সাড়ে ৪০০ কোটি বছরের পুরানো পানি

বিজ্ঞানী দলটি দেখান, আমরা যে পানি পান করছি তা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছরের পুরানো

পানির আরেক নাম জীবন। বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীর প্রাণের উদ্ভব হয়েছে এই পানি থেকেই। পানি না থাকলে পৃথিবী প্রাণের অস্তিত্ব যে ধ্বংসের মুখে পড়বে, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু পৃথিবীতে পানি কতোদিন আগে তৈরি হয়েছে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন দুজন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন ফ্রান্সের গ্রেনোবলের ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ইতালীয় জ্যোতিঃপদার্থবিদ সিসিলিয়া সেকারেলি এবং চীনের নানজিং অঞ্চলে অবস্থিত পার্পল মাউন্টেন অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফুজুন ডু।

তাঁদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য রীতিমতো বিস্ময়কর। বিজ্ঞানী দলটি দেখান, আমরা যে পানি পান করছি তা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছরের পুরানো। “We Drink Good 4.5-Billion-Year-Old Water” শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিওসায়েন্স ওয়ার্ল্ড-এর এলিমেন্ট জার্নালে।

সৌরজগতের মতো নক্ষত্র সিস্টেমগুলোতে গ্রহ ও নক্ষত্রের জন্মের সময়েই পানি তৈরি হওয়ার পরিবেশ থাকে। পৃথিবীর ভারী পানি পরীক্ষা করে ওই বিজ্ঞানীরা দেখেন এর উৎপত্তি প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে।

গ্রহ-নক্ষত্র তৈরি হয় আণবিক ধুলিমেঘ থেকে

দানবীয় আণবিক ধুলিমেঘ থেকে গঠিত হয় নক্ষত্র ও এর চারপাশের গ্রহ। এই মেঘের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে হাইড্রোজেন। এই পরমাণু পানির প্রধান উপাদান। হাইড্রোজেনের পরই ধুলিমেঘে থাকে হিলিয়াম, অক্সিজেন ও কার্বন মৌল। অক্সিজেন মৌল ধুলিকণার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে আণবিক মেঘকে শীতল করে।

তবে, পানি তৈরির জন্য অক্সিজেনের সঙ্গে হাইড্রোজেনের বিক্রিয়া হওয়া প্রয়োজন। নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখান, একটা সময় ধুলিমেঘের মাঝেই ঘটে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন বিক্রিয়া। তৈরি হয় দুই ধরনের পানি। একটি হাইড্রোজেনের সাধারণ পরমাণু ও অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি সাধারণ পানি। অন্যটি হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম ও অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি হওয়া ভারী পানি।

গবেষণায় দেখা গেছে, দুইটি পর্যায়ে পানি তৈরি হয় সৌরজগতে। প্রথম পর্যায়ের পানি নক্ষত্র তৈরি সময়েই ধুলিমেঘের মাঝে তৈরি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে পানি তৈরি হয় গ্রহ গঠনের সময়। তাঁদের মতে, পৃথিবীর ১ থেকে ৫০ শতাংশ পানি সৌরজগতের জন্মের প্রাথমিক পর্যায় থেকে এসেছে। বিজ্ঞানীরা এই পুরো প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করেছেন তাঁদের গবেষণাপত্রে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট