শিগগিরিই পৃথিবীতে ফিরবে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসার স্যাটেলাইট সালসা। ৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে এই স্যাটেলাইট।
২০০০ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) একসঙ্গে ৪টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল মহাকাশে। পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে সম্পর্ক এবং পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র নিয়ে গবেষণার জন্য এসব কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়। সৌরবায়ু থেকে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র আমাদের কতটা রক্ষা করে, তা বোঝার জন্যই পাঠানো হয়েছিল এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলো। স্যাটেলাইটগুলোর নাম যথাক্রমে রুম্বা (ক্ল্যাস্টার ১), সালসা (ক্ল্যাস্টার ২), সাম্বা (ক্ল্যাস্টার ৩) ও ট্যাঙ্গো (ক্ল্যাস্টার ৪)। একসঙ্গে এই চারটি স্যাটেলাইটকে বলা হয় ক্লাস্টার স্যাটেলাইট।
এতদিন এগুলো ঠিকভাবেই কাজ করেছে। তবে এখন সেগুলো ফিরিয়ে আনা হবে পৃথিবীতে। ঠিক কী কারণে পৃথিবীতে ফেরানো হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে জানায়নি ইসা। হতে পারে এগুলোর কার্যক্ষমতা শেষ অথবা যে কাজের জন্য পাঠানো হয়েছিল, সে কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে ইসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই স্যাটেলাইটগুলো যে এতদিন মহাকাশে কাজ চালিয়ে যাবে, তা তারা কল্পনাও করেনি। কারণ মাত্র ২ বছর গবেষণার উদ্দেশ্যে এগুলো পাঠানো হয়েছিল। আর সেগুলো টিকে রইল টানা ২৪ বছর। তা ছাড়া পৃথিবীতে ফেরানোরও কোনো চিন্তা তখন ছিল না। এখন অবশ্য তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্যাটেলাইটগুলো ফেরানো হবে পৃথিবীতে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ওপরে থাকা অবস্থায় এ স্যাটেলাইটে আগুন লেগে যাবে। এরপর পৃথিবীতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আর সামান্যই অবশিষ্ট থাকবে। ৫৫০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইটের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে, তা অবশ্য এখনই বলা যায় না।
তবে চারটি স্যাটেলাইট একসঙ্গে পাঠানো হলেও এগুলো পৃথিবীতে ফিরবে আলাদা আলাদা সময়ে। সবার প্রথমে ফেরানো হবে সালসাকে। যদিও পূর্ণাঙ্গ স্যাটেলাইট আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কারণ, পৃথিবীতে ফেরার পথে বাতাসের ঘর্ষণের জন্য আগুন লেগে যাবে স্যাটেলাইটে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ওপরে থাকা অবস্থায় এ স্যাটেলাইটে আগুন লেগে যাবে। এরপর পৃথিবীতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আর সামান্যই অবশিষ্ট থাকবে। ৫৫০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইটের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে, তা অবশ্য এখনই বলা যায় না। এ ছাড়া এমন ভরের একটা স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠে পড়লে প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটাও দেখার বিষয়।
বিজ্ঞানীরা ঠিক করেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের কোথাও এই স্যাটেলাইট ভূপাতিত করা হবে। অবশ্যই ওই স্থানের আশপাশে কোনো জনবসতি থাকবে না। অর্থাৎ মানুষের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করেই এই স্যাটেলাইট ভূপাতিত করানো হবে।
ক্লাস্টার অপারেশনের ম্যানেজার ব্রুনো সৌসা বলেছেন, ‘জানুয়ারিতে আমরা সালসার কক্ষপথ পরিবর্তন করেছি, যাতে ৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে।’
ভবিষ্যতে যদি কোনো গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তাহলে কেমন ক্ষতি হতে পারে, তা বোঝা যাবে। যদিও পৃথিবীতে এমন উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
সালসাকে সরাসরি ভূপাতিত করার আরও একটা কারণ আছে। এখন পর্যন্ত কোনো মহাকাশীয় বস্তুকে ৮০-১১০ কিলোমিটার ওপর থেকে আছড়ে ফেলা হয়নি। এটা ভূপৃষ্ঠে পড়লে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তাও বোঝা যাবে। ফলে ভবিষ্যতে যদি কোনো গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তাহলে কেমন ক্ষতি হতে পারে, তা বোঝা যাবে। যদিও পৃথিবীতে এমন উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ, তেমন কোনো বস্তু দেখলে বিজ্ঞানীরা আগেই সে বস্তুর কক্ষপথ বদলে দিতে পারবেন।
সালসার পরে ২০২৫ সালের নভেম্বরে একই প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হবে রুম্বা স্যাটেলাইট। আর সাম্বা ও ট্যাঙ্গো ধ্বংস করা হবে ২০২৬ সালের নভেম্বরে।
২০২৫ সালের শেষ দিকে ইসা ও চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সিএনএসএ যৌথভাবে আবার একটি মিশন পরিচালনা করবে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণের জন্য। সে মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে দ্য সোলার উইন্ড ম্যাগনেটোস্ফেয়ার লনোস্পেয়ার লিংক এক্সপ্লোরার, সংক্ষেপে স্মাইল।