জ্যোতির্বিদ্যা
জানা-অজানার চাঁদ
আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী চাঁদ। পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এই প্রতিবেশী সম্পর্কে আমরা কতটা জানি...
অন্য বস্তুর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে চাঁদ
কয়েক বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি গ্রহের সংঘর্ষ হয়। সেই গ্রহের নাম ছিল থিয়া। বিজ্ঞানীদের ধারণা, থিয়া গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলেই তৈরি হয়েছে চাঁদ। তখন পৃথিবী ও চাঁদ—উভয়ই গলিত অবস্থায় ছিল। এরপর ধীরে ধীরে গলিত অবস্থা বদলে আজকের পৃথিবী ও চাঁদ হয়েছে।
যেভাবে এল চাঁদের নাম
প্রাচীনকালে চাঁদ বলতে শুধু পৃথিবীর চাঁদকেই বুঝত মানুষ। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করলে মানুষ বুঝতে পারে, পৃথিবীর চাঁদ ছাড়াও আরও অনেক চাঁদ রয়েছে। আমাদের চাঁদের নামটি এসেছে লাতিন ‘লুনা’ শব্দ থেকে। আবার ইংরেজিতে ‘দ্য মুন’ শব্দ থেকে এসেছে চাঁদ। এই মুন শব্দ এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ মোনা (mōna) থেকে। এই মোনা শব্দ এসেছে প্রোটো-জার্মান শব্দ মেনন (mēnōn) থেকে এবং এই মেনন এসেছে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান শব্দ মেনসিস (mēnsis) থেকে। মেনসিস মানে মান্থ বা মাস।
চাঁদ ও সূর্যের আকার সমান দেখায় কেন
চাঁদ সূর্যের তুলনায় ৪০০ গুণ ছোট। কিন্তু পৃথিবী থেকে দেখলে দুটি বস্তুকে প্রায় একই রকম দেখায়। কারণ, পৃথিবীর থেকে হিসাব করলে চাঁদ সূর্যের তুলনায় ৪০০ গুণ কাছে। কোনো বস্তু যখন কাছাকাছি থাকে তা দূরের বস্তুর তুলনায় বড় দেখায়। যেমন রাতের আকাশের অনেক তারাই সূর্যের চেয়ে বড়, কিন্তু দূরে আছে বলে ছোট দেখায়।
চাঁদে শেষ মানুষ
১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদে অবতরণ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনে নভোচারী জিন কারনান শেষ ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে নামেন। আর্মস্ট্রং থেকে কারনান পর্যন্ত মোট ১২ জন চাঁদে গেছেন।
চাঁদে আছে এক অনন্য গন্ধ
চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই সেখানে বাতাসও নেই। তবু অ্যাপোলো ১১ মিশনে নভোচারীরা চাঁদের একধরনের গন্ধ পেয়েছেন। এই গন্ধ তাঁদের স্পেসস্যুট ও চাঁদের নমুনাগুলোর সঙ্গেও ছিল। পৃথিবীতে ফিরে এসে সেই গন্ধ পেয়েছেন নভোচারীরা। গন্ধটা অনেকটা ধাতব, পোড়া বারুদের মতো। সম্ভবত চাঁদের ধূলিকণা এবং বাতাসে থাকা অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এই গন্ধ তৈরি হয়েছে।
চাঁদে চন্দ্রকম্প
পৃথিবীর মতো চাঁদেও ভূমিকম্প হয়, সেটাকে বলে ‘চন্দ্রকম্প’। যদিও সেগুলো পৃথিবীর ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক দুর্বল, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী। উল্কার আঘাত, তাপমাত্রার পরিবর্তন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ, চাঁদের অভ্যন্তরীণ দুর্বল গঠনসহ বিভিন্ন কারণে চন্দ্রকম্প হয়। এর মধ্যে কিছু ভূমিকম্প এত দুর্বল যে ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ বসবাস করলে তারা সেগুলো টেরও পাবে না।
পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ
চাঁদ সব সময় পৃথিবীর একদিকে মুখ করে ঘোরে। এ ঘটনাকে বলে টাইডাল লকিং। চাঁদ প্রতিবছর আমাদের থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি (৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার) দূরে সরে যাচ্ছে। এই হারে সরতে থাকলে ১ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ ৫৫ হাজার বছর।
চাঁদের কারণে হয় জোয়ার-ভাটা
চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হতো না। কারণ, পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব। ভূপৃষ্ঠের যে অংশ বরাবর চাঁদ থাকে, সেই অংশের সমুদ্রের পানি চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কিছুটা ফুলে ওঠে। এটাই জোয়ার। একইভাবে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত পাশের সমুদ্রের পানি কিছুটা ফুলে ওঠে। আর অন্য দুই পাশে সৃষ্টি হয় ভাটা। এভাবে চাঁদের প্রভাবে দিনে দুইবার জোয়ার–ভাটা হয়।
চাঁদ না থাকলে ৩৬৫ দিনে বছর হতো না
চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য হতো ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা। তাহলে পৃথিবীতে বছর হতো ১ হাজারের বেশি দিনে। কারণ, চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে নিজ অক্ষের ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি কিছুটা কমে যায়। তাই ২৪ ঘণ্টায় এক দিন এবং ৩৬৫ দিনে এক বছর।
চাঁদের ‘অন্ধকার’ দিক আসলে অন্ধকার নয়
আমরা সব সময় চাঁদের শুধু এক পাশ দেখতে পাই। সেই অংশই সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকে। কিন্তু যে পাশ আমরা দেখতে পাই না, সেই পাশ কিন্তু অন্ধকার নয়। পৃথিবী থেকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অন্ধকার মনে হয়। তবে বেশ কয়েকটি চন্দ্রমিশনে চাঁদের ওই অংশের ছবি তোলা হয়েছে।