১৯৬৪ সাল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (আধুনিক রাশিয়া) দুবনায় অবস্থিত নিউক্লিয়ার গবেষণাকেন্দ্রের ঘটনা। কৃত্রিমভাবে নতুন মৌল তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সেখানকার গবেষকরা। সে জন্য প্লুটোনিয়াম-২৪২ মৌল লক্ষ্য করে নিয়ন-২২ আয়ন ছুড়লেন তাঁরা। ফলে পাওয়া গেল একেবারে নতুন একটা তেজস্ক্রিয় মৌল। পরবর্তীতে পরীক্ষাটি আরও অনেকবার করা হয়। প্রতিবার পাওয়া যায় একই ফল। মানে একই মৌল পাওয়া গেল, যার পারমাণবিক সংখ্যা ১০৩। আর পারমাণবিক ভর ২৬৬।
তখন রুশ-মার্কিন ঠান্ডা যুদ্ধের কাল। দুপক্ষই নতুন নতুন মারণাস্ত্র তৈরি করতে নানা গবেষণা চালাচ্ছিল গোপনে। নতুন মৌল তৈরির পেছনেও ছিল আসলে আরও উন্নত, আরও বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা। তাই মার্কিন বিজ্ঞানীরাও নতুন কৃত্রিম মৌল আবিষ্কারের গবেষণায় পিছিয়ে ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও চলছিল প্রায় একই ধরনের গবেষণা। রুশ সফলতার চার বছর পর ক্যালিফোর্নিয়াম-২৪৯ মৌল লক্ষ্য করে কার্বন-১২ আয়ন ছুড়ে সফলতা পেলেন মার্কিন গবেষকরা। সেখানেও একটা তেজস্ক্রিয় মৌল শনাক্ত হল। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেল রুশ আর মার্কিন গবেষকদের আবিষ্কৃত দুটো মৌলই আসলে একই।
নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত পদার্থবিদ ও নিউক্লিয়ার ফিজিকসের জনক আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের সম্মানে এ নাম প্রস্তাব করেন তাঁরা। অবশ্য এর আগে ১০৩তম মৌলের জন্য রাদারফোর্ডিয়াম রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল রুশ বিজ্ঞানীরা।
রুশ বিজ্ঞানীরা মৌলটির নাম প্রস্তাব করেছিলেন কুর্চাতোভিয়াম। রুশ নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ ইগর কুর্চাতোভের নামে মৌলটির পরিচিত হোক, এটাই তাঁদের ইচ্ছা। কারণ এই বিজ্ঞানী সোভিয়েত পরমাণু বোমার জনক। আবার একসময় তিনি ছিলেন রুশ পারমাণবিক গবেষণার প্রধান। রাশিয়ার পত্রপত্রিকা ও বইপুস্তকে এই কুর্চাতোভিয়াম নামটিই ব্যবহার হতে থাকে।
কিন্তু এ প্রস্তাবে বেঁকে বসলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের প্রস্তাব, নতুন মৌলটির নাম হবে রাদারফোর্ডিয়াম। নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত পদার্থবিদ ও নিউক্লিয়ার ফিজিকসের জনক আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের সম্মানে এ নাম প্রস্তাব করেন তাঁরা। অবশ্য এর আগে ১০৩তম মৌলের জন্য রাদারফোর্ডিয়াম রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল রুশ বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেবারও তাঁদের প্রস্তাব নাচক করে তার নাম রাখা হয়েছিল লরেন্সিয়াম।
রাদারফোর্ডিয়ামের প্রতীক Rf এবং পারমাণবিক সংখ্যা ১০৪। এ মৌলের প্রায় ১৬টি আইসোটোপের খোঁজ পাওয়া গেছে। Rf-২৬৭, যার অর্ধায়ু প্রায় ৪৮ মিনিট।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দলই নিজেদের মতো করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রির (আইইউপিএসি) কাছে নামের প্রস্তাব পাঠাল। দুই দলকেই মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিল আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান। তবে নামের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেল মার্কিন প্রস্তাব। তবে একই সঙ্গে তারা এটাও জানিয়ে দিল, পরবর্তী আবিষ্কৃত মৌলটির নাম রাখা হবে দুবনিয়াম। মানে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিউক্লিয়ার গবেষণাগার যে জায়গায় অবস্থিত, সেই দুবনা শহরের নামে। কাজেই পর্যায় সারণির ১০৪ নম্বর মৌলটির নাম হলো রাদারফোর্ডিয়াম আর ১০৫ নম্বর মৌলটির নাম দুবনিয়াম।
রাদারফোর্ডিয়ামের প্রতীক Rf এবং পারমাণবিক সংখ্যা ১০৪। এ মৌলের প্রায় ১৬টি আইসোটোপের খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে সবগুলোই অস্থিতিশীল এবং অতিঅল্প সময়ে ক্ষয় হয়ে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল আইসোটপ Rf-২৬৭, যার অর্ধায়ু প্রায় ৪৮ মিনিট। অন্যগুলোর স্থায়ীত্ব খুবই কম। এ মৌলের ধর্ম অনেকটা হাফনিয়ামের (৭২তম মৌল) মতো। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া এই তেজস্ক্রিয় মৌলের কোনো ব্যবহারিক দিক জানা যায়নি।