পৃথিবীর বাইরে প্রাণ বা এলিয়েন লাইফের সন্ধান চলছে দীর্ঘদিন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ এবার সে জন্য তৈরি করেছে এক্সোবায়োলজি এক্সট্যান্ট লাইফ সার্ভেয়ার (ইইএলএস)। নাসার তৈরি এই স্ব-চালিত যন্ত্র দেখতে সাপের মতো। অর্থাৎ এটি একধরনের উন্নত প্রযুক্তির অটোনোমাস রোবোটিক স্নেক। অনেকটা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকেও কাজ করতে পারে। মূলত পৃথিবীর বাইরে দূরের কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে ভিনগ্রহী প্রাণের সন্ধান এবং থ্রিডি ম্যাপিংয়ের মতো জটিল কাজের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে এটি। যন্ত্রটি বানিয়েছে নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি।
নাসার তথ্যমতে, সাপ আকৃতির এই যন্ত্রটির দৈর্ঘ্য ৪.৪ মিটার। ওজন প্রায় ১০০ কেজি। এতে বেশ কিছু অংশ রয়েছে। এর মধ্যে আছে অ্যাকচুয়েশন ও প্রপালশন মেকানিজম। সহজ করে বললে, রোবটের অ্যাকচুয়েটর এর পেশীর মতো কাজ করে। আর প্রপালশন মেকানিজম গতিশীল করে যন্ত্রটিকে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পাওয়ার, হাইলি অ্যাডভান্স ইমেজিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইলেকট্রনিকস সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে এতে। এ ছাড়াও একধরনের ঘূর্ণমান প্রপালশন ইউনিট রয়েছে, যা ট্র্যাকিং, গ্রিপিং মেকানিজম ও প্রোপেলার ইউনিট হিসাবে কাজ করতে পারে পানির নিচে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ এবার সে জন্য তৈরি করেছে এক্সোবায়োলজি এক্সট্যান্ট লাইফ সার্ভেয়ার (ইইএলএস)। নাসার তৈরি এই স্ব-চালিত যন্ত্র দেখতে সাপের মতো।
রোবটটি গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠের গভীরে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রের উৎস খুঁজে বের করতে পারবে কোনো সমুদ্রের সন্ধান পেলে। অচেনা ও প্রতিকূল পরিবেশে বাসযোগ্যতা এবং ভিনগ্রহী প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের জন্য গ্রহের মাটির নিচে বদ্ধ ও গতিশীল কাঠামোর ভেতরেও চালাতে পারবে অনুসন্ধান। আর এ রোবোটিক সাপ দিয়ে বরফ ঢাকা শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের গভীরে সফলভাবে মিশন পরিচালনা করার বিষয়ে বেশ আশাবাদী নাসা। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এটি নতুন ও অজানা রহস্য উন্মোচন করবে বিশ্বের সামনে।
নাসা এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২২ সালে। এখন পর্যন্ত নানারকম প্রতিকূল পরিবেশে, বিশেষ করে অতি শীতল পরিবেশে তারা যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখেছে। এই রোবোটিক সাপের মাথায় বসানো রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির শক্তিশালী ইমেজিং সেন্সর। এটি দিয়ে যন্ত্রটি আশপাশের পরিবেশের থ্রিডি চিত্র ধারণ করে তা খুব দ্রুত পৃথিবীতে নাসার স্পেস কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল স্টেশনে পাঠাবে। তা ছাড়া যন্ত্রটিতে রয়েছে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর সিস্টেম। এগুলোর মাধ্যমে আশপাশের বিদ্যুৎপ্রবাহ, তাপমাত্রাসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে নাসাকে পাঠাবে যন্ত্রটি।
রোবটটি গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠের গভীরে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রের উৎস খুঁজে বের করতে পারবে কোনো সমুদ্রের সন্ধান পেলে। অচেনা ও প্রতিকূল পরিবেশে বাসযোগ্যতা এবং ভিনগ্রহী প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের জন্য গ্রহের মাটির নিচে বদ্ধ ও গতিশীল কাঠামোর ভেতরেও চালাতে পারবে অনুসন্ধান।
বহুদূরের এই রহস্যময় উপগ্রহের উদ্দেশে নাসা কখন মিশন শুরু করবে, তা এখনো নিশ্চিত করেনি। সম্ভবত চলতি বছরের শেষদিকে পাঠানো হতে পারে। এনসেলাডাস উপগ্রহের পৃষ্ঠে বরফের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করবে এটি। পাশাপাশি উপগ্রহটির অভ্যন্তরীণ কাঠামো খুঁজে দেখবে, বাসযোগ্যতার মূল্যায়ন এবং কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করবে। মাইনাস ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার তীব্র ঠান্ডা বা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণায় সহায়তা করবে এটি। তবে নভোযানে চড়ে এনসেলাডাস পৌঁছাতে এই রোবোটিক সাপের সময় লাগতে পারে প্রায় ১২ বছর।
নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের বরফাচ্ছাদিত সারফেস কিছুটা মসৃণ। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বরফের চাদরের নিচে লুকিয়ে থাকা মহাসাগরের তাপমাত্রা হতে পারে প্রায় ০ থেকে মাইনাস ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাসার ক্যাসিনি স্পেস প্রোবের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁদের এ ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। এসব তথ্য বলছে, এনসেলাডাসের গভীরের মহাসাগরের তাপমাত্রা হতে পারে মাইনাস ১.০৯৫ থেকে ১.২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এনসেলাডাসের এই মহাসাগরের বুকে কোনো অজানা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতির প্রাণ থাকতে পারে বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সে জন্যই নাসা এই মিশনের পরিকল্পনা করেছে। মিশনটি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে তারা। এখন শুধু এই রোবট-সাপের যাত্রার অপেক্ষা।