মহাবিশ্বে কত গ্রহ আছে

সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোকে বলা হয় বহিঃসৌরগ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেট। এরকম ৫ হাজার ৫০২টি গ্রহের কথা আমরা জানি। এগুলো সবই রয়েছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভেতরে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের অতি সামান্য অংশ খুঁজেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ গ্রহগুলোর সন্ধান পেয়েছেন। বাকিটা তো রয়েই গেল! তাহলে, বিশাল এই মহাবিশ্বে মোট কতগুলো গ্রহ আছে?

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে মোট গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৫০২টি।ছবি: নাসা
মহাবিশ্ব আসলে কত বড়, তা বুঝতে হলে ট্রিলিয়নের মাহাত্ম্য জানতে হবে। জানতে হবে ট্রিলিয়ন বলতে কী বোঝায়।

মহাবিশ্ব বিশাল। প্রতিনিয়ত আরও বাড়ছে, প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই মহাবিশ্ব ঠিক কত বড়? আসুন, বিষয়টা একটু বোঝার চেষ্টা করি। আমাদের সৌরজগতে একটাই নক্ষত্র আছে—সূর্য। এর চারপাশে রয়েছে ৮টি গ্রহ। আরও আছে প্লুটোর মতো বামন গ্রহ, ২৯০টি উপগ্রহ, গ্রহাণুসহ আরও অনেক কিছু। আমাদের এ সৌরজগৎ আবার মিল্কিওয়ে নামের একটি গ্যালাক্সির একটা বাহুতে রয়েছে। এই গ্যালাক্সিতে সূর্যের মতো নক্ষত্র আছে আরও প্রায় ১০০ বিলিয়ন। তবে সাম্প্রতিক হিসেবে, এ সংখ্যা ৪০০ বিলিয়নও হতে পারে। বুঝতেই পারছেন আমাদের গ্যালাক্সি কত বড়! কিন্তু আশ্চর্যের এখনো অনেক বাকি। কারণ, মহাবিশ্বে এমন গ্যালাক্সি আছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। 

মহাবিশ্ব আসলে কত বড়, তা বুঝতে হলে ট্রিলিয়নের মাহাত্ম্য জানতে হবে। জানতে হবে ট্রিলিয়ন বলতে কী বোঝায়। এক ট্রিলিয়ন মানে ১,০০০,০০০,০০০,০০০ (বা ১ লাখ কোটি)। ১-এর পরে ১২টি শূন্য। এখনো হয়তো আপনি ট্রিলিয়নের গুরুত্ব পুরো বুঝতে পারছেন না। এক বিলিয়ন নিশ্চয়ই জানেন। ১০০ কোটি। এরকম ১ হাজার বিলিয়নে হয় এক ট্রিলিয়ন। মহাবিশ্বে এমন হাজার হাজার বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। আর আমরা যখন ‘কোটি কোটি’ কথাটা ব্যবহার করি, তখন আসলে এক বা দুই কোটি বোঝাই না। কোটি কোটি মানে ১০ কোটিও হতে পারে, আবার এক লাখ কোটিও হতে পারে। বুঝুন তাহলে! 

এই তো গেল গ্যালাক্সির সংখ্যা। এবারে ভাবুন, সেসব গ্যালাক্সিতে কত নক্ষত্র আছে। গ্রহ যে কতগুলো থাকতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু আমরা সেই কঠিন কাজটিই করতে চাই।

আরও পড়ুন
মহাবিশ্বে কয়টি গ্রহ আছে, তা খোঁজা আর আপনার শহরে কতজন মানুষ বাস করে, তা গুনতে চাওয়া অনেকটা একইরকম।

সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোকে বলে এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ। সৌরজগতের আটটিসহ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে মোট গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৫০২টি। এখনো পর্যন্ত এগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মানে এই নয় যে মিল্কিওয়েতে মাত্র এই কয়টি গ্রহ আছে। গ্রহ আবিষ্কার করা বেশ কঠিন কাজ। তার মানে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এমন অনেক গ্রহ আছে যেগুলো আমরা এখনো খুঁজে পাইনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্ক পপিনচক। তিনি বলেন, ‘আমরা এই মূহূর্তে প্রায় পাঁচ হাজার গ্রহ সম্পর্কে জানি। কিন্তু অনুমান করতে পারি, প্রতিটি নক্ষত্রের জন্য অন্তত একটি হলেও গ্রহ আছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এরকম নক্ষত্র আছে প্রায় ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন। অর্থাৎ শুধু আমাদের গ্যালাক্সিতেই অনাবিষ্কৃত গ্রহ রয়েছে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন। তবে এই সংখ্যা আসলে কত, তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।’   

পপিনচকের মতে, মহাবিশ্বে কয়টি গ্রহ আছে, তা খোঁজা আর আপনার শহরে কতজন মানুষ বাস করে, তা গুনতে চাওয়া অনেকটা একইরকম। আপনি যদি ইন্টারনেটের সাহায্য না নিয়ে শহরের মানুষ গুনতে চান, তাহলে প্রত্যেকের সঙ্গে গিয়ে আলাদাভাবে দেখা করে গুনতে হবে। কিন্তু এভাবে চিন্তা করাটাও অবাস্তব। বরং আপনাকে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। একটি বাড়িতে কতজন মানুষ বাস করে এবং শহরে মোট বাড়ির সংখ্যা কত, তা অনুমান করা বা গুনে দেখা অনেক সহজ।

আরও পড়ুন
বিজ্ঞানীরা বহিঃসৌরগ্রহ আবিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কৌশল ব্যবহার করেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রানজিট পদ্ধতি। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলো খোঁজা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অনুমান করেছেন, প্রতিটি নক্ষত্রের অন্তত একটি গ্রহ অবশ্যই আছে। একটি সাধারণ নক্ষত্রের পরিবার কেমন, তা জানার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের প্রতিবেশী নক্ষত্র থেকে তথ্য নিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বহিঃসৌরগ্রহ আবিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কৌশল ব্যবহার করেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রানজিট পদ্ধতি। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলো খোঁজা হয়। এ ছাড়াও আছে রেডিয়াল ভেলোসিটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আবিষ্কার করা হয়েছে ৫১ পেগাসি বি গ্রহ। প্রথম আবিষ্কৃত বর্হিগ্রহ এটি। ২০১৯ সালে এ জন্য মাইকেল মায়োর ও দিদিয়ের কুইলোজকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কীভাবে গ্রহ খোঁজেন, সেটা অনেক বড় আলোচনা। অন্য কোনো লেখায় এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

প্রতিটি নক্ষত্রের অন্তত একটি গ্রহ আছে।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

তবে এখন পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে কোনো গ্রহ খুঁজে পাননি। অনেক গ্রহ থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেগুলো এত দূরে যে বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে সম্ভাব্য কিছু বহিঃসৌরগ্রহের তথ্য ইতিমধ্যেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা প্রকাশ করেছে।

প্রতিটি গ্যালাক্সিতে আছে আবার ১০০ বিলিয়নের মতো নক্ষত্র। প্রতিটি নক্ষত্রের অন্তত একটি গ্রহ আছে। তাহলে মহাবিশ্বে মোট গ্রহ থাকার সম্ভাবনা ১০২৩টি।

এবার তাহলে আবারও প্রশ্নটিতে ফেরা যাক। কয়টি গ্রহ আছে মহাবিশ্বে? এতদূর লেখাটি পড়লে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, মহাবিশ্বে গ্রহের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা অনুমান করতে পারি। মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি আছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। প্রতিটি গ্যালাক্সিতে আছে আবার ১০০ বিলিয়নের মতো নক্ষত্র। প্রতিটি নক্ষত্রের অন্তত একটি গ্রহ আছে। তাহলে মহাবিশ্বে মোট গ্রহ থাকার সম্ভাবনা ১০২৩টি। ১-এর পরে ২৩টি শূন্য! ট্রিলিয়নের যে হিসেব দেখিয়েছি, তার সঙ্গে তুলনা করে দেখুন, এই সংখ্যাটি আসলে কত বড়। আর মহাবিশ্বে গ্রহের সংখ্যাই-বা কত! 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স 

আরও পড়ুন