চাঁদ কেন রাতে কিরণ দেয়

কমবেশি সব মানুষই রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। অনেকে মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে। মহাবিশ্বের কথা নামে এই বইয়ে সেই সেই রহস্যের কথা ছোটদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রাদুগা’ প্রকাশন থেকে, ১৯৮৩ সালে। ফেলিক্‌স ক্রিভিনের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। ছবি এঁকেছেন গালিনা সেমিওনভা। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…

তুমি কি জানো, চাঁদ মোটেই কিরণ দেয় না? চাঁদের কারণে আমরা আলো পাই, অথচ দেখা যাচ্ছে, চাঁদ নিজে কিরণ দেয় না। 

আয়নার ওপর যখন বাতির আলোর প্রতিফলন ঘটে, তখন আয়নাও ভাবতে পারে যে সে আলো দিচ্ছে। কিন্তু বাতি নিভিয়ে দেখো, আয়নাও সঙ্গে সঙ্গে আলো দেওয়া বন্ধ করে দেবে। বাতি ছাড়া সে কিরণ দিতে পারে না। চাঁদের ক্ষেত্রেও হুবহু তা-ই, সূর্য ছাড়া সে কিরণ দিতে পারে না। 

তোমাদের মধ্যে কেউ হয়তো বলতে পারে, কিন্তু চাঁদ তো আলো দেয় রাতে, যখন সূর্য থাকে না। কথাটা ঠিক নয়। সূর্য সব সময় আছে, এমনকি আমাদের এখানে যখন রাত, তখনো সূর্য কিরণ দেয়। আমাদের এখানে রাত হলে কী হবে, পৃথিবীর অন্য পাশে তো দিন। সেখানে উজ্জ্বল সূর্যের আলো, কেবল সে আলো আমরা দেখতে পাই না, এই যা। আমরা তাকে দেখতে পাই না বটে, কিন্তু চাঁদ দিব্যি দেখতে পায়! 

আমরা পৃথিবীতে বাস করি; আমাদের কাছে পৃথিবী এত বড় যে সূর্য যখন অন্য পিঠে থাকে, তখন পৃথিবী তাকে পুরোপুরি আড়াল করে ফেলতে পারে। কিন্তু চাঁদের বাস পৃথিবীতে নয়। সে কেবল পৃথিবীর চারধারে ঘোরে, তাই পৃথিবী কদাচিৎ চাঁদের কাছ থেকে সূর্যকে আড়াল করে রাখে। চাঁদও তখন সূর্যের আলো নিজের বলে চালান করে দেয়—পৃথিবীর যে পাশে সূর্যকে দেখা যায় না, সেখানে সূর্যালোকের প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু যখন সূর্য, চাঁদ আর পৃথিবী এক রেখায় এসে মেলে এবং পৃথিবী থাকে চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে, তখন কী হয়, দেখেছ কি? পৃথিবী যখন সূর্য থেকে চাঁদকে আড়াল করে রাখে, তখন চাঁদ কীভাবে কিরণ দেয়? 

তখন সে কিরণ দেয় না, আর এই অবস্থাটার নাম হয় চন্দ্রগ্রহণ। এই নাকি আলোর ‘উৎসের’ দশা! 

তা হলে আর বলছি কী! চাঁদ আসলে আলোর কোনো উৎসই নয়, সে অন্যের আলোর প্রতিফলকমাত্র, পরের আলোর অপহারক।

আর চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে একই রেখায় থাকে, তখন সে কীভাবে কিরণ দেয়? 

তখন সে নিজে তো কিরণ দেয়ই না, এমনকি সূর্যকেও পৃথিবী থেকে আড়াল করে রাখে। এর নাম সূর্যগ্রহণ—কেননা চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দেয়, পৃথিবীকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে। পৃথিবীকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে দেওয়া আলোর ‘উৎসের’ যোগ্য কাজ বলে মনে হচ্ছে কি? 

কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি যে চাঁদ আলোর উৎস নয়, সে পরের আলোর অপহারক। 

ঠিক এই কারণেই চাঁদের আবির্ভাব ঘটে রাতের বেলায়। তার যেটা অবশ্যই দরকার, তা হলো—পৃথিবীর অন্য পিঠে সূর্যের অবস্থান, যাতে তার সূর্যের আলো অপহরণ করাটা কারো চোখে না পড়ে এবং সত্যিকারের সূর্যালোকের সঙ্গে তার প্রতিফলিত আলোর কেউ তুলনা করতে না পারে। 

কিন্তু গ্রহণেই সে ধরা পড়ে যায়। 

এই কারণে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহণের সময় জ্যোতিষ্কমণ্ডলী চর্চা করতে ভালোবাসেন। গ্রহণ যখন শুরু হয়, তখনই সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যায় কার কিরণ দেওয়ার ক্ষমতা আছে, আর কার নেই।

(চলবে…) 

মূল: ফেলিক্‌স ক্রিভিন

অনুবাদ: অরুণ সোম 

* পাঠকের সুবিধার্থে বইয়ের মূলভাব ঠিক রেখে বানান রীতির কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।