সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ হিসেবে পরিচিত শনি। সবচেয়ে রহস্যময় গ্রহও বলতে পারেন। তবে সুন্দর বা রহস্যময় যা-ই বলুন, তা এই রিং বা বলয়ের জন্যই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বলয় হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে!
২৩ মার্চ, রোববার এমন ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে শনির বলয় প্রায় দেখাই যাবে না। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়া বা মন খারাপের কিছু নেই। কারণ এটা কোনো স্থায়ী পরিবর্তন নয়। মহাজগতের স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতি ১৩ থেকে ১৫ বছর পরপর এ ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘রিং প্লেন ক্রসিং’।
সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে শনির প্রায় ২৯.৪ বছর লাগে। এটি সূর্যের চারপাশে ২৭ ডিগ্রি কোণে হেলে থেকে ঘোরে। এ কারণেই শনির বলয় কখনো পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে থাকে, আবার মাঝেমধ্যে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। শনির বলয় আসলে বরফ, ধূলিকণা ও পাথরের টুকরোর সমষ্টি। তা ছাড়া বলয়ের সংখ্যাও একটি নয়, ৭টি! এই বলয়গুলো প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু খুবই পাতলা, মাত্র ১০ মিটার পুরু।
চলতি বছরের রিং প্লেন ক্রসিং ঘটবে বাংলাদেশ সময়ে ২৩ মার্চ, রাত ১০টা ০৪ মিনিট থেকে। তখন শনির বলয়ের ঠিক সমতলে চলে আসবে পৃথিবী। ফলে পৃথিবী থেকে আর এ বলয় দেখা যাবে না। তবে এই দৃশ্য খালি চোখে দেখা বেশ কঠিন হবে।
সাধারণত পৃথিবী থেকে শনি গ্রহের দিকে তাকালে এসব বলয় আমাদের চোখে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। কিন্তু শনির কক্ষপথ এবং পৃথিবীর অবস্থানের কারণে কিছু সময়ের জন্য এগুলো সরু রেখার মতো হয়ে যায়। তখন এই বলয় আমরা পৃথিবী থেকে আর দেখতে পাই না।
চলতি বছরের রিং প্লেন ক্রসিং ঘটবে বাংলাদেশ সময়ে ২৩ মার্চ, রাত ১০টা ০৪ মিনিট থেকে। তখন শনির বলয়ের ঠিক সমতলে চলে আসবে পৃথিবী। ফলে পৃথিবী থেকে আর এ বলয় দেখা যাবে না। তবে এই দৃশ্য খালি চোখে দেখা বেশ কঠিন হবে। বিশেষ করে যারা মধ্য ও উত্তর গোলার্ধের অঞ্চলে থাকেন, তাঁরা ভোরের আলোয় শনিকে খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়বেন। তবে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর জ্যোতির্বিদেরা তুলনামূলক ভালোভাবে দেখতে পাবেন শনিকে।
আগেই যেমনটা বলেছি, স্থায়ীভাবে অদৃশ্য হবে না শনি গ্রহের বলয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এসব বলয় ধীরে ধীরে আবার দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। পরের কয়েক মাসের মধ্যে এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ২০৩২ সালের মধ্যে শনির বলয়গুলো পৃথিবী থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যবে।
প্রাচীনকাল থেকেই এ গ্রহের কথা জানত মানুষ। সে যুগে রোমান কৃষিদেবতা স্যাটার্নের নামানুসারে গ্রহটির নাম রাখা হয়েছিল স্যাটার্ন। বাংলায় একেই বলা হয় শনি।
সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনি। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। খালি চোখে দেখা যায়, এমন গ্রহের মধ্যে শনিই সবচেয়ে দূরে। পৃথিবী থেকে গ্রহটির দূরত্ব ১৫৯.০৬ কোটি কিলোমিটার। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের বেশির ভাগই হাইড্রোজেন, প্রায় ৯৬ ভাগ। এ ছাড়া রয়েছে কিছু হিলিয়াম ও অল্প পরিমাণে মিথেন ও অ্যামোনিয়া। পৃথিবী থেকে শনির আয়তন প্রায় ৭৬০ গুণ বেশি। ভরও বেশি প্রায় ৯৫ গুণ।
প্রাচীনকাল থেকেই এ গ্রহের কথা জানত মানুষ। সে যুগে রোমান কৃষিদেবতা স্যাটার্নের নামানুসারে গ্রহটির নাম রাখা হয়েছিল স্যাটার্ন। বাংলায় একেই বলা হয় শনি। ১৬১০ সালে টেলিস্কোপের সাহায্যে প্রথম গ্রহটি দেখেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। ১৬৫৯ সালে শনির বলয়ের রহস্য ভেদ করেন ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস।