আমাদের পরিচিত সব মহাজাগতিক বস্তুই ঘুরছে। পৃথিবী ঘুরছে। সেই ঘূর্ণনে ঘটছে সূর্যের উদয়-অস্ত। ঘুরছে সূর্য। সূর্যের বিষুব অঞ্চল পুরো একবার ঘুরতে সময় নেয় ২৪ দশমিক ৪৭ দিন। মেরু অঞ্চলে সময়টা বেশি। ৩৮ দিন। ঘুরছে চাঁদ। পৃথিবীর চারপাশে ঘোরার পাশাপাশি একই সময়ে চাঁদ নিজের অক্ষের চারপাশেও ঘূর্ণন শেষ করে। কাজটা করতে সময় লাগে ২৭ দশমিক ৩২ দিন।
ঘুরছে অন্য গ্রহ-উপগ্রহরাও। বুধ, শুক্র, বৃহস্পতিরাও নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে সবচেয়ে মিল মঙ্গল গ্রহের। এটি নিজের অক্ষের চারপাশে ঘোরে ১ দশমিক ০৩ দিনে। শুক্র গ্রহ তো আবার ঘোরে অন্য গ্রহদের থেকে উল্টো দিকে। যার ফলে এতে সূর্যের উদয় ঘটে পশ্চিমে। ইউরেনাসের ঘূর্ণন তো আরও অদ্ভুত। এর ঘূর্ণন–অক্ষ কক্ষপথের সঙ্গে ৯৭ ডিগ্রি বেঁকে আছে। ফলে গ্রহটির একটি মেরু সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। এমন ঘটনা আর কোনো গ্রহেই দেখা যায় না। একটি অংশে চিরকালের জন্য রাত আর অপর অংশ সব সময় দিন! কী অদ্ভুত!
সৌরজগতে গ্রহরা ছাড়াও আছে প্রায় আট লাখ মাইনর প্ল্যানেট বা ক্ষুদ্র গ্রহ। বামন গ্রহদেরও (যেমন প্লুটো) সংজ্ঞা অনুসারে ক্ষুদ্র ধরা হয়। এদের সবাইও কিন্তু ঘুরছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে জোরে ঘুরছে ২০১৭কিউজি১৮ নামের বস্তুটি। নিজের অক্ষের সাপেক্ষে পাক খেতে এর সময় লাগে মাত্র ১২ সেকেন্ড। অবশ্য এর ব্যাসও ছোট। মাত্র ১০ মিটার। ঘুরতে সমান সময় নেয় আরেক ক্ষুদ্র গ্রহ ২০১৯বিই৫। তবে ব্যাস বেশি-৩০ মিটার।
ছায়াপথের ঘূর্ণন বেগটাও মারাত্মক। সেকেন্ডে ২৭০ কিলোমিটার। অথচ একটু আগে আমরা পৃথিবী, সূর্যদের বেগ দেখেছিলাম মিটারে। অথচ এই বিশাল বেগ নিয়েও এর একবার ঘুরতে সময় লাগে ২০ কোটি বছর।
আবার উল্টো ঘটনাও আছে। মাত্র ৭৮০ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণুর পুরো এক আবর্তনে সময় লাগে ৭৮ দিন। নাম (১৬২০৫৮) ১৯৯৭এই১২। এখন পর্যন্ত জানা তথ্যমতে এটিই মহাবিশ্বের সবচেয়ে ধীরে ঘোরা বস্তু। গ্রহদের মধ্যে শুধু বুধের ঘূর্ণনই এর কিছুটা কাছাকাছি (৫৮ দিন)। এর বাইরে মঙ্গল ছাড়া আর সব গ্রহই পৃথিবীর চেয়ে কম সময়ে একবার পূর্ণ-আবর্তন করে।
সূর্য একাই ঘুরছে না, ঘুরছে সূর্যের মতো কোটি কোটি নক্ষত্রও। সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। এতে একবার পূর্ণ আবর্তন হয় ৮৩ দিনে। আর আবর্তন বেগ সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মিটার। অবশ্য সূর্যের আবর্তন বেগ এর দ্বিগুণের বেশি। সেকেন্ডে ২০৫ মিটার। পৃথিবীর তো আরও বেশি। সেকেন্ডে ৪৬৫ মিটার।
বোঝাই যাচ্ছে, মহাজাগতিক সব বস্তুই ঘুরছে। এই যেমন সূর্যের আরেক প্রতিবেশী নক্ষত্র বার্নাডের তারা। এর আবর্তন সম্পন্ন হয় ১৩০ দিনে। একইভাবে ঘুরছে দূরের বা কাছের অন্য সব নক্ষত্রও।
নক্ষত্রের সমাবেশ নিয়ে গড়ে ওঠে একেকটি ছায়াপথ। আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা। আকৃতিটা সর্পিল। আর আকারটা কত বিশাল! এক প্রান্ত থেকে আলো নিক্ষেপ করলে সে আলো আরেক প্রান্তে পৌঁছাবে এক লাখ বছর পর। মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডাসহ ৫০-এর বেশি ছায়াপথ নিয়ে একটি গুচ্ছের নাম লোকাল গ্রুপ। লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ছায়াপথ আমাদের আকাশগঙ্গা। মজার ব্যাপার হলো আকাশগঙ্গাও কিন্তু আবর্তিত হচ্ছে, যেমন করে আবর্তিত হচ্ছে এর অভ্যন্তরের গ্রহ, উপগ্রহ, গ্যাসীয় কণারা। ঠিক যেন বাচ্চাদের খেলনা পিনহুইল।
ছায়াপথের ঘূর্ণন বেগটাও মারাত্মক। সেকেন্ডে ২৭০ কিলোমিটার। অথচ একটু আগে আমরা পৃথিবী, সূর্যদের বেগ দেখেছিলাম মিটারে। অথচ এই বিশাল বেগ নিয়েও এর একবার ঘুরতে সময় লাগে ২০ কোটি বছর। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, একটু আগে আমরা একটি গ্রহাণুকে সবচেয়ে ধীর বস্তু বলেছিলাম। আকাশগঙ্গা কি তার চেয়ে ধীর নয়? আসলে ধীরের বিচার করা হয় বেগ দিয়ে, আবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে নয়।
প্রাথমিক মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতেই আমরা সাধারণত দুটি জিনিস অনুমান করে নিই। প্রাথমিক মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম উপস্থিত ছিল। আর কিছু অঞ্চল ছিল অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি ঘন। ঘন অঞ্চলে গ্যাসেরা পুঞ্জীভূত হয়ে ভ্রূণছায়াপথীয় মেঘ তৈরি করে।
কিন্তু আকাশগঙ্গা এই ঘূর্ণন কোথায় পেল? এ থেকে কি আমরা মহাবিশ্বের ঘূর্ণনের কোনো হদিস করতে পারি? এখানে উল্লেখ্য, সৌরজগৎ, মানে সূর্য ও তার দলবলের ছায়াপথের কেন্দ্রকে পুরো একবার ঘুরে আসতে সাড়ে ২২ কোটি বছর সময় লাগে। তার মানে, মহাশূন্যে ছায়াপথের আবর্তন ছাড়া কোনো গতি নেই ধরে নিলে আমরা সর্বশেষ মহাশূন্যের একই জায়গায় ছিলাম ২২ কোটি বছর আগে। মানে যখন ডাইনোসরদের উত্থান হচ্ছিল।
বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার ঘূর্ণনের ছবি পেয়েছেন একগুচ্ছ বেতার টেলিস্কোপের সাহায্যে। এদের সম্মিলিত নাম ভেরি লার্জ বেজলাইন অ্যারে (ভিএলবিএ)। তারা নিবিড়ভাবে খেয়াল করলেন, কোনো কোনো জায়গায় নতুন নক্ষত্র তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া দেখলেন, কোনো জায়গায় গ্যাসীয় অণু বেতার তরঙ্গের তীব্রত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন জায়গাগুলোয় বেতার তরঙ্গ খুব শক্তিশালী হয়।
পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে এই অণুগুলোর অবস্থান দূরবর্তী বস্তুর সাপেক্ষে বদলে যায়। এই পরিবর্তন মেপে সম্পূর্ণ ছায়াপথের ঘূর্ণন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আবার এই প্রক্রিয়া থেকেই পুরো ছায়াপথের ভরও বোঝা যায়। তা ঠিক আছে, কিন্তু ছায়াপথ কেন ঘুরছে?
প্রাথমিক মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতেই আমরা সাধারণত দুটি জিনিস অনুমান করে নিই। প্রাথমিক মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম উপস্থিত ছিল। আর কিছু অঞ্চল ছিল অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি ঘন। ঘন অঞ্চলে গ্যাসেরা পুঞ্জীভূত হয়ে ভ্রূণছায়াপথীয় মেঘ তৈরি করে। আর সবচেয়ে ভারী অঞ্চলগুলো গুটিয়ে এসে নক্ষত্রে পরিণত হয়।
এই নক্ষত্রগুলো দ্রুত জ্বালানি ফুরিয়ে ফেলে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তৈরি হয় বটিকাকার নক্ষত্রগুচ্ছ। কিন্তু মহাকর্ষের ফলে গ্যাসেরা আরও সংকুচিত হতে থাকে। গ্যাসেরা গুটিয়ে আসার সময় তৈরি হয় আবর্তনশীল চাকতি। আবর্তনশীল এই চাকতি মহাকর্ষকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন গ্যাস ও ধুলিকণাকে আকৃষ্ট করতে থাকে। এই চাকতির ভেতরে জন্ম নেয় নতুন নতুন নক্ষত্র। মূল মেঘের বাইরের দিকে থেকে যায় বটিকাকার নক্ষত্রগুলো। এ ছাড়া গ্যাস, ধূলিকণা ও ডার্ক ম্যাটার।
বিষয়টাকে সহজ করে চিন্তা করা যাক। ধরুন আমরা পিৎজা বানাচ্ছি। তবে একটু হাস্যকর উপায়ে। গোল করে ময়দার তাল বানিয়ে নিয়ে সেটা ঘুরিয়ে ছুড়ে মারলাম ওপরের দিকে। গোল এই তালের ঘূর্ণনে তৈরি হবে একটি চ্যাপ্টা চাকতি। আকাশগঙ্গাও কিন্তু দেখতে এই চ্যাপ্টা চাকতির মতোই। অবশ্যই সেই চাকতিটি আরও জটিল অবস্থায় আছে। চাকতির এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র।
এবার দেখা যাক আকাশগঙ্গা কোন দিকে ঘুরছে। আসলে এটা নির্ভর করছে আমরা কীভাবে দেখছি, তার ওপর। একটি লাটিমের কথা ভাবা যাক। ধরুন, একে আমরা একটি গ্লাস টেবিলের ওপর ঘড়ির কাঁটার দিক বরাবর ঘুরিয়ে দিলাম। এবার যদি আমরা টেবিলের নিচ থেকে এর দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে এটি ঘুরছে ভিন্ন দিকে—ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে।
এটা আমরা অসংখ্য ভিন্ন উপায়ে বুঝতে পারি। একটি কাগজে গোল করে ঘড়ির কাঁটার দিকে একটি তির আঁকি। কাগজটিকে আলোর সামনে ধরে অন্য পাশ থেকে দেখলে মনে হবে তির আঁকা হয়েছে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। ফলে ঘূর্ণনের দিকও আসলে নির্ভর করে আমরা কোন দিক থেকে দেখছি, তার ওপর।
প্রোটন মৌলিক কণা না হলেও কোয়ার্ক ঠিকই মৌলিক। মজার ব্যাপার হলো, ঘূর্ণন সব মৌলিক কণার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। অবশ্য কণার ঘূর্ণনকে আমাদের চেনাজানা ঘূর্ণনের সঙ্গে ঠিক মেলানো যাবে না। লাটিম, গ্রহ আর কণা এক জিনিস নয়।
তাহলে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের আকাশগঙ্গার ঘূর্ণন কোন দিকে? এর উত্তরের জন্য আবার ছায়াপথের আকৃতিও জানতে হবে। আকাশগঙ্গা অনেকগুলো সর্পিল বাহু নিয়ে গঠিত। তাই একে সর্পিল ছায়াপথ বলা হয়। সেই হিসাবে সর্পিল ছায়াপথদের অর্ধেক অংশ ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বাকি অংশ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরার কথা। কয়েক বছর আগে ধারণাটি প্রমাণও করেছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ, প্রায় ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীত দিকে ঘোরা ছায়াপথের সংখ্যা সমান। বিষয়টি আবার আইসোট্রপিক মহাবিশ্বেরও একটি প্রমাণ। আইসোট্রপিক মহাবিশ্ব মানে মহাবিশ্ব সব দিকে একই রকম দেখায়। বড় মাপকাঠিতে আমরা মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকাব, দেখব প্রায় একই রকম চিত্র।
বিশাল মহাবিশ্ব থেকে চোখ ফিরিয়ে একটু ক্ষুদ্র জগতে আসা যাক। কোয়ার্ক, প্রোটনরাও কি গ্রহ-নক্ষত্রের মতো ঘোরে? পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অন্যতম কণা প্রোটন। যত ভারী পরমাণু, তত বেশি প্রোটন। প্রোটন সংখ্যাই মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা, যা দিয়ে পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ধারিত হয়। নিউক্লিয়াসে আরও থাকে নিউট্রন, যার একমাত্র ব্যতিক্রম একক ভরের হাইড্রোজেন। প্রোটন আর নিউট্রন দুটোই আবার কোয়ার্ক দিয়ে গড়া।
প্রোটন মৌলিক কণা না হলেও কোয়ার্ক ঠিকই মৌলিক। মজার ব্যাপার হলো, ঘূর্ণন সব মৌলিক কণার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। অবশ্য কণার ঘূর্ণনকে আমাদের চেনাজানা ঘূর্ণনের সঙ্গে ঠিক মেলানো যাবে না। লাটিম, গ্রহ আর কণা এক জিনিস নয়। অতিপারমাণবিক কণারা আসলে আচরণ করে বিন্দুর মতো, যার নেই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা। অন্য কথায় এটি একটি মাত্রাহীন বস্তু। কিন্তু হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির কারণে বিন্দু কণার বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিকের চেয়ে জটিল হয়ে ওঠে। কারণ অভ্যন্তরীণ কোনো কাঠামোবিহীন মৌলিক কণাও স্থান দখল করে।
কোয়ার্করা হলো স্পিন-হাফ কণা। মানে এদের গঠনের প্রাথমিক বিন্যাসে ফিরে আসতে হলে দুবার পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে হয়। ফলে কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত প্রোটন ও নিউট্রন কণাও স্পিন-হাফ কণা। একই বৈশিষ্ট্য দেখা যায় নিউক্লিয়াসের বাইরের কণা ইলেকট্রনের মধ্যেও। একটি প্রোটনে থাকে দুটো আপ-কোয়ার্ক ও একটি ডাউন-কোয়ার্ক। আবার একটি নিউট্রনে থাকে দুটো ডাউন-কোয়ার্ক ও একটি আপ-কোয়ার্ক। প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলের নাম সবল নিউক্লীয় বল। নাম দেখেই বোঝা যায়, এর কাজের ক্ষেত্র নিউক্লিয়াস। কোয়ার্কদের ধরে রাখে এই বলই। আবার প্রোটন আর নিউট্রনকেও জড়িয়ে রাখে এই একই বল। কথাটা আসলে আগের কথারই ভিন্ন রূপ।
এই সবল বলের কারণেই বড় বড় নিউক্লিয়াস তৈরি হতে পারে। অন্যথায় বড় মৌলের ক্ষেত্রে প্রোটন-প্রোটন ধনাত্মক চার্জের বিকর্ষণে নিউক্লিয়াস ভেঙে চুরমার হয়ে যেত। এখন, ইলেকট্রনের মতো প্রোটন ও নিউট্রনও কিন্তু ঘোরে, যার দুটোই কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। আগেই বলেছি, এ ঘূর্ণন আমাদের পরিচিত ঘূর্ণনের মতো নয়। ইলেকট্রনের ঘূর্ণন তো আরও বেশিই জটিল।
এবার আসা যাক পুরো নিউক্লিয়াসের কথায়। নিউক্লিয়াসের কি ঘূর্ণন আছে? আবারও মনে করিয়ে দিই, পরমাণুর জগতের এসব ঘূর্ণন লাটিম বা গ্রহের ঘূর্ণনের মতো নয়। বোঝার সুবিধার্থে আমরা নিউক্লিয়াসকে ঘুরন্ত টেনিস বলের ক্ষুদ্র রূপ ভাবতে পারি। তবে এভাবে ভাবতে ভাবতে একসময় আমরা হারিয়ে যাব ভুলের রাজ্যে। তা যা–ই হোক, অতিপারমাণবিক জিনিসদের দুটো বৈশিষ্ট্য আছে। কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ ও ঘূর্ণনজনিত কৌণিক ভরবেগ। অবশ্য এরা ঠিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং বৈশিষ্ট্য নির্ধারক।
তবে চিরায়ত পদার্থবিদ্যায় কৌণিক ভরবেগ একটি অবিচ্ছিন্ন সংখ্যা। মানে এর মান যেকোনো সংখ্যা বা যেকোনো দুটি সংখ্যার মধ্যবর্তী যেকোনো সংখ্যা হতে পারে। সেটা হতে পারে ২ দশমিক ১১ কিংবা ৩ দশমিক ০১২ একক অথবা এই দুটি সংখ্যার মতো যেকোনো দুটি সংখ্যার মধ্যবর্তী অন্য যেকোনো সংখ্যা।
এখন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের স্পিন বা ঘূর্ণন শূন্য বা অশূন্য দুটোই হতে পারে। নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার যোগফল বিজোড় সংখ্যা হলে নিউক্লিয়াসটির ঘূর্ণন থাকবে। যেমন কার্বনের ১২ ভরের আইসোটোপের স্পিন থাকবে না। কিন্তু কার্বন-১৩–এর স্পিন থাকবে।
তবে কোয়ান্টাম মেকানিকসের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা দিয়ে ঘূর্ণন বুঝতে গেলে মাথায়ই ঘূর্ণন শুরু হবে। এই ব্যাখ্যা বলছে, অতিপারমাণবিক কণাদের সাধারণ অর্থে ভৌত কোনো অস্তিত্বই নেই। এরা থাকে সম্ভাবনা ঘনত্ব নিয়ে। যতক্ষণ না এদের পর্যবেক্ষণ করা যায়। পর্যবেক্ষণের ফলে এরা অস্তিত্ব লাভ করে। পায় নির্দিষ্ট অবস্থান। যে কণারা নিছক সম্ভাবনা হিসেবে বিরাজ করে, তাদের আবার গঠন বা ঘূর্ণন নিয়ে কিছু বলার সুযোগ কোথায়?
আসলে ঘূর্ণন বলতে বোঝায় বস্তুর মোট কৌণিক ভরবেগ। এই কথা কিন্তু গ্রহের ক্ষেত্রেও খাটে। অর্থাৎ, একটি গ্রহের সব কটি মৌলিক কণার কক্ষপথীয় কৌণিক ও ঘূর্ণন ভরবেগের যোগফলই গ্রহটির ঘূর্ণন। একই কথা খাটে পরমাণু, পরমাণুর নিউক্লিয়াস কিংবা প্রোটনের মতো যৌগিক কণার ক্ষেত্রেও।
তবে চিরায়ত পদার্থবিদ্যায় কৌণিক ভরবেগ একটি অবিচ্ছিন্ন সংখ্যা। মানে এর মান যেকোনো সংখ্যা বা যেকোনো দুটি সংখ্যার মধ্যবর্তী যেকোনো সংখ্যা হতে পারে। সেটা হতে পারে ২ দশমিক ১১ কিংবা ৩ দশমিক ০১২ একক অথবা এই দুটি সংখ্যার মতো যেকোনো দুটি সংখ্যার মধ্যবর্তী অন্য যেকোনো সংখ্যা। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিকসে কৌণিক ভরবেগ হলো কোয়ান্টায়িত। এর মান যেকোনো কিছু হতে পারে না। হবে শুধু প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবককে পাইয়ের (৩ দশমিক ১৪) চার গুণ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত সংখ্যার গুণিতক আকারে। কথাটি নিলস বোর ১৯১৩ সালে প্রস্তাব করেন। এরই ভিত্তিতে তিনি হাইড্রোজেনের বর্ণালি রেখার ব্যাখ্যা দেন।
অর্থাৎ কোয়ান্টায়িত হলেও বিন্দুসদৃশ মৌলিক কণাদেরও ঘূর্ণন থাকতে পারে। এর কারণ স্পষ্ট নয়। অনেকের মতে, হতে পারে এসব মৌলিক কণাও অন্য কণা দিয়ে তৈরি।
এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক। মহাবিশ্ব নিজেও কি ঘুরছে? অন্য বহু বিষয়ের মতো এটিও সরাসরি জানার কোনো উপায় নেই। মহাবিশ্বকে তো আর পরীক্ষাগারে রেখে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করার সময় ধরে নিয়েছেন, মহাবিশ্ব ঘুরছে না। আরও ধরে নিয়েছেন, এটি আইসোট্রপিক। মানে বড় মাপকাঠিতে চিন্তা করলে সব দিকে একই রকম দেখায়। বড় মাপকাঠিতে মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করতে আমরা ব্যবহার করি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব। আরও ভালো করে বললে আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ। এই সমীকরণের সঙ্গে অঘূর্ণনশীল মহাবিশ্বের ধারণার বিরোধ নেই। আবার সমীকরণ এ–ও বলছে না যে মহাবিশ্ব ঘুরতে পারবে না।
তবে বিজ্ঞান শুধু অনুমান করে বসে থাকে না। সেটা যাচাইও করে। আমাদের দেখা মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো আলোর নাম মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি (সংক্ষেপে সিএমবি)। বিগ ব্যাংয়ের ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর পর এই আলো তৈরি হয়। আলোটির রেশ মহাবিশ্বে আছে আজও।
এই আলোর প্রতিক্রিয়া মহাবিশ্বের সব দিকে একই রকম। তবে তাপমাত্রায় সামান্য ওঠা-নামা আছে। এক ডিগ্রির এক হাজার ভাগের এক ভাগ। এর কারণ হলো মহাবিশ্বের জন্মের পর গড়িয়ে যাওয়া সময়, মহাবিশ্বের উপাদান ও আকার। এই পার্থক্যগুলো কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন, মহাবিশ্ব কোনো নির্দিষ্ট দিকে বেঁকে আছে কি না, অথবা ঘুরছে কি না বা প্রসারণ কোনো এক দিকে অন্য দিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে কি না।
২০১৬ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স জার্নালের এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, সিএমবি আলো থেকে মহাবিশ্বের ঘূর্ণনের পক্ষে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া দেখা গেছে, মহাবিশ্ব আইসোট্রপিক হওয়ার সম্ভাবনা আইসোট্রপিক না হওয়ার তুলনায় ১ লাখ ২০ হাজার গুণ। আবার অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস জার্নালের একটি গবেষণা বলছে, মহাবিশ্ব সুষম (homogeneous) হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। মানে বড় মাপকাঠিতে মহাবিশ্বের আলাদা আলাদা অংশ একই রকম। আইসোট্রপিক কথাটা একটু ভিন্ন। এটি অনুসারে আমরা মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকাই, একই রকম চিত্র দেখব। অবশ্যই বড় মাপকাঠিতে, ঠিক যেমন একটি বিশাল ঘন বনে যেদিকেই তাকাই, মোটামুটি একই চিত্র দেখা যাবে।
এসব গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সুষম ও অঘূর্ণনশীল। এ ধারণা সহজে বদলে যাওয়ার মতো বিষয়ও নয়। ভবিষ্যতে সিএমবির উপাত্ত ও বিশ্লেষণপ্রক্রিয়া আরও উন্নত হবে অবশ্যই। তবে মহাবিশ্বের এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো না বদলানোই বেশি স্বাভাবিক।
২০১৬ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স জার্নালের এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, সিএমবি আলো থেকে মহাবিশ্বের ঘূর্ণনের পক্ষে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া দেখা গেছে, মহাবিশ্ব আইসোট্রপিক হওয়ার সম্ভাবনা আইসোট্রপিক না হওয়ার তুলনায় ১ লাখ ২০ হাজার গুণ।
তবে ২০১১ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছিল। নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ফিজিকস লেটার্স জার্নালে। নিবন্ধের গবেষকেরা ১৫ হাজারের বেশি ছায়াপথ নিয়ে কাজ করেছিলেন। এ থেকে তাঁদের দাবি ছিল, মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল ঘুরন্ত অবস্থায়, যা চলছে আজ অবধি। সে ঘূর্ণন চলছে নির্দিষ্ট একটি কক্ষকে ঘিরে। অর্থাৎ, প্রাথমিক মহাবিশ্বও একটি নির্দিষ্ট অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরত।
প্রধান গবেষক লোংগো ও তাঁর দল ১৫ হাজার ১৫৮টি ছায়াপথ নিয়ে কাজ করেছিলেন। দেখা গেল, বেশির ভাগ ছায়াপথ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরছে। লোংগোর মতে এটা কোনো দৈব ঘটনা হতে পারে না। ছায়াপথগুলোর একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘোরার অর্থ হবে মহাবিশ্বের একটি নেট কৌণিক ভরবেগ থাকবে। আর কৌণিক ভরবেগ যেহেতু সংরক্ষিত থাকার কথা, তাই মহাবিশ্ব নিশ্চয়ই ঘুরন্ত অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল।
লোংগোর মতে, আমরা যদি দেখাতে পারি মহাবিশ্বে এখনো প্রাথমিক কৌণিক ভরবেগ বজায় আছে, তাহলে বোঝা যাবে আমাদের মহাবিশ্ব অন্য কোনো বড় জায়গার মধ্যে অবস্থিত। এবং এটি ঘুরছে। মহাবিশ্বের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক এই কৌণিক ভরবেগ ছড়িয়ে গিয়েছিল বস্তুপিণ্ডের মধ্যে। যার কারণেই হয়তো ছায়াপথরা নির্দিষ্ট দিকে ঘুরছে। অন্য কারণেও ছায়াপথ নির্দিষ্ট দিকে হয়তো ঘুরতে পারে, তবে ঘুরন্ত প্রাথমিক মহাবিশ্ব দিয়েই ব্যাখ্যাটা সরল হয়। আর সরল ব্যাখ্যাই বিজ্ঞান সব সময় বেশি পছন্দ করে।
দলটি একই গবেষণা উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশের ছায়াপথ নিয়ে করেছেন। আগেই আমরা বলেছি, ঘূর্ণনের দিক নির্ভর করে আমরা কোন দিক থেকে দেখছি, তার ওপর। তারা দেখেছেন, দক্ষিণ গোলার্ধে আবার ডান–আবর্তী বা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরা ছায়াপথের সংখ্যা প্রায় একই পরিমাণ বেশি। তিনি ও তাঁর দল বর্তমানে আরও বেশি উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে।
তবে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিটা বাকল বলছেন, ঘূর্ণনশীল মহাবিশ্বের পক্ষে শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। তাঁর মতে, ছায়াপথের ঘূর্ণন স্থানীয় কোনো মহাকর্ষীয় প্রভাবে হওয়া খুবই সম্ভব। ফলে মহাবিশ্বের ঘূর্ণনের এই মত ২০১৬ সালের গবেষণার চেয়ে একটু দুর্বল।
আরেকটি বিষয় হলো, মহাবিশ্বের ভেতরের বস্তু নিয়ে গবেষণা করে পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া আসলেই কঠিন। মহাবিশ্ব নিজে এর ভেতরের নিয়ম মানতে বাধ্য নয়। যে কারণে ছায়াপথগুলো আপাতদৃষ্টিতে আপেক্ষিকতার নিয়ম ভেঙে আলোর চেয়ে জোরে পরস্পর থেকে দূরে সরে। আসলে ছায়াপথরা তো দূরে সরে স্থান-কালের প্রসারণের কারণে। প্রসারণগতি ছায়াপথদের নিজেদের গতি নয়। আর স্থান-কাল নিজে আপেক্ষিকতা মানতে বাধ্য নয়।
তবে অঘূর্ণনশীল মহাবিশ্বের ধারণায় রোমাঞ্চের যথেষ্ট অভাব। সে ক্ষেত্রে একটু ভেবে দেখা যাক, কোনোভাবে মহাবিশ্বকে ঘোরানো যায় কি না। মজার ব্যাপার হলো মহাবিশ্বের সেই ক্ষেত্র সমীকরণগুলো থেকে ঘুরন্ত মহাবিশ্বেরও সমাধান পাওয়া সম্ভব। একে বলা হয় গোডেলের মহাবিশ্ব। গণিতবিদ কার্ট গোডেল আইনস্টাইনের সমীকরণ থেকে ঘুরন্ত মহাবিশ্বের সমাধানটি বের করেন।
মূলত ছোট্ট লাটিম বা জাইরোস্কোপের মুখ যেদিকে থাকে, দূরের বস্তুগুলো মহাবিশ্বের মধ্যে সেদিকে মুখ করে ঘুরবে। গোডেলের স্থান-কালে গাণিতিকভাবে এতে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটবে।
এ সমাধান থেকে দেখা গেল, নতুন ধরনের একটি স্থান-কাল পাওয়া যাচ্ছে। আইনস্টাইনের সমীকরণ থেকে অনেকগুলো গাণিতিক মডেল বের করা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এর সব কটি সমাধানই আমাদের মহাবিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। এই মডেলগুলো যা বলছে, তা বাস্তব পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে আমরা বুঝতে পারব, এগুলো আমাদের মহাবিশ্বের জন্য চলবে কি না। তবে চলবে কি না, সেটা তো যাচাইয়ের ব্যাপার। মজার ব্যাপার হলো, কার্ট গোডেল এই সমাধান বের করার মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার সূত্র ব্যবহার করে অতীতে ভ্রমণ করার সম্ভাবনা সবার আগে খুঁজে পান।
কিন্তু পুরো মহাবিশ্বই আবর্তিত হচ্ছে—এই কথার মানে কী? আবর্তিত হওয়ার মানে হলো, কোনো স্থির প্রসঙ্গ বিন্দুর উপস্থিতি, যাকে কেন্দ্র করে বস্তুটি ঘুরবে। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, ‘কিসের সাপেক্ষে ঘুরছে?’ উত্তরটা হবে একটু গুরুগম্ভীর। মূলত ছোট্ট লাটিম বা জাইরোস্কোপের মুখ যেদিকে থাকে, দূরের বস্তুগুলো মহাবিশ্বের মধ্যে সেদিকে মুখ করে ঘুরবে। গোডেলের স্থান-কালে গাণিতিকভাবে এতে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটবে। আপনি যদি পৃথিবী থেকে অনেক দূর ভ্রমণ করে আবার ফিরে আসেন, তবে সম্ভাবনা আছে যে আপনি পৃথিবীতে ফিরে আসবেন রওনা দেওয়ার আগের কোনো সময়ে!
নিজের সমীকরণ থেকে এই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে আইনস্টাইন খুব হতাশ হয়েছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব কখনো টাইম ট্র্যাভেল বা সময় ভ্রমণের সুযোগ রাখবে না। কিন্তু যদিও গোডেলের সমাধান আইনস্টাইনের সমীকরণ থেকেই এসেছে, তবু এটি আসলে আমাদের মহাবিশ্বের জন্য খাটবে না। কারণ, পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা জানি যে আমাদের মহাবিশ্ব ঘুরছে না (আবর্তন করছে না), বা করলেও তা খুব নগণ্য।
ফলে অরোমাঞ্চকর হলেও আপাতত ঘূর্ণনবিহীন মহাবিশ্বেই থাকতে হবে আমাদের!