কুইপার বেল্ট: যেখানে প্লুটোরা থাকে

কুইপার বেল্টের সূচনা নেপচুনের ওপারে, সূর্য থেকে ৩০ এইউ বা সৌরজাগতিক একক দূরেছবি: বিবিসি স্কাই অ্যাট নাইট

১৯৩০ সালে যখন প্লুটো আবিষ্কৃত হয়, তখনো বিজ্ঞানীরা জানতেন না, কুইপার বেল্ট বা বেষ্টনী আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তখন প্লুটোকে ভাবা হয়েছিল গ্রহ। অনেক পরে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, অর্কাস, হাউমিয়া, কুয়ায়োর, মেকমেক—প্লুটো আকারের এ রকম বেশ কিছু বামন গ্রহ আছে প্লুটোর আশপাশে।

উঁহু, আশপাশ কথাটা বোধ হয় ঠিক হলো না। কারণ, কুইপার বেল্টের সূচনা নেপচুনের ওপারে, সূর্য থেকে ৩০ এইউ বা সৌরজাগতিক একক দূরে। সেখান থেকে প্রায় ১ হাজার এইউ পর্যন্ত বিস্তৃত এ অঞ্চল। বিশাল এই অঞ্চলে ইতিমধ্যে পাওয়া ২ হাজারের বেশি বস্তু—ইংরেজিতে বলা হয় কুইপার বেল্ট অবজেক্ট বা কেবিও—নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
মজার বিষয় হলো, জেরার্ড কুইপার—যাঁর নামে এ অঞ্চলের নাম, তিনি কিন্তু সত্যি সত্যি কুইপারবেষ্টনী আবিষ্কার করেননি। ১৯৫১ সালের এক গবেষণাপত্রে তিনি দাবি করেছিলেন, প্লুটোর ওপারে কিছু মহাজাগতিক বস্তু থাকতে পারে।
শিল্পীর কল্পনায় কুইপার বেল্ট
ছবি: সংগৃহীত

গ্রহাণুবেষ্টনীর মতো এ অংশও শাসন করে বৃহস্পতি। তবে শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের মহাকর্ষীয় ক্ষমতার প্রভাব দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আগে এ অঞ্চলের সব কেবিওর মোট ভর ছিল পৃথিবীর ৭ থেকে ১০ গুণ। কালের ফেরে আজ তা পৃথিবীর ভরের মাত্র ১০ শতাংশের মতো। বেশির ভাগ ধূমকেতু এ অঞ্চল থেকে আসে। দৈহিক গঠন অনুযায়ী তাদের মাথা বা মূল ধূমকেতু, আয়ন লেজ ও ধুলার লেজ থাকে। মূলত ধুলা, পাথর ও বরফে তৈরি এই কুইপার অধিবাসীরা।

মজার বিষয় হলো, জেরার্ড কুইপার—যাঁর নামে এ অঞ্চলের নাম, তিনি কিন্তু সত্যি সত্যি কুইপারবেষ্টনী আবিষ্কার করেননি। ১৯৫১ সালের এক গবেষণাপত্রে তিনি দাবি করেছিলেন, প্লুটোর ওপারে কিছু মহাজাগতিক বস্তু থাকতে পারে। তবে এর সঙ্গে নেপচুনের সম্পর্ক, মানে নেপচুনের কক্ষপথ থেকেই যে এর শুরু, তা তিনি বুঝতে পারেননি। ১৯৯২ সালে মার্কিন জ্যোতির্বিদ ডেভিট জুইট ও জ্যানেট লিউ প্রথম কেবিও, ১৯৯২ কিউবি১ শনাক্ত করেন। তত দিনে কুইপারের ধারণা বিজ্ঞানীদের এত সুপরিচিত ছিল যে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় তাঁর নামে।

*লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন