকৃতির এ গ্রহাণুর দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

সূত্র: নাসা ও হিন্দুস্তান টাইমস