নিহোনিয়াম: এশিয়ায় আবিষ্কৃত একমাত্র অতিভারী মৌল

ছবি: শাটারস্টোক

পর্যায় সারণির ১১৩তম মৌলের নাম নিহোনিয়াম। এর প্রতীক Nh, পারমাণবিক সংখ্যা ১১৩। এদের শুধু গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়, প্রকৃতিতে এখনও এর দেখা মেলেনি।

মৌলটি সম্পর্কে প্রথম শোনা গিয়েছিল ২০০৩ সালে। সেবার রুশ-মার্কিন বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে রাশিয়ার দুবনায় জয়েন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে মৌলটি তৈরি করার দাবি করেন। ১১৫তম মৌলের আলফা ক্ষয় হয়ে ১১৩তম মৌল তৈরি হয়েছে বলে জানান এই বিজ্ঞানীরা। পরের বছর মৌলটি তৈরির দাবি জানায় জাপানের ওয়াকোর আরেক দল বিজ্ঞানী। জাপানি বিজ্ঞানী কোসুকি মোরিটার নেতৃত্বে এই বিজ্ঞানীরা পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটরে বিসমাথ-২০৯ এবং জিংক-৭০-এর মধ্যে দ্রুত গতিতে সংঘর্ষ ঘটিয়ে ১১৩তম মৌলটি তৈরি করেন। কিন্তু দুই দলের মধ্যে জাপানি দলকেই মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তাই তাঁদের প্রস্তাবিত নামেই নাম রাখা হয়েছে মৌলটির।

এ পর্যন্ত নিহোনিয়ামের ৮টি আইসোটপের কথা জানা গেছে। এর বেশির ভাগ আইসোটোপই অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় ও অস্থিতিশীল। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী আইসোটোপ হলো নিহোনিয়াম-২৮৬।
আরও পড়ুন

অনেক আগে থেকে ভবিষ্যতে আবিষ্কারযোগ্য কিছু মৌলের আন্তর্জাতিকভাবে সাময়িক নাম রাখা হয়েছিল। ১১৩তম মৌলের নাম রাখা হয়েছিল উনানট্রিয়াম বা এলিমেন্ট ১১৩। তবে মৌলটি আবিষ্কারের পর জাপানি বিজ্ঞানী দল এর নতুন নামকরণের সুযোগ পায়। এরপর বেশ কয়েকটি নামের প্রস্তাব ওঠে দেশটিতে। এর মধ্যে রয়েছে নিশিনিয়াম (জাপানি আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা পদার্থবিদ ইওশিও নিশিনার নামে), রিকেনিয়াম (জাপানের যে প্রতিষ্ঠানে মৌলটি আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার নামে), জাপোনিয়াম (মৌলটি যে জাপানে আবিষ্কৃত হয়েছে, সে জন্য নামটি প্রস্তাব করেন বিজ্ঞানী মোরিটা)। তবে এসব নাম শেষপর্যন্ত ধোপে টেকেনি। তার বদলে এর নাম রাখা হয় নিহোনিয়াম। জাপানি ভাষায় জাপানের নাম নিহন। অনেকে শব্দটি উচ্চারণ করেন নিপ্পন। দুটোর অর্থই ‘সূর্যোদয়ের দেশ’। সেখান থেকেই এর নাম হয়েছে নিহোনিয়াম। পর্যায় সারণির সুপারহেভি বা অতিভারী মৌলগুলোর মধ্যে এটিই একমাত্র মৌল, যা আবিষ্কৃত হয়েছে এশিয়া মহাদেশে।

এ পর্যন্ত নিহোনিয়ামের ৮টি আইসোটপের কথা জানা গেছে। এর বেশির ভাগ আইসোটোপই অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় ও অস্থিতিশীল। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী আইসোটোপ হলো নিহোনিয়াম-২৮৬। এর অর্ধায়ু মাত্র ১০ সেকেন্ড। স্বল্পায়ুর কারণে নিহোনিয়াম সম্পর্কে এখনও খুব বেশি জানা যায়নি। গবেষকদের মতে, এর ধর্ম অনেকটা বোরন, অ্যালুমিনিয়াম, গ্যালিয়াম, ইন্ডিয়াম এবং থ্যালিয়ামের মতো। নিহোনিয়াম খুব উদ্বায়ী। গবেষণার বাইরে এর আর কোনো ব্যবহারের কথা এখনও জানা যায়নি।