সৌরজগৎ রহস্যময়। আটটি গ্রহ, শত শত উপগ্রহ আর গ্রহাণুর বাইরেও সৌরজগতে আরও অনেক কিছু আছে। সেগুলোর সবটা কি আমরা জানি? এই লেখায় এমন কয়েকটি রহস্য নিয়ে আলোচনা রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে হয়তো আপনি জানেন না। মিলিয়ে দেখুন তো, কয়টির ব্যাপারে আপনি আগে জানতেন?
১. ইউরেনাসের ওপর আপনি দাঁড়াতে পারবেন না!
সৌরজগতের গ্যাসীয় গ্রহগুলোতে ভ্রমণ করতে গেলে আপনি একটু দ্বিধায় পড়তে পারেন। কারণ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনের মতো গ্রহে কোনো কঠিন বা শক্ত পৃষ্ঠ নেই! একটা পাথুরে কেন্দ্র আছে ঠিকই, কিন্তু তাও হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের তৈরি বিশাল গোলক।
২. মঙ্গল গ্রহ দক্ষিণ মেরুর মতো ঠান্ডা!
মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণের চিন্তা করলে সঙ্গে আপনার মোটা জ্যাকেটটি নিতে ভুলবেন না! মজা করছি, এই মুহূর্তে তো মঙ্গল গ্রহে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি মানুষ সত্যিই মঙ্গলে যেতে পারে, তাহলে সেখানে গিয়ে দেখবে লাল গ্রহটির গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু সাধারণত এমন ঠান্ডা থাকে।
৩.শনি গ্রহের রিংগুলো পানির তৈরি
তর্কযোগ্যভাবে সৌরজগতে সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ শনি। গ্রহটির এই সৌন্দর্য এর রিংয়ের জন্য। এই রিং বা বলয়গুলো পানির তৈরি, প্রায় ৯০ ভাগই পানি। সূর্য থেকে শনি গ্রহ অনেক দূরে থাকায় পানি জমে বরফে পরিণত হয়। ভাবতে পারেন, তাহলে অন্য গ্রহের বলয় নেই কেন? এখানে জানিয়ে রাখি, শনিসহ মোট চারটি গ্রহের বলয় আছে। কিন্তু সেগুলো শনি গ্রহের বলয়ের তুলনায় পাতলা, তাই পৃথিবী থেকে স্পষ্ট দেখা যায় না।
৪. গ্যানিমিডের মহাসাগরে পৃথিবীর চেয়ে বেশি পানি রয়েছে
গ্রহরাজ বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় চাঁদ গ্যানিমিড। এই উপগ্রহের মহাসাগরে যত পানি আছে, তা পৃথিবীতেও নেই। গ্যানিমিড বুধ গ্রহের চেয়ে বড়। বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে না ঘুরে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরলে গ্যানিমিডও গ্রহ হতে পারত!
৫. শুক্র গ্রহের এক দিন বছরের চেয়েও দীর্ঘ
একটি গ্রহ সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে যত সময় লাগে, সেই সময়কে বলে বছর। আর দিন মানে নিজ অক্ষের চারপাশে গ্রহটির একবার ঘুরতে যত সময় লাগে। শুক্র গ্রহ ঘোরে সূর্যের কাঁটার বিপরীতে। এটি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় ধীরে ঘোরে। তাই শুক্র গ্রহের একদিন সম্পন্ন হতে হতে পেরিয়ে যায় এক বছর। মানে শুক্র গ্রহ নিজ অক্ষের চারপাশে একবার ঘোরা সম্পন্ন করার আগে সূর্যের চারপাশে ঘোরা হয়ে যায়। শুক্র গ্রহে একদিন হয় পৃথিবীর ২৪৩ দিনে, কিন্তু বছর হয় ২২৫ দিনে।
৬. প্লুটো সৌরজগতের একমাত্র বামন গ্রহ নয়
‘বামন গ্রহ’ শব্দটি হয়তো আপনার জানা আছে। ২০০৬ সালে প্লুটোকে গ্রহচ্যুত করে নাম দেওয়া হয় বামন গ্রহ। তবে সৌরজগতে এমন বামন গ্রহ আছে আরও পাঁচটি। প্লুটো, সেরেস, মাকেমাকে, হাউমিয়া এবং এরিস সম্পর্কে মোটামুটি সবার জানা। তবে সম্প্রতি একটি নতুন বামন গ্রহের কথা বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এর আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ২০১৫ টিজি৩৮৭, ডাকনাম ‘দ্য গবলিন’।
৭. প্লুটোই সৌরজগতের শেষ সীমানা নয়
ওর্ট ক্লাউড বরফাচ্ছন্ন ধ্বংসাবশেষের একটি বিশাল বলয়ের মতো, যা বিজ্ঞানীরা মনে করেন আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশ। তবে এখনো কেউ সরাসরি এটি দেখতে বা শনাক্ত করতে পারেনি। যদি পৃথিবী সূর্য থেকে মাত্র ১ সেন্টিমিটার দূরে থাকত, তাহলে ওর্ট ক্লাউড থাকত আধা কিলোমিটার দূরে! তা সত্ত্বেও, সৌরজগতের আরও কিছু দূরবর্তী অঞ্চল আমরা জানি, যেমন কুইপার বেল্ট।