রেডিয়েশন শব্দটি যেভাবে এল

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। চলুন, আজ জেনে নিই রেডিয়েশন শব্দটি কীভাবে এল...

রেডিয়েশন শব্দের উৎসমূল লাতিন 'রেডিয়াস'। এর অর্থ চাকার স্পোক বা আলোর রশ্মি বিকিরণরেখা। আবার বৃত্তের ব্যাসার্ধের জন্যও শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। পনেরো শতকের মাঝামাঝিতে লাতিন রেডিয়েশনেম (Radiationem) শব্দ থেকে ফরাসি ভাষায় রেডিয়েশন শব্দটির আগমন। বিচ্ছুরিত রশ্মি বা আলো বা তেজ বা বিকিরণ বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৮৯৫ সালে উইলহেম রন্টজেন আবিষ্কার করেন এক্স-রে। তারপরের বছর হেনরি বেকেরেল দেখতে পেলেন, বিশেষ কিছু খনিজ পদার্থ থেকে বেরিয়ে আসা অদৃশ্য রশ্মি কালো কাগজ ভেদ করে চলে যেতে পারে

পণ্ডিতদের মতে, ইংরেজিতে রেডিয়েশন শব্দের আগমন লাতিন radiatio (যার অর্থ রশ্মি বিচ্ছুরণ করা) থেকে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রথম বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বিকিরণ আবিষ্কৃত হয়। ১৮০০ সালের দিকে জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মির বিকিরণ আবিষ্কার করেন। তারপরের বছরই আবিষ্কৃত হয় অতিবেগুনি রশ্মি। ১৮৯৫ সালে উইলহেম রন্টজেন আবিষ্কার করেন এক্স-রে। তারপরের বছর হেনরি বেকেরেল দেখতে পেলেন, বিশেষ কিছু খনিজ পদার্থ থেকে বেরিয়ে আসা অদৃশ্য রশ্মি কালো কাগজ ভেদ করে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিকিরণ নির্গত হতে দেখেন তিনি। তাঁর নামানুসারে পরে এই বিকিরণের নাম দেওয়া হয় বেকেরেল রশ্মি।

এআইয়ের চোখে বিজ্ঞানী পিয়ের কুরি ও মেরি কুরি গবেষণাগারে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছেন

বিজ্ঞানী পিয়ের কুরি ও মেরি কুরি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখেন, শুধু কিছু নির্দিষ্ট পদার্থই এ রকম শক্তি বিকিরণ করতে পারে। সক্রিয় রশ্মির এই ঘটনাকে বোঝাতে তাঁরা ফরাসি রেডিও-অ্যাকটিফ (radio-actif) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এখান থেকে পরবর্তী সময়ে ইংরেজিতে Radioactive শব্দটির উত্পত্তি। এসব পদার্থের শক্তি বিকিরণের ধর্ম বোঝাতে তাঁরা প্রথম রেডিওঅ্যাক্টিভিটি (Radioactivity) শব্দটি ব্যবহার করেন। বাংলায় যার অনুবাদ করা হয়েছে তেজস্ক্রিয়তা। তেজস (অর্থ তেজ বা বিকিরণ) ও ক্রিয়া (কাজ)—শব্দ দুটি একত্র হয়ে তেজস্ক্রিয় শব্দটি গঠিত হয়েছে। তবে পরমাণুর গঠন সঠিকভাবে আবিষ্কারের আগে তেজস্ক্রিয়তার কারণ বোঝা যায়নি।

আরও পড়ুন

আর্নেস্ট রাদারফোর্ডসহ আরও কয়েকজন বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা গেল, তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে আলফা রশ্মি (আলফা কণা), বিটা রশ্মি (বিটা কণা) ও গামা রশ্মি বিকিরত হয়। আরও পরে প্রমাণিত হয় আলফা রশ্মি, আসলে পরমাণুর প্রোটন কণা, বিটা রশ্মি হলো দ্রুতগামী ইলেকট্রন কণা। আরও পরে বোঝা গেল, পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বিভাজনের ফলে পরমাণুকেন্দ্র থেকে এই রশ্মিগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে।