নীলস বোরের নামে মৌলের নাম বোরিয়াম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। চলুন, আজ জেনে নিই বোরিয়াম মৌলের নামটি কীভাবে এল...

পর্যায় সারণির ১০৭তম মৌলের নাম বোরিয়াম। মৌলটি তৈরি করার প্রথম দাবি জানান সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা, সেই ১৯৭৬ সালে। পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর বা কণাত্বরক যন্ত্রে বিসমাথ-২০৯ ও সীসা-২০৮ লক্ষ্য করে যথাক্রমে ক্রোমিয়াম-৫৪ ও ম্যাঙ্গানিজ-৫৫ ছুড়ে নতুন মৌলটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। সেগুলোর স্থিতিকাল ছিল খুব ক্ষণস্থায়ী। একটির অর্ধায়ু ছিল মাত্র দুই মিলিসেকেন্ড, অন্যটির মাত্র ৫ সেকেন্ড। তবে পরে প্রমাণ মিলল, সেগুলো আসলে পর্যায় সারণির ১০৭তম মৌল নয়।

১৯৮১ সালের দিকে জার্মানির একদল বিজ্ঞানী বিসমাথ-২০৯ নিউক্লিয়াসে ক্রোমিয়াম-৫৪ ছুড়ে আরেকটি মৌল আবিষ্কারের দাবি জানান। পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেল সেটি নতুন মৌল। এর অবস্থান পর্যায় সারণির ১০৭তম ঘরে।

বিখ্যাত ড্যানিশ পদার্থবিদ নীলস বোর
উইকিমিডিয়া কমন্স

ডেনমার্কের বিখ্যাত পদার্থবিদ নীলস বোরের নামে এ মৌলের নাম প্রস্তাব করা হয় নীলসবোরিয়াম। পরমাণুর কাঠামো এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এর স্বীকৃতি হিসেবে ১৯২২ সালে পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার। যা-ই হোক, এর আগে ১০৫তম মৌলের নামও নীলসবোরিয়াম প্রস্তাব করেছিল রাশিয়া তথা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে সে নাম তখন নাকচ করা হয়েছিল। এবার ১০৭তম মৌলের নামের জন্য জার্মান বিজ্ঞানী দলের প্রস্তাব সমর্থন করলেন রুশ বিজ্ঞানীরাও। তবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি (আইইউপিএসি) নীলসবোরিয়ামের বদলে বোরিয়াম নামটি স্বীকৃতি দেয়। তাদের মতে, এর আগে কোনো মৌলের নামকরণে কোনো বিজ্ঞানীর পুরো নাম ব্যবহৃত হয়নি, বরং নামের একটি অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। এই যুক্তিতে বোরিয়াম নামটিই বহাল থাকে।

বোরিয়াম মৌল পরিচিতি

এই সিন্থেটিক মৌলটি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, শুধু পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটরেই তৈরি করা যায়। সংকেত Bh। বোরিয়ামের সবগুলো আইসোটপই অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় ও অস্থিতিশীল। এখন পর্যন্ত ১২টি আইসোটপের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল আইসোটপ বোরিয়াম-২৭০। এর অর্ধায়ু মাত্র ২.৪ মিনিট।