মহাকাশ
চাঁদ কেন ফালি, কাস্তের মতো
ছোটদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা কঠিন। সহজ কথা যে যায় না বলা সহজে! অথচ একদম সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখা এই বই। টেলিস্কোপ কী বলে নামের এ বই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাদুগা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। পাভেল ক্লুশান্ৎসেভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। এ বইয়ে প্রচুর ছবি আছে। সেগুলো এঁকেছেন ইয়ে. ভোইশ্ভিল্লো, ব. কালাউশিন, ব.স্তারোদুব্ৎসেভ এবং ইউ. কিসিলিওভ। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে…
সব জ্যোতিষ্কই বিশাল বিশাল গোলক। এ কারণে সূর্যকে সব সময় গোল দেখায়।
অথচ চাঁদ কেন যেন কেবল কখন-সখন গোল, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই ফালি।
চাঁদের বাকি অংশ তাহলে যায় কোথায়? কে তাকে গ্রাস করে?
একবার তাকিয়ে দেখ রাস্তার বাতির ঝাপসা গোল আলোটার দিকে। যেদিক থেকেই দেখ না কেন, একই রকম গোল। তার কারণ ওটা একটা বাতি, সূর্যের মতো নিজে আলো দেয়।
কিন্তু দেখ, রেলিংয়ের মাথার ওপরের ওই গোল পাথরটা নিজে কোনো আলো দেয় না। বাতির আলোয় সেটা আলোকিত, আর আলোকিত কেবল তার একটা দিক।
এবারে এই গোল পাথরটাকে ঘর থেকে, একটা আলোকিত পর্দার ভেতর থেকে দেখ। গোলকটার অন্ধকার দিক এখন একেবারে দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে কেবল আলোকিত অর্ধাংশ। তবে গোলকের ফালিটা কমলালেবুর কোয়ার মতন।
চাঁদের ক্ষেত্রেও তাই। চাঁদও কিন্তু একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন গোল পাথর। সূর্য হলো বাতি। এই বাতি চাঁদের একটা দিক আলোকিত করে। আর নীল আকাশের ভেতর দিয়ে দেখা যায় কেবল চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল সূর্য আর সূর্যালোকে উজ্জল আলোকিত চন্দ্রকলা। অন্ধকারাচ্ছন্ন অর্ধাংশ চোখে পড়ে না। ঘোলাটে বায়ু তাকে দেখার পথে বাধা সৃষ্টি করে। সেই বায়ুমণ্ডল ভেদ করে তারাও দেখা যায় না, যদিও দিনের বেলায় সব তারাই তাদের যার যার জায়গায় থাকে। দিনের বেলায় কেউ তো আর তাদের নিভিয়ে দেয় না!
রাতের বেলায় বায়ু থাকে ছায়ায়। তখন সূর্য তাকে আলোকিত করে না। রাতে তা হয় স্বচ্ছ, বাতি নিভিয়ে দিলে যেমন হয় পর্দার অবস্থা। তখন তার ভেতর দিয়ে সব দেখা যায়। বায়ুর ভেতর দিয়ে তারাদের দীপ্তি প্রকাশ পেতে থাকে।
অনেক সময় রাতে বায়ু বিশেষভাবে নির্মল ও স্বচ্ছ হয়—বিন্দুমাত্র ধুলো বা মেঘ তাতে থাকে না। তখন অতি দুর্বল, অতি খুদে খুদে তারাদেরও দেখা যায়। ও রকম রাতে চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশও চোখে পড়ে।
আচ্ছা, চাঁদ কেন নানা আকারে দেখা যায়? কখনও গোটা, কখনও একটা মোটা ফালি, কখনও-বা কাস্তের মতো একটা সরু ফালি? তার কারণ এই যে চাঁদ আমাদের চারদিকে ঘোরে—এই যেমন ছবিতে দেখছ—দড়ি বাঁধা কুকুরছানার মতো।
ছবিতে দেখছ তো, কুকুরছানার মুখের ওপর অনেক সময় বেশ আলো পড়েছে, অনেক সময় আলো পড়েছে তার অর্ধেক মুখের ওপর। তারপর কুকুরছানা যখন ছুটতে ছুটতে বাতির ওপাশে চলে গিয়ে আলোর উল্টো দিকে দাঁড়ায়, তখন তার গোটা মুখটাই অন্ধকার দেখায়। মুখ একেবারে নিরীক্ষণ করা যায় না! কেবল চকচক করে মুখের চারপাশের হালকা উজ্জল রেখা— চাঁদের সরু ‘কাস্তের’ মতন।
(চলবে...)