শুক্র: যে গ্রহে বছরের চেয়ে দিন বড়

সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ শুক্র। সূর্য ও চাঁদের পরে আকাশে যে বস্তুটি স্পষ্ট দেখা যায়, সেটাই শুক্র গ্রহ। রোমানরা একে প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাসের নামে নামকরণ করে। কোনো দেবীর নামে নামকরণ করা একমাত্র গ্রহও এটি। ব্যাবিলনীয়রা ৭ম শতাব্দীতে প্রথম শুক্র গ্রহের কথা লিপিবদ্ধ করেন। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি তাঁর নিজের তৈরি টেলিস্কোপের সাহায্যে শুক্র গ্রহের দশা পর্যবেক্ষণ করেন।

গ্রহটি যেহেতু সূর্যের অনেক কাছে, তাই তাপমাত্রাও অনেক বেশি। প্রায় ৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় শীশাও গলে যায়। গ্রহটির গঠন অনেকটা পৃথিবীর মতো, অর্থাৎ পাথুরে গ্রহ। এর কেন্দ্রে রয়েছে লোহা এবং খনিজ পদার্থ। তবে গঠন এক হলেও বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে আলাদা। এর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৯৬ ভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড, ৩.৫ ভাগ নাইট্রোজেন এবং বাকি ০.৫ ভাগ কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, আর্গন ও হিলিয়াম। এর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৯০ গুণ বেশি ঘন।

গ্রহটি পাথুরে হলেও মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। কারণ এ গ্রহের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত বিষাক্ত। পৃষ্ঠটান এতটাই শক্তিশালী যে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য এই চাপই যথেষ্ট। অত্যাধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকায় পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বেশি। এর বায়ুমণ্ডল অনেকটা গ্রিনহাউস ইফেক্টের মতো কাজ করে। তাই ধীরে ধীরে বাড়ছে শুক্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা!

আরও পড়ুন
সৌরজগতের বেশির ভাগ গ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘোরে। শুধু শুক্র ও ইউরেনাস ব্যতিক্রম। শুক্র নিজের অক্ষের ওপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘোরে।

শুক্র গ্রহের জন্ম হয়েছে আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের সঙ্গে। এর কোনো উপগ্রহ নেই। উপগ্রহ না থাকার ব্যাপারে দুটি মতবাদ রয়েছে। এক. বুধ সূর্যের অনেক কাছে থাকায় এর কোনো উপগ্রহ নেই। দুই. এক সময় শুক্রের উপগ্রহ ছিল। পরে বড় কোনো মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় গ্রহটির। আর এতেই উপগ্রহটি শুক্রের সঙ্গে মিশে গেছে।

যাই হোক, শুক্রের ঘূর্ণন অত্যন্ত ধীর। পৃথিবীর ২৪৩ দিন সমান শুক্রের একদিন। আর এক বছর হয় পৃথিবীর ২২৫ দিনে। শুনতে অদ্ভুত হলেও শুক্রের বছরের দৈর্ঘ্য থেকে দিনের দৈর্ঘ্য বড়। এই অদ্ভুত ঘটনার কারণ শুক্র গ্রহের অস্বাভাবিক ঘূর্ণন।

সৌরজগতের বেশির ভাগ গ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘোরে। শুধু শুক্র ও ইউরেনাস ব্যতিক্রম। শুক্র নিজের অক্ষের ওপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘোরে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোনো বড় গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে শুক্র গ্রহের অক্ষ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল। ফলে ঘূর্ণনের দিকও গেছে উল্টো। অবশ্য জোড় দিয়ে বলার মতো কোনো ব্যাখ্যা এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।

সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব নির্দিষ্ট নয়। তবে গড় দূরত্ব ১০ কোটি ৮৯ লাখ কিলোমিটার। শুক্রের ব্যাস ১২ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। শুক্র থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার। গ্রহটির ভর ৪.৮৭ × ১০২৪ কিলোগ্রাম, যা পৃথিবীর চেয়ে ১৮ ভাগ কম।

শুক্র গ্রহ সম্পর্কে জানতে এখন পর্যন্ত ৫০টি মিশন পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে সফল হয়েছে ৩১টি।

শুক্র গ্রহের সর্বোচ্চ পর্বত ম্যাক্সওয়েল পর্বত। এর উচ্চতা ১১ কিলোমিটার। এছাড়াও রয়েছে অ্যাফ্রোদিতি টেরা। যা পৃথিবীর তিব্বত মালভূমির চেয়েও বড়। গিরিখাতের মধ্যে রয়েছে গিসাভি গিরিখাত ও হাতোর গিরিখাত। আরও রয়েছে ৭৫ কিলোমিটার  ব্যাসের বিশাল আগ্নেয়গিরি সাপা ভেনেরিস।

শুক্র গ্রহ সম্পর্কে জানতে এখন পর্যন্ত ৫০টি মিশন পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে সফল হয়েছে ৩১টি। ভবিষ্যতে এ গ্রহে আরও মিশন পরিচালনার পরিকল্পনা করছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা

সূত্র: নাসা, স্পেস ডট কম, উইকিপিডিয়া